কলকাতায় পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গজুড়ে পালিত হচ্ছে মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের পক্ষ থেকে একগুচ্ছ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

সকালে উপ-হাইকমিশন প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ করা হয়। এরপর কলকাতার ৩, সোহরাওয়ার্দী এভিনিউতে অবস্থিত বাংলাদেশ গ্রন্থাগার ও তথ্য কেন্দ্রর সামনে থেকে প্রভাতফেরি বের হয়। হাতে বর্ণিল পোস্টার, ফুলের মালাসহ প্রভাতফেরিতে হাইকমিশনের কর্মকর্তারা ছাড়াও অসংখ্য মানুষ অংশ নেয়।

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ এই ধ্বনিকে সামনে রেখে সেই প্রভাতফেরি কলকাতার পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট ক্রসিং, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড ধরে পৌঁছায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সরণীর উপহাইকমিশন প্রাঙ্গণে। 

এরপর মিশন প্রাঙ্গণে অবস্থিত শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক দিয়ে অমর ভাষা শহীদ সালাম-বরকত-রফিক-জব্বরদের স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানান উপহাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, প্রথম সচিব (প্রেস) রঞ্জন সেন, প্রথম সচিব (বাণিজ্য) শামসুল আরীফসহ অন্য কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে মিশন প্রাঙ্গণে ‘মুজিব মঞ্চে’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতেও মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দূতাবাসের কর্মকর্তারা

উপহাইকমিশনর কর্মকর্তাদের পাশপাশি আলাদাভাবে বেদিতে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয় ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাব, কলকাতা প্রেসক্লাব, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতি, বাংলাদেশ বিমান, সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে। 

 

 

এদিন আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস নিয়ে বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রেরিত বাণী পাঠ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় মিশন প্রাঙ্গণে।  

বিকালে মিশন প্রাঙ্গণে একটি সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। যেখানে উপস্থিত থাকবেন কলকাতাস্থ বিদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তারা। 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক বিবৃতিতে জানান, ‘মাতৃভাষা আমাদের আত্মার শরিক, প্রাণের স্পন্দন। নিজের ভাষার গৌরব ও অধিকার রক্ষার্থে যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম। মাতৃভাষাকে ভালোবেসে সব ভাষাকেই জানাই সম্মান।’ 

পশ্চিমবঙ্গের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমির সভাঘরে ২১-২৩ ফেব্রুয়ারি ৩ দিন ব্যাপী ভাষা উৎসব উদযাপন হচ্ছে। প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে থাকছে কবিতা পাঠ ও আলোচনামূলক অনুষ্ঠান। 

এদিন দুপুর সাড়ে বারোটায় কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে। এতে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী, সচিব, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। 

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস উপলক্ষে সোমবার থেকে রাতব্যাপী অনুষ্ঠান করেছে ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’ নামে একটি সংগঠন। সোমবার বিকাল থেকেই কলকাতার রবীন্দ্রসদন লাগোয়া একাডেমি অফ ফাইন আর্টস এর সামনে রাণুছায়া মঞ্চে শুরু হওয়া রাতব্যাপী বাংলা ভাষা উৎসবে নাটক, বাউল, লোক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহারের পাশাপাশি বাংলাদেশের শিল্পীরাও যোগদান করেন। মঙ্গলবার সকালে প্রভাতফেরির মধ্য দিয়ে সেই অনুষ্ঠানের শেষ হয়। 

বনগাঁ পৌরসভা ও ছয়ঘড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এর যৌথ উদ্যোগে পেট্রাপোল বন্দর সংলগ্ন এলাকায় ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে তাদের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করবেন দু’দেশের প্রতিনিধি ও ভাষা প্রেমীরা৷

শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণেও ভারত বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীর সমবেত কন্ঠে গান গেয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি প্রভাতফেরি সম্পন করে। প্রভাতফেরিতে পা মেলান বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীসহ বিশ্বভারতীর অন্য সদস্যরা।

বিশেষ এই দিনটিকে মাথায় রেখে পশ্চিমবঙ্গের জেলা ও মহুকুমাগুলোতে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হচ্ছে ‘অমর একুশে’। এ ছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লাব, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার তরফে বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে বিশেষ এ দিনটি পালন করা হচ্ছে।