এবার বদরুন্নেসায় ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে রুম দখল ও র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হলে ছাত্রলীগ নেত্রীর হাতে ছাত্রী নির্যাতনের রেশ এখনও কাটেনি। শিক্ষাঙ্গনে নেতাকর্মীদের অব্যাহত বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ইমেজ সংকটে পড়েছে সংগঠনটি। বাধ্য হয়ে ‘অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন অ্যাগেইনস্ট র‍্যাগিং অ্যান্ড সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট ইন ক্যাম্পাস’ কর্মসূচি হাতে নেয় ছাত্রলীগ। এই কর্মসূচি শেষ হতে না হতেই এবার পুরান ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে এক ছাত্রীর রুম দখল ও র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে সংগঠনটির এক নেত্রীর বিরুদ্ধে। ফলে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না ছাত্রলীগের।

ঘটনার সূত্রপাত শনিবার (৪ মার্চ) দুপুরে। কলেজটির আবাসিক হলের ২০০৭ নং কক্ষে ঘটে এ কাণ্ড। আধিপত্য বিস্তারের জন্য এই রুমে থাকা মেয়েদের উচ্ছেদ করতে চান কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবীবা আক্তার সাইমুন। লক্ষ্য নিজের অনুগত অন্য মেয়েদের রুমটিতে থাকার সুযোগ করে দেওয়া। কিন্তু এই অনিয়ম করতে গেলে সেখানে থাকা মেয়েরা প্রতিবাদ করেন, ক্ষিপ্ত হয়ে জিনিসপত্র তছনছ করেন তিনি।

এমন অভিযোগ করে রাত পৌনে ১২টায় ২০০৭ নং রুমের ভুক্তভোগী লাইজু আক্তার দাবি করেছেন, আমাদের রুম অন্যায়ভাবে দখল করতে চাইছে সাইমুন। তার মেয়েরা এখনও রুমে অবস্থান করছে। তারা রুমের জিনিসপত্র তছনছ করে ফেলছে। এর প্রতিবাদ করলেও ক্ষেপে যায় তারা। ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গেলে আমাকে ধাক্কা দেয়, মোবাইল কেড়ে নিতে আসে।

লাইজুর ধারণ করা ছোট ছোট কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন ছাত্রী একটি কক্ষে প্রবেশ করেন। তাদের একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘আপুর উপর তো কিছু বলা যাবে না।’ এর জবাবে লাইজু বলেন, ‘আপুর উপর কেন বলা যাবে না? আপু যদি শৃঙ্খলা মতো আমাদের দেখা-শোনা করেন, তাহলে আমরা সেটা অবশ্যই মেনে নিবো। যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন, র‍্যাগিং দেন, মেনটাল টর্চার করেন, সেটার প্রতিবাদ কেন করতে পারবো না?’

ওই কয়েকজনের একজন বলেন, ‘আপু তো কোনও জোর করে নাই। বেড চেঞ্জ করে দিছে।’ জবাবে লাইজু আবার বলেন, ‘আমাদের রুম থেকে তো কেউ যায় নাই।’ উত্তরে আগন্তুক এক ছাত্রী বলেন, ‘তাহলে আমরা আপুকে জানাই।’ লাইজুর জবাব, ‘আমি কি করে বলবো? তোমাদের ডিসিশন কি আমি দিয়ে দিবো? আমি আনছি তোমাদের?’

আরেক ভিডিওতে ২০০৭ নং কক্ষে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে জোর করে প্রবেশ করতে এবং রুমের জিনিসপত্রে হাত দিতে দেখা যায়। লাইজু আক্তার তাদের ভিডিও ধারণ করতে গেলে কথা কাটাকাটি হয়। তারা লাইজুর ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে কক্ষ ত্যাগ করে।

কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবীবা আক্তার সাইমুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, আমি কিছুই জানি না। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটানো হচ্ছে। তবে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে সাইমুন বলেন, আমি কেন নির্যাতন করবো? নির্যাতনের কোনও চিহ্ন দেখেছেন?

তিনি আবার এ কথাও পরে বলেন, হল প্রশাসন থেকে কয়েকজন ছাত্রীর সিট পরিবর্তন করা হয়েছে। আমি যতটুকু জানি লাইজু বাদে বাকি কয়জনকে চেঞ্জ করার কথা বলা হয়েছে। সেটি প্রশাসন থেকে বলেছে ওদের, আমি এর সঙ্গে ইনভলভ না। আমি কেন ওদেরকে চেঞ্জ করাবো? তার মালামাল সরানো বা ভাঙচুর করা হয়েছে কি না, সেটি আপনারা এসে দেখতে পারেন।

এর আগে গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলে দুই দফায় এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হল প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগ পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই ঘটনায় হাইকোর্টে রিট হলে আদালতের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন।

পরে ওই ঘটনায় প্রতিটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে হল ও ছাত্রলীগের পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃতরা হলেন— ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি (বহিষ্কৃত) সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ছাত্রলীগ কর্মী ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মি ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মোয়াবিয়া জাহান।

এদিকে, ওই ঘটনা নিয়ে যখন সারাদেশে তোলপাড় চলছে, তখন ‘অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন অ্যাগেইনস্ট র‌্যাগিং অ্যান্ড সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট ইন ক্যাম্পাস’ কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সংগঠনটির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়– র‌্যাগিং, সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট ও রেসিজম শিক্ষার্থীদের সুন্দর ও সৃষ্টিশীলতার পথে অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে। ক্যাম্পেইনে সব নেতাকর্মীকে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয়ভাবে ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় মধুর ক্যান্টিন থেকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ পর্যন্ত চলে কর্মসূচি। এছাড়া ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি সব বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ এবং ১ থেকে ৩ মার্চ সব কলেজ, মাদ্রাসা, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টেকনিক্যাল কলেজসহ অন্যান্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই কর্মসূচি পালন করে ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলো।