‘জনগণ তোমাকে মেরামত করতে অধীর আগ্রহে বসে আছে’

বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের কঠোর সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ সংসদ সদস্য ও দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়া লন্ডনে বসে বলতেছে বাংলাদেশ মেরামত করতে চায়। আরে আগে তো তোর (তারেক) মেরামত করা দরকার। তুমি পারলে বাংলাদেশে আসো। তুমি যদি বাংলাদেশে আসো, তাহলে জনগণ তোমাকে কীভাবে মেরামত করবে… অধীর আগ্রহে তোমার জন্য বসে আছে। কিন্তু আসবে না, ও কোনোদিন বাংলাদেশে আসবে না।’

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন শেখ সেলিম।

তারেক রহমান ২০০৭ সালে রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে বিদেশে গিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,  ‘একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তার ৩০ বছর সাজা হয়েছে। মানি লন্ডারিং মামলায় সাত বছর সাজা হয়েছে। তারেক জিয়া কখনোই ঢাকায় আসবে না। ঢাকায় এলে তাকে জেলে যেতে হবে। জেলে গেলে রাজনীতি তো দূরের কথা, কখনো নির্বাচনই করতে পারবে না।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় নির্বাচন করতে পারবেন না বলে উল্লেখ করেন শেখ সেলিম। খালেদা জিয়ার ভাই ও বোন প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে অনুরোধ করেছিল—খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে বাসায় আনার জন্য বলে জানান তিনি। শেখ সেলিম বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে সরাসরি বাসায় আনা যায় না। যদি বাসায় বসে আবার রাজনীতি করে, সেই জন্য তাদের বললো— (প্রধানমন্ত্রী) বাসায় এসে আবারও রাজনীতি করে পারে। সেটা তো দেওয়া যাবে না। তখন তারা মুচলেকা দিয়ে বলেছে— খালেদা জিয়া রাজনীতি করবে না। সাজাপ্রাপ্ত আসামি রাজনীতি করবে না। মুচলেকা দিয়েছে, আর সে ১০ তারিখে (১০ ডিসেম্বর) এসে ক্ষমতা দখল করবে। শেখ হাসিনার পতন ঘটাবে। এসব হলো জনগণকে বিভ্রান্ত ও তাদের লোকদের কিছু খোরাক দেওয়ার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘কিছু দিন ধরে দেখা যাচ্ছে আমাদের রাজনীতির ব্যাপারে কিছু কূটনীতিক তোড়জোর করছে। কারও কারও বাড়িতেও গিয়ে হাজির হচ্ছে। একি আশ্চার্য! কী বিচিত্র এই দেশ। আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ করার কোনও অধিকার নাই। আমাদের রাজনীতি নির্ধারণ করবে জনগণ। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছি। আমাদের কোনও প্রভু নেই। আমাদের প্রভু হলো এই দেশের জনগণ। কারও প্রেসক্রিপশনে এই বাংলাদেশ চলবে না।’

শেখ সেলিম বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি নিয়ে কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ করা এবং দায়িত্বহীন কথা… আমরা কী তাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে কোনও কথা বলি? আমরা তাদের নির্বাচন নিয়ে কথা বলি? আমেরিকার নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। আমরা কি সেখানে গিয়ে বলেছি—আসো আমরা সালিশি করি। কিছু দিন আগে মালয়েশিয়ার নির্বাচন নিয়ে একই অভিযোগ উঠেছিল। ওখানে কি আমরা হস্তক্ষেপ করেছি? আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে কোনও বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই।’

বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে সেটা দেখার জন্য দেশের জনগণই যথেষ্ট বলে জানান শেখ সেলিম। তিনি বলেন, ‘যে দেশের জনগণ বঙ্গবন্ধুর ডাকে রক্ত দিতে পারে, সেই দেশের জনগণ বাইরের মাতব্বরি মেনে নেবে না।’

সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কে এলো, কে এলো না, ওই সত্তর সালের নির্বাচনেও মাওলানা ভাসানীর ন্যাপ হঠাৎ করে নির্বাচন থেকে উঠে চলে গেলেন। আজকে তার পার্টির অবস্থান কোথায়? তোমরা যদি একটার পর একটা নির্বাচন না করো, তোমাদেরও করুণ পরিণতি হবে। মুসলিম লীগ ও ভাসানী ন্যাপের মতো হবে। বাংলাদেশে কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির সঙ্গে বিপক্ষের শক্তি কখনোই বিজয়ী হতে পারে না।’