ঈদের ছুটিতে কমেছে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা

এবার ঈদুল ফিতরে রাজধানীতে অপরাধের ঘটনা কম ঘটেছে। যা অন্য যেকোনও বারের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল। এর আগে পুলিশ বলেছে, ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাজধানীতে পুলিশি নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আটটি বিভাগের তিন বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের ঈদের ছুটিতে মহানগরীতে ফাঁকা বাসায় মোট সাতটি চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা থানায় রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি ঘটনায় আসামি গ্রেফতার ও মালামাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। আর চারটি ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে।

এই অভিযোগ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। এবার ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে কোনও খুনের ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান তারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগে দুটি, লালবাগ বিভাগে একটি চুরি এবং মতিঝিল বিভাগে চারটি চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ডিএমপির কলাবাগান থানায় একটি চুরির মামলা হয়েছে।

রাজধানীর ঝিগাতলা মিতালী রোড এলাকায় সাংবাদিক আলী আশরাফ আকন্দের নিচতলার বাসায় ঘটেছে এমন দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা।

আশরাফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ১৯ এপ্রিল ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে ‍গ্রামের বাড়িতে যাই। পরে গতকাল এক নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারি আমার বাসায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (২৯ এপ্রিল) সকালে বাসায় এসে এই অবস্থা দেখি। পরে ডিএমপির হাজারীবাগ থানায় গিয়ে অভিযোগ করেছি। পুলিশ এসে সব দেখে গেছে। রাতে ডাকাতির মামলা করবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাসার সামনে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। কিন্তু তারা বাসার পেছনের জানালার গ্রিল ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেছে। এরপর মাঝের দরজার কবজা ভেঙে বেডরুমে ঢুকে দুটি আলমারি ও ওয়ার্ডরোব ভেঙে ১২ হাজার টাকা, স্বর্ণালংকার, শাড়ি, থ্রি-পিস, প্যান্ট-শার্ট, পাঞ্জাবিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যায়। এ ছাড়া বাসায় থাকা তৈজসপত্র, সেলাই মেশিন, ওয়াই-ফাইয়ের রাউটারসহ আরও অনেক মূল্যবান জিনিস নিয়ে গেছে।’

মতিঝিল ফকিরাপুল এলাকায় আবাসিক ভবনের চার তলায় একটি মেসে গত ২০ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মেসের এক সদস্য মাসুম বিল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি সকাল ১০টার পর বাসা থেকে বের হয়ে অফিসে যাই। ১১টার পর মেসের আরেক সদস্য মিজানুর রহমান ফোন করে জানান বাসার পেছনের জানালা ভেঙে চোর প্রবেশ করে।’

মাসুম বলেন, ‘ওই দিন আমি অফিসের বের হবার পরেই চোরেরা বাসায় হানা দেয়। তারা চার তলার পরে সানসেটে দাঁড়িয়ে জানালা ভেঙে প্রবেশ করে। কিন্তু পাশের রুমের একজন বিষয়টি টের পেয়ে চিৎকার করলে চোররা ভাঙা জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। তবে এ ঘটনায় বাসায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত সময়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার তৎপর ছিল পুলিশ প্রশাসন। নগরবাসীকে আগেই থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে। এ কারণে চুরি-ডাকাতির ঘটনা অনেকটা কম ঘটেছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, ডিএমপির পক্ষ থেকে নগরবাসীর ফাঁকা বাসার নিরাপত্তার জন্য সর্তক অবস্থানে ছিল পুলিশ। এতে অন্য যেকোনও বছরের তুলনায় চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা একবারেই হাতেগোনা।

ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্য যেকোনও বছরের তুলনায় এ বছর ঈদের ছুটিতে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা একেবারেই হাতে গোনা। মতিঝিল বিভাগের সাতটি থানায় মাত্র চারটি চুরি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।’

ঈদের ছুটিতে স্থিতিশীল পরিবেশ ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি জোরদার রাখা ছিল এবং পুলিশ সফলভাবে কাজ করেছে উল্লেখ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।

ঈদের দুদিন পর ২৫ এপ্রিল সকালে ডিএমপি সদর দফতরে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এবার ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ নগরবাসী গ্রামের বাড়িতে গেছে। তাদের বাসা-বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া ছিল ডিএমপিতে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের কাঁধে। ঢাকা মহানগর পুলিশ সেই দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেছে।’

২০২২ সালে ঢাকা মহানগর এলাকার অপরাধ চিত্র নিয়ে করা পুলিশের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছর রাজধানীতে মোট চুরির ঘটনা ঘটে এক হাজার ৬০৩টি। এর মধ্যে গাড়ি চুরির ঘটনা ঘটেছে ৩৮৭টি। ওই বছরেই বাসা-বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে ৭১৩টি।

২০২২ সালের মে মাসে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে নগরবাসী ঢাকা ছাড়েন। ওই মাসে চুরির ঘটনা ঘটে ১৩৩টি। আর বাসা-বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে ৬৮টি।