রাজধানীর অনেক মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ: ফায়ারের ডিজি

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেছেন, এনেক্সকো টাওয়ার ছাড়াও রাজধানীর অনেকগুলো মার্কেট আপাতদৃষ্টিতে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে। আগামীকাল থেকে গণমাধ্যমকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এগুলো সার্ভে করবো। ওই স্পটেই সার্ভে রেজাল্ট গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়ে আসা হবে। একই সময়ে ওই মার্কেটের পরিচালনা কমিটিকেও বিষয়টি জানানো হবে।

বুধবার (৫ এপ্রিল) ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এনেক্সকো টাওয়ারের চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় যেহেতু গুদাম ঘর, তাই আমরা এখনও সেখানে আগুন নেভানোর কাজ করে যাচ্ছি। গতকাল এবং আজকে প্রায় ৭০০ জন ফায়ার সার্ভিস সদস্য আগুন নেভানোর কাজ করেছে। বর্তমানে আমাদের ১২টি ইউনিট পর্যায়ক্রমে কাজ করে যাচ্ছে।

ডিজি আরও বলেন, আমরা এই ভবনটিকে (এনেক্সকো টাওয়ার) ২০১৯ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিলাম। এরপর ১০ বার তাদের নোটিশও দিয়েছিলাম, যাতে তারা এখানে ব্যবসা পরিচালনা না করেন। তারপরও ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা পরিচালনা করেছেন।

বঙ্গবাজারে আগুন নেভাতে পানির স্বল্পতা পোহাতে হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলের পাশে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল থেকে পাম্প দিয়ে পানি আনতে হয়েছে। বিমানবাহিনীও হেলিকপ্টারে করে হাতিরঝিল থেকে পানি এনে আগুন নেভাতে সহযোগিতা করেছিল। আমরা বুড়িগঙ্গা থেকেও পানি এনেছিলাম। এই কাজে তিন বাহিনীর পাশাপাশি ওয়াসাও আমাদের সহযোগিতা করেছিল।

এই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই কমিটি আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিবে। এরপর আমরা এই বিষয়ে গণমাধ্যমকে বিস্তারিত জানাতে পারবো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি হচ্ছে বলে শুনেছি। সেখানেও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি থাকবে।

বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী তাদের সর্বস্ব হারিয়েছেন। আপনারা তাদের আহাজারি দেখেছেন। আমরাও এই ঘটনায় ব্যথিত। আমরা দুর্ঘটনা-দুর্যোগে সবার আগে সবার পাশে থাকি।

 

কী কারণে ফায়ার সার্ভিসের ওপর বিক্ষুব্ধ জনতা আক্রমণ চালালো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা জীবন দিয়ে মানুষকে সাহায্য করি। গত এক বছরে ফায়ার সার্ভিসের ১৩ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। ফায়ার সার্ভিস ছাড়া আর কোনও বাহিনীতে এত আহত-নিহত আছে? তারপরও কেন আমাদের ওপর এই আক্রমণ?

তিনি আরও বলেন, আমরা সর্বদা মানুষের পাশেই আছি। সব সময় মানুষকে সহযোগিতা করছি, মহড়া করছি, বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এবার আপনারা (জনগণ) একটু আমাদের সহযোগিতা করেন, যেন আমরা একটি নিরাপদ দেশ গড়তে পারি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের জন্য প্রতিটি স্থাপনা, প্রতিটি ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে আগুন নেভানোর কাজ করেছি। পুলিশ হেডকোয়ার্টারের একটি ভবনের অনেকটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ এনেক্সকো টাওয়ারের যে বর্ধিত অংশ সেটি আমরা রক্ষা করেছি। আমাদের কাছে প্রতিটি জীবন গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, যেখানে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়, সেখানে জলাধার রাখার নিয়ম আছে। কিন্তু ঢাকা শহরে সেটি নেই। আগামী সপ্তাহে রাজউক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করা হবে—জলাধার এবং ভবন নির্মাণের সময় ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মানার বিষয় নিয়ে। একটি পরিকল্পিত নগরে অগ্নিনির্বাপণের জন্য ওয়াটার হাইড্রেন্ট থাকা খুবই জরুরি। কিন্তু ঢাকা শহরে এটি একেবারেই নেই। আমরা মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন ও রাজউকের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা বলে যাচ্ছি।