পঞ্চগড়ে সংঘর্ষের ঘটনায় সাত মামলায় ৮ হাজার আসামি, গ্রেফতার ৮১

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সাতটি মামলা করা হয়েছে। রবি ও সোমবার (০৬ মার্চ) বিকালে পঞ্চগড় সদর থানায় এসব মামলা করা হয়েছে। 

এর মধ্যে গুজব ছড়ানো, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে পুলিশের পক্ষ থেকে পাঁচটি, র‌্যাবের পক্ষ থেকে একটি এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়। ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আট হাজার ৬০০ জনকে এসব মামলার আসামি করা  হয়েছে। সাত মামলায় এ পর্যন্ত ৮১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শনিবার গভীর রাত থেকে রবিবার দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রবিবার গভীর রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাকিদের গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানায়, ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় পঞ্চগড় পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলে রাব্বী (২৮) ও তেঁতুলিয়ার সাতমেরার রাব্বী ইমনকে (২৬) গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জাহিদ হাসানকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় পৌরসভার রাজনগর এলাকার ইসমাইল হোসেন (২৫) ও তুলারডাঙ্গা এলাকার রাসেল হোসেনকে (২৮) গ্রেফতার দেখানো হয়। এ ছাড়া হামলা, ভাঙচুর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় করা পুলিশ এবং র‌্যাবের মামলায় ৭৭ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাদেরকে আদালতের মাধ্যেমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিয়া বলেন, ‘হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ৪ মার্চ রাতে সদর থানার এসআই মাসুদ রানা একটি, এসআই সাইদুর রহমান একটি, এসআই সামসুজ্জোহা সরকার দুটি এবং এসআই আলতাফ হোসেন একটি মামলা করেছেন। পাশাপাশি র‌্যাব-১৩-এর পক্ষে ডিএডি আব্দুস সামাদ বাদী হয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে একটি মামলা করেন। এই ছয় মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আট হাজার ৬০০ জনকে আসামি করা হয়।’

ওসি আরও বলেন, ‘জাহিদ হাসানকে হত্যার ঘটনায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের পক্ষে তার বাবা ওসমান আলী বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এই মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে অজ্ঞাত ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। জাহিদ হত্যার ঘটনায় দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হত্যায় জড়িত বলে রবিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।’ 

ওসি আব্দুল লতিফ মিয়া আরও বলেন, ‘হত্যার ঘটনায় আরও কয়েকজন জড়িত আছেন। এজন্য গ্রেফতারকৃত দুজনের পরিচয় জানানো যাচ্ছে না। বাকিদের গ্রেফতারের পর সবার পরিচয় জানানো হবে।’

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘বর্তমানে জেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব মোতায়েন করা আছে। তারা টহল দিচ্ছে। আমরা তদন্ত করে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করছি। হামলাকারীরা যেই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ 

এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত সদর থানায় সাতটি মামলা হয়েছে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘এসব মামলায় ৮১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।’

প্রসঙ্গত, পঞ্চগড় শহরের আহম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া জামাতের তিন দিনব্যাপী জলসা বন্ধের দাবিতে শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিল নিয়ে বিক্ষোভকারীরা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে সমবেত হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে করতোয়া সেতুর দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের থামিয়ে দেয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে ঢুকে পড়েন। কিছুক্ষণ পর চৌরঙ্গী মোড়সংলগ্ন সিনেমা হল সড়ক থেকে একদল বিক্ষোভকারী মিছিল নিয়ে এসে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। ধাওয়া দিলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এরপর বিক্ষোভকারীরা আহম্মদনগর এলাকায় গিয়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে হামলা ও সংঘর্ষ। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ, বিজিবি ও র‍্যাব। এ ঘটনায় দুজন নিহত ও পুলিশসহ শতাধিক মানুষ আহত হন।