Supreme Court on Law Making: ‘আদালতও আইন প্রণয়ন করতে পারে, ধারণা বদল হয়েছে বহু আগেই’, পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের

‘সংসদীয় গণতন্ত্রে আইন তৈরি করেন আইন প্রণেতারা। সেই আইনের সাংবিধানিক বৈধতা খতিয়ে দেখাই কাজ বিচার ব্যবস্থার।’ – সাধারণ এই ধারণাই বদ্ধমূল হয়ে রয়েছে আম জনতার মাথায়। তবে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার রায়দানের সময় শীর্ষ আদালত পর্যবেক্ষণ করে, এই ‘ধারণা’ বহু আগেই বদলে গিয়েছে। উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধাকি বেঞ্চ গতকাল নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে যুগান্তকারী নির্দেশিকা জারি করেন। বিচারপতি কেএম জোসেফের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চের এই নির্দেশিকা অবশ্য কতকটা ‘আইন’-এর মতো। এই নিয়ে বিচারপতি জোসেফ নিজের রায়তে লেখেন, এর আগেও সুপ্রিম কোর্ট এমন নির্দেশিকা দিয়েছে যা আইনের মতো। কোনও ক্ষেত্রে যদি কোনও আইনের অস্তিত্ব না থাকে, সেক্ষেত্রে শীর্ষ আদালত আইন স্বরূপ নির্দেশিকা দিয়ে থাকতে পারে। (আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে জটিলতা চরমে, এবার কি ডিএ দিতে বাধ্য হবে সরকার?)

প্রসঙ্গত, বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই ‘বিচারব্যবস্থা বনাম আইনসভা’ বিতর্ক জারি রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে বেশ কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন দেশের আইনমন্ত্রী এবং উপরাষ্ট্রপতি। এই আবহে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রক্রিয়া পুরোপুরি বদল করার নির্দেশ দিয়ে ‘বিচারব্যবস্থা ও আইনসভার ক্ষমতার পৃথকীকরণ এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামো’ পর্যবেক্ষণ করে সুপ্রিম কোর্ট। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, যখন কোনও আদালত কোনও আইন বা কোনও সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে, তখন তারা ক্ষমতা পৃথকীকরণের নীতি লঙ্ঘন করে না। এই সব ক্ষেত্রে বিচারব্যবস্থার বিরুদ্ধে সাংবিধানিক সীমানা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা যায় না।

সর্বোচ্চ আদালত পর্যবেক্ষণ করে, ‘হাই কোর্ট এবং শীর্ষ আদালত তাদের ক্ষমতার অধীনেই বিধি তৈরি করে। তারা আইনসভার প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করবেন। এইসব ক্ষেত্রে ক্ষমতার প্রয়োগ আইন প্রণয়নের মতো হবে।’ শীর্ষ আদালত আরও বলে, ‘যখন ১২৩ ধারার অধীনে কার্যনির্বাহী শাখা একটি অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে, তখন কার্যনির্বাহী শাখা আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রয়োগ করে। সংসদ যখন একজন ব্যক্তিকে নিজের অবমাননার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে এবং তাকে শাস্তি দেয়, তখন বিচারব্যবস্থার ক্ষমতা প্রয়োগ করে। আদালত যে আইন প্রণয়ন করতে পারে না, এটা একটি ভুল ধারণা, যা অনেক আগেই ভেঙে গিয়েছে।’

উল্লেখ্য, দেশের নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ নিয়ে গতকাল গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়ে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা ও দেশের প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত একটি কমিটি নির্বাচন কমিশনারদের বাছাই করবে। সেই কমিটির সেই সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ চূড়ান্ত করবেন রাষ্ট্রপতি। প্রসঙ্গত, দেশে নির্বাচন কমিশন ও কমিশনের সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে সম্প্রতি বারবার প্রশ্ন উঠেছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, শাসকদলের সুবিধা করে দিতে অনেক ক্ষেত্রে কাজ করছেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। এই প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই আজ যুগান্তকারী রায় দিল শীর্ষ আদাল। এবং তার সঙ্গে ‘বিচারব্যবস্থা বনাম আইনসভা’র বিতর্ক নিয়েও উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ করে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধাক বেঞ্চ।