শিয়রে পঞ্চায়েত ভোট, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে এখনো সর্বনামেই আটকে সিপিএম

রাজ্যে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে ঘুরিয়ে জোটবার্তা দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম। বুধবার রাজ্য কমিটির বৈঠকে জবাবি ভাষণে তিনি আঞ্চলিকভাবে সমঝোতা হতে পারে বলে জানিয়েছেন। তবে রেখেছেন একটি শর্তও। বিজেপি ও তৃণমূলের কাছে শিরদাঁড়া বিক্রি করে দেননি, শুধুমাত্র এমন শক্তির সঙ্গেই সমঝোতা করবে সিপিএম।

বুধবার সেলিম বলেন, ‘রাজ্যস্তরে কোনও জোট হচ্ছে না। তবে বিজেপি ও তৃণমূলের কাছে যারা শিরদাঁড়া বিক্রি করেনি তাদের কাছে জেলা ও ব্লক স্তরে সমঝোতা হতে পারে। সেই লক্ষ্যে আলোচনা চলছে। ৭ – ১০ দিনের মঝ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।’ সেলিমের এই অবস্থান সিপিএমের পুরনো ভুলের পুনরাবৃত্তি বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাদের প্রশ্ন, কালের নিয়মে সিপিএমের শীর্ষনেতৃত্বকে নীতিগত জড়তা কি এতটাই গ্রাস করেছে যে তারা দেওয়াল লিখনও পড়তে পারছে না?

২০১১ সালে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পরেই সিপিএমের মধ্যে নীতিবৈকল্যের সূত্রপাত বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের একাংশের। ২০১৬-র নির্বাচনে বিস্তর গড়িমসির পরে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে তারা। তবে নীতিগতভাবে বিপরীত মেরুর দল কংগ্রেসের সঙ্গে জোটকে তারা জোট বলতে নারাজ। কংগ্রেসের সঙ্গে জোটকে ‘সমঝোতা’ বলে দাবি করে সিপিএম নেতৃত্ব। ২০২১ সালেও ঘটে একই ঘটনা। শেষ মুহূর্তে তথাকথিত ‘সমঝোতা’ করে মুখ থুবড়ে পড়ে সিপিএম ও কংগ্রেস। গত মাসে সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কংগ্রেসকে প্রকাশ্যে সমর্থন করে সিপিএম। এমনকী সেখানে গিয়ে প্রচারে অংশগ্রহণ করেন সেলিমসহ সিপিএম নেতারা। যার ফলে তৃণমূলকে ২৩ হাজারের বেশি ভোটে হারান কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস। এর পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘সিপিএমের সঙ্গে আমরা সব সময় জোট চাই। ওরাই বারবার সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে?’

সিপিএমের দাবি, মতাদর্শগত দিক থেকে বিজেপি তাদের বিপরীত মেরুর বাসিন্দা। আর তৃণমূলের বিজেপি বিরোধিতার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের প্রশ্ন, সিপিএমের বিজেপি বিরোধিতা এতই নিখাদ হলে কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের সরাসরি জোট ঘোষণা করতে সমস্যা কোথায়?

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের আরেকটি অংশ মনে করছে, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সিপিএমের একাংশের মধ্যে। যে কংগ্রেসের সঙ্গে কেরলে তাদের অহি-নকুলের সম্পর্ক ঠেলায় পড়ে পশ্চিমবঙ্গে তাদের সঙ্গে জোট করতে হচ্ছে সিপিএমকে। এই জোটের নির্বাচনী লক্ষ্য ছাড়া যে কোনও নীতিগত লক্ষ্য নেই তা বিলক্ষণ জানে সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই রাজ্য স্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে নারাজ তারা। সেক্ষেত্রে জোটের ফল খারাপ হলে দলের ভিতরে ও বাইরে সমালোচনার মুখে পড়তে হবে তাদের। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেই সম্ভাবনাই বেশি। তাই সেই দায় দলের জেলা ও ব্লক নেতৃত্বের ঘাড়ে ঠেলে দিতে চায় সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব।