British Council carnival: খেলতে খেলতেই পড়তে শিখবে খুদেরা! ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্নিভালে মজার আয়োজন

কাঁচের স্বচ্ছ দরজা খুলে ঢুকতেই একরাশ মিষ্টি হাসির ঢেউ। বিস্তৃত রিডিং রুমে ‘ছোটদের’ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে অগুন্তি কচিকাঁচার দল। এমনিতে লাইব্রেরি হলেও চেনা ছবির থেকে অনেকটাই আলাদা এই দৃশ্য। ঢোকার পর কিছুটা ধাতস্থ হতে না হতেই এক খুদে ছুট্টে এল খরগোশ হাতে‌। সদ্য পাওয়া বেলুনের খরগোশ দেখাল উপরে তুলে। হাসতে হাসতে চোখে প্রশ্ন, ‘আমার খরগোশটা দারুণ না!’। ফিরতি হাসিতে সায় জানিয়েই ধীরে ধীরে এগোনো গেল কচিকাঁচাদের সমুদ্রে। একদিকে ‘জুম্বা’ নাচে মেতেছে খুদের দল‌। ‘জুম্বা’ মজার ‘ফিটনেস ড্যান্স’। বামদিকে আরেক ঝাঁক হ্যান্ড পেইন্টিংয়ে ব্যস্ত। কারও হাতে দেখা দিচ্ছে মিকি মাউস তো কারও হাতে টম অ্যান্ড জেরি। কারও হাতে হয়তো বা অন্য কোনও প্রিয় কার্টুন চরিত্র, ফুটে উঠছে একরত্তিকে সঙ্গ দিতে।

আরও পড়ুন: হাজারটা কাজ করেও ফুরফুরে থাকবেন, ক্লান্ত হবেন না একটুও, মনে রাখুন শুধু ৫টোটকা

আরও পড়ুন: বড় বিপদ ঘনিয়ে আসছে আগামী দিনে! আবহাওয়া দিবসে নয়া সতর্কতা বিজ্ঞানীদের

ব্রিটিশ কাউন্সিলের রিডিং রুমে রবিবাসরীয় দৃশ্য ছিল এমনটাই। ‘হঠাৎ এমন আয়োজন?’ প্রশ্ন শুনেই ব্রিটিশ কাউন্সিলের ইস্ট ও নর্থ ইস্ট জোনের ডাইরেক্টর দেবাঞ্জন চক্রবর্তী বললেন, ‘আসলে গ্ৰন্থাগারের ধারণা এখানে অন্যরকম। আমরা মনে করি, এটা মেলামেশার জায়গা। যেখানে ছোটরা নিরাপদে অন্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারে। আজ রবিবার, মার্চে পরীক্ষাও শেষ। কচিকাঁচারা যাতে একটু হইহুল্লোড় করতে পারে তাই এই ব্রিটিশ কাউন্সিল কার্নিভাল।’

খুদেদের সঙ্গে জুম্বা ড্যান্সে দেবাঞ্জন চক্রবর্তী (হলুদ টি শার্ট)

কথোপকথনের ফাঁকেই শোনা যাচ্ছে ছোটদের হইহুল্লোড়। কাঁচের দরজার ওপারে বেলুন দিয়ে তৈরি হচ্ছে রকমারি শৌখিন জিনিস‌। দেখা গেল এক ‘লড়াকু’ খুদের হাতে বেলুনের তলোয়ার। তলোয়ারনির্মাতার মাথায় তা দিয়ে দু’ঘা মেরেই খিলখিলিয়ে ‘যুদ্ধজয়’এর হাসি। বাচ্চাদের নতুন জিনিস শেখা তো এখন শুধু বইয়ে আটকে নেই। নানা মাধ্যম থেকে শেখার সুযোগ পাচ্ছে তারা। তাদের এই শেখার কায়দাকে কেমনভাবে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে? দেবাঞ্জন বলেন, ‘হইহুল্লোড়ের মধ্যে দিয়েই নতুন নতুন জিনিস শিখুক খুদেরা, উদ্দেশ্য এটাই। পাশাপাশি এটাই ব্রিটিশ কাউন্সিলের মতাদর্শ। রিসার্চ বলছে, আনন্দ, মজা করে আমরা যা শিখছি, সেই শেখাটাই সারাজীবন মনে থেকে যায়।’

আরও পড়ুন: মানবসভ্যতার ‘রক্ত’ই জল, ঘোর সংকটের সামনে দাঁড়িয়ে কেন এমন বলছেন বিজ্ঞানীরা

রিডিং রুমটিতে একবার ‘প্যানোরমা’ মোডে চোখ বোলালে দেখা যাবে, দেওয়াল ঘেঁসে রঙিন বইয়ের তাক। গল্পের বই শুধু নয়, রয়েছে আরও নানা বিষয়ের বইয়ের সম্ভার। লাইব্রেরির পরিচিত ছক থেকে একটু অন্যভাবে সাজানো।‌ এক দেখাতেই যা বাচ্চাদের মন কাড়বে। চারদিকে এতরকম মাধ্যম রয়েছে। বই পড়ায় কীভাবে উৎসাহ পাবে আজকের দিনের বাচ্চারা? দেবাঞ্জন এর উত্তরে জানান, ‘আমরা গরমের ছুটির সময় একটা সামার ক্যাম্প আয়োজন করি। এছাড়াও থাকে রিডিং চ্যালেঞ্জ। রিডিং চ্যালেঞ্জটা ছোটদের জন্য খুব কাজের। রিডিং চ্যালেঞ্জে অংশ নেওয়ার পর বহু বাচ্চার বইয়ের প্রতি ভালোবাসা বেড়ে গিয়েছে। আগে হয়তো তারা বই পড়তোই না!’

একুশ শতকে দাঁড়িয়ে বই মারফত শিক্ষা কেন অন্য মাধ্যমের শিক্ষার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? এমন প্রশ্ন তো উঠতেই পারে। সে কথারই যেন জবাব দিলেন দেবাঞ্জন। বললেন, ‘বই পড়াটা আমাদের অনেক বেশি ভাবতে শেখায়। একই গল্প যদি না পড়ে ভিডিয়োতে দেখি, তাহলে নিজে থেকে যা ভাবতে পারছি, তা আর ভাবতে পারব না। এখানেই বইয়ের গুরুত্ব যা শিশুর ভাবনাকে উস্কে দিচ্ছে। সে কারণে আজকের এই মজার কার্নিভাল।’

<p>হ্যান্ড পেইন্টিংয়ে ব্যস্ত</p>

হ্যান্ড পেইন্টিংয়ে ব্যস্ত

এরপর সোজা কাট টু রিডিং রুম। তিন থেকে নয় বছর বয়সিদের জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের এই কার্নিভাল। এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বইয়ে মুখ ডুবিয়েছে কয়েকটি ‘বড়’ ছেলেমেয়ে। কারও হাতে এনিড ব্লাইটন তো কারও হাতে রোয়াল্ড ডালের বই। দুপুর হয়েছে, খিদে ডাক দিয়েছে ইতিমধ্যে। বুফেতেও ভিড় জমিয়েছে ছোট ছোট মুখ ও তাদের অভিভাবক। তেমনই এক খুদের মুখোমুখি পড়তেই দেখা গেল দুটো লাল পেস্ট্রি পেয়ে দারুণ খুশি। নাকে লেগে ক্রিম আর মুখে লেগে হাসি। তার মায়ের হাতে একটি রাস্কিন বন্ডের বই। বইয়ের ফাঁকে আঙুল দেখে বোঝা গেল ইতিমধ্যেই খুদে ওতে মজে গিয়েছে।

এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup