জঙ্গি সাজার নাটক, নিজেই হলেন আটক

৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে ‘জঙ্গির আত্মসমর্পণ’, পরে অন্য রহস্য উদঘাটন

৯৯৯ নম্বরে কল করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করা হয়, এমন অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা ঘটেছে। ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়েছে ২৬ বছর বয়সী এক তরুণ। নিজের সমস্যা ঢাকতেই জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরটিতে কল করে জঙ্গি পরিচয় দিয়ে আত্মসমর্পণের নাটক সাজায় সে। সেই তরুণকে উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরখান এলাকা থেকে ট্রিপল নাইনে একটি কল আসে। ফোনের বিপরীত পাশে থাকা তরুণ জানায়, ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর হিজরতের উদ্দেশ্যে কুমিল্লার বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা চুরি করে ‘আনসার আল ইসলাম ফিল হিন্দাল শরক্বীয়া’য় যোগ দেওয়ার জন্য ঘর ছাড়ে সে। এরপর ঢাকার বসুন্ধরা আবসিক এলাকায়, উত্তরখান ও দক্ষিণখানের বিভিন্ন মেসে অবস্থান করে।

প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য তার কক্সবাজার যাওয়ার কথা ছিল। এক পর্যায়ে সে তার ভুল বুঝতে পেরে পালিয়ে যায় এবং উত্তরখান থানা এলাকায় এক ব্যক্তির আশ্রয় পায়। সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়, কিন্তু ভয় পাচ্ছে তার দলের সদস্যদের হাতে ধরা পড়লে হত্যার শিকার হতে পারে বলে। ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’ নম্বরে ফোন দিয়ে এসব তথ্য জানিয়ে আত্মসমর্পণের ইচ্ছাও প্রকাশ করে সেই তরুণ।

পুলিশ সেই তরুণকে উদ্ধার করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। পরবর্তীতে তরুণ নিজেই জঙ্গি নাটকের বিষয়টি স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সেই তরুণ কুমিল্লায় থাকতো। অভিভাবকদের কাছ থেকে ব্যবসার কথা বলে আড়াই লাখ টাকা নেয়। পরবর্তীতে সেই টাকা ব্যবসায় খাটিয়ে লোকসান হয়। সেই টাকার বিষয়ে জানতে চাইবে অভিভাবকরা। এটা ভেবেই বাড়ি থেকে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। সে ভেবেছিল জঙ্গি আত্মসমর্পণের ঘটনা পুলিশকে জানালে টাকার বিষয়ে অভিভাবকরা জানতে পারবে না। তাকে টাকা ফেরত দিতে হবে না।

উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জঙ্গি আত্মসমর্পণের ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা টিম পাঠিয়ে সেই তরুণকে উদ্ধার করি। এর পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বুঝতে পারি সে কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নয়। অভিভাবকদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের কারণে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে বেশ কয়েক মাস। পরবর্তীতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় পরিবারের কাছে।

৯৯৯ এর জনসংযোগ কর্মকর্তা পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কলার যে-ই হোক না কেন, সব বিষয় গুরুত্ব দিয়েই আমরা সেবা দিয়ে থাকি। যে এলাকা থেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুক না কেন যত দ্রুত সম্ভব আমরা সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে সেবা দিতে কাজ করে যাচ্ছি। কেউ ফোন করলে শুরুতেই তার বিভিন্ন বিষয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করি। তবে অনেক সময় প্রচুর অযৌক্তিক কল আসে। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সেসব ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হয়।

৯৯৯ জরুরি সেবার নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে চার কোটি ৩২ লাখ ৪ হাজার ৮৩টি কল রিসিভ করা হয়েছে। এরমধ্যে অপ্রয়োজনীয় কল ছিল ২ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ১১৩টি। মোট কলের শতকরা ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশই ছিল অপ্রয়োজনীয়। এছাড়া ১ কোটি ৭৭ লাখ ৫১ হাজার ৯৭০ কল করা ব্যক্তি উপকার পেয়েছেন। যার শতকরা হার ৪১.০৯ শতাংশ।