হাওরের প্রতিটি সড়ক এলিভেটেড হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অবাধ পানি প্রবাহ ও নিরাপদ মৎস্য উৎপাদনের জন্য হাওর অঞ্চলের প্রতিটি সড়ক এলিভেটেড করা হবে।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কিশোরগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাস উদ্বোধনকালে একথা বলেন তিনি।

এসময় তিনি আরও বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যেই জমি ভরাট না করে হাওর, বিল ও জলাভূমি এলাকার প্রতিটি রাস্তা এলিভেটেড করার নির্দেশনা দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্ষা মৌসুমে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ও মাছের চলাচল যেন বাধাগ্রস্ত না হয় এবং নৌকাসহ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেন ব্যাহত না হয়- সেজন্য সকল সড়ক এলিভেটেড করা হবে।’

হাওর এলাকাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে এই সেনানিবাসটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও শক্তিশালী করা হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, হাওর এলাকার মানুষ সবসময় তাদের বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশের প্রতিকূল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করে।

তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর হতে এ এলাকা থেকে বারংবার নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের পাশে থেকে এবং তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে তিনি (আবদুল হামিদ) তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।’

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এই এলাকার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি এখানে একটি সেনানিবাস স্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘তার ইচ্ছা’ অনুযায়ী—আমরা এই সেনানিবাস স্থাপন করেছি।

তিনি বলেন, আবদুল হামিদ ডেপুটি লিডার, ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার এবং শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির মতো পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি যে পদেই ছিলেন- সেখানেই অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। এমনকি তিনি তার টানা দ্বিতীয় মেয়াদেও সফলভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই, আমরা তার নামে সেনানিবাসের নামকরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

দেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ গঠনে রাষ্ট্রপতির বড় ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (রাষ্ট্রপতি) একজন নিবেদিতপ্রাণ এবং জনগণের সেবা করার জন্য তিনি সৎ জীবনযাপন করেন। তাই আমরা তার নামে এই সেনানিবাসের নামকরণ করতে পেরে খুবই আনন্দিত।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তিতে বিশ্বাস করে, তবে এটা খুবই দুঃখজনক যে, করোনাভাইরাস মহামারি, বৈশ্বিক মন্দা এবং পরবর্তীকালে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দেশের অগ্রগতি কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, এ কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এবং পরিবহন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোও এতে ভুগছে। তবে আমাদের দেশে আমরা অর্থনীতির চাকা সচল করতে পেরেছি।

বাংলাদেশে যে কোনও অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে তিনি সবাইকে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের খাদ্য উৎপাদনের জন্য সব আবাদি জমি চাষের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে আমরা অন্যদের সাহায্য করবো। কিন্তু আমাদের নিজেদের কাজ নিজেদেরই করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে যাতে মন্দার ঢেউ দেশে আঘাত করতে না পারে। আমাদের সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে, আমাদের কঠোরতা বজায় রাখতে হবে এবং আমাদের সম্পদ সংরক্ষণ করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন, রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং বরিশালে ৭ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করেছে।

তিনি বলেন, সরকার গত ৪ বছরে বিভিন্ন ফরমেশনের অধীনে ৩টি ব্রিগেড ও ৫৮টি ছোট-বড় ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা একই সময়ে অ্যাডহক হিসাবে ২৭টি ছোট-বড় ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছে এবং ৯টি সংস্থাকে পুনর্গঠিত করেছেন। গত বছর তিনি মাওয়া-জাজিরায় শেখ রাসেল সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে রাজবাড়ী ও ত্রিশালে দুটি নতুন সেনানিবাসের কাজ চলছে। সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে তারা কঠোর পরিশ্রম করছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক বাহিনী এ পর্যন্ত স্টেট-অব-দ্য-আর্ট এয়ারক্রাফট, হেলিকপ্টার, টাইগার এমএলআরএস, শোরাদ মিসাইল, চতুর্থ প্রজন্মের ট্যাংক, এপিসি, মিসাইল ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় করেছে। তাছাড়াও অত্যাধুনিক আইটি যন্ত্রপাতি এবং আধুনিক যানবাহন সংগ্রহ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী সিএমএইচ প্রসঙ্গে বলেন, এ প্রতিষ্ঠানটি আধুনিক চিকিৎসা সামগ্রী দিয়ে সাজানো হয়েছে।

তিনি বলেন, সকল পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য মেস ও এসএম ব্যারাক নির্মাণের পাশাপাশি তাদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের বেতন-ভাতা ও রেশনের ব্যবস্থাসহ আমরা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাঙ্গালির খাদ্যাভ্যাস বিবেচনা করে রুটির বদলে আমি তাদের জন্য দুই বেলা ভাত ও মাছ-মাংসের ব্যবস্থা করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে পতাকা উত্তোলন করেন ও বেলুন উড়িয়ে দেন এবং তিনি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন ও সালাম গ্রহণ করেন।

তিনি সেখানে একটি গাছের চাড়া রোপণ করেন এবং পরিদর্শকদের বইতেও সই করেন। এসময় সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রীরা, সংসদ সদস্যরা এবং সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র: বাসস