এক ধারায় ১০ বছর কারাদণ্ড, আরেক ধারায় আরাভ খালাস

অস্ত্র আইনের মামলায় দুবাইয়ের সোনা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মুর্শিদ আহাম্মদের আদালত। রবিবার (৯ মে) ঘোষিত রায়ে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অস্ত্র আইন-১৮৭৮ এর ১৯(ক) ধারা প্রমাণিত হওয়ায় তাকে এই কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

এদিকে অস্ত্র আইন-১৯৭৮ এর ১৯(চ) ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে দায় থেকে খালাস দেওয়া হয়। আসামি পলাতক থাকায় তার সাজা উল্লেখ করে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করেন আদালত।

রায়ের আদেশে আরও বলা হয়, পলাতক আসামি স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করার কিংবা পুলিশ হাতে ধরা পড়ার তারিখ থেকে বর্ণিত সাজা কার্যকর হবে। তবে সাজাপ্রাপ্ত আসামির সাজার মেয়াদ গণনার ক্ষেত্রে আসামি ইতোপূর্বে এই মামলায় কারাবাস করে থাকলে তা আরোপিত সাজার মেয়াদ থেকে ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮ এর ৩৫(ক) ধারার বিধান মতে কাটা যাবে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আট বছর আগে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ তার শ্বশুর সেকেন্দার আলীকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করার চেষ্টা করে। ওই দিন একটি গুলিভর্তি রিভলবারসহ শ্বশুরের বাসার সামনে থেকে গ্রেফতার হন আরাভ। পরে তার বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় ১৮৭৮ সনের অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ও ১৯(চ) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন ডিবি পশ্চিমের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিমের উপপরিদর্শক সুজন কুমার কুণ্ডু।

অস্ত্র আইন ১৮৭৮ এ আইনে অননুমোদিতভাবে অস্ত্র নির্মাণ, এর আংশিক পরিবর্তন ও বেচাকেনা, অস্ত্র আমদানি ও রফতানি, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বেআইনি কোনও অস্ত্র সরবরাহ এবং নিজের কাছে লাইসেন্সবিহীন আগ্নেয়াস্ত্র রাখা প্রভৃতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উল্লেখিত বিধিনিষেধসমূহ ভঙ্গ করা এ আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব ক্ষেত্রে অপরাধের মাত্রাভেদে শাস্তির পরিমাণ হচ্ছে যাবজ্জীবন অথবা কমপক্ষে সাত থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড।

এই আইনের ১৯  ধারায় বলা হয়েছে, ‘বিশেষ কতগুলো অস্ত্রের ব্যাপারে ৬, ১৩, ১৪ ও ১৫ ধারা ভঙ্গের জন্য ১৯ ধারায় কোনও কিছু থাকা সত্ত্বেও যে কেউ ১৯ ধারায় ক, গ, ঙ অথবা চ দফায় কোনও অপরাধ সংঘটন করিলে, অপরাধ যদি পিস্তল, রিভলবার, রাইফেল, শটগান বা অন্য আগ্নেয়াস্ত্র সম্পর্কিত হয়, সে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা অন্য কোনও কঠোর কারাদণ্ডে, যাহার মেয়াদ ১০ বছর কম হইবে না।’

১৯(চ) ধারা প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে এই ধারা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, ‘১৪ বা ১৫ ধারার বিধান লঙ্ঘন করিয়া কোনও অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ বা সামরিক সম্ভার দখলে বা নিয়ন্ত্রণে রাখে এমন অপরাধ।’

এর আগে গত ৭ মে আদালত রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এদিন ধার্য করেন। এ মামলায় ২০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি ডিএমপি ঢাকা অফিসে পুলিশ পরিদর্শক মাহবুব উর রশিদ সংবাদ পান, আদালতে বিচারাধীন ঢাকার শাহআলী থানায় দায়ের করা মামলায় এজাহারনামীয় জামিনে মুক্ত আসামি রবিউল ইসলাম আপন (আরাভ খান) সশস্ত্র অবস্থায় রমনা থানাধীন মগবাজার আমবাগানে তার শশুরবাড়ীর সামনে রাস্তার অবস্থান করছে। সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য টিম লিডার পুলিশ পরিদর্শক মাহবুব উর রশিদের নেতৃত্বে ডিএমপি’র একটি দল মাইক্রোবাসে সেখানে যান। ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তিন তলা বাড়ির সামনের রাস্তার ওপর এক ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। তাদের দেখামাত্রই উপস্থিত লোকজনের সামনে দৌড়ে ওই ব্যক্তি তিন তলা বাড়ির নিচতলায় প্রবেশ করেন।

উপস্থিত লোকজনসহ পুলিশ তাকে আটক করে। তখন সে তার নাম রবিউল ইসলাম আপন বলে জানায়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রবিউল ইসলাম আপন স্বীকার করে, তার শ্বশুর সেকেন্দার আলীকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের জন্য তার অপেক্ষায় একটি গুলিভর্তি রিভলবারসহ এই বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গ্রেফতার এড়ানোর জন্য নিচতলার একটি ঘরে প্রবেশ করে শোবার খাট ও খাটের পশ্চিম দিকের দেয়ালের মাঝখানের ফাঁকা স্থানে গুলিভর্তি রিভলবারটি রাখে। এসময় তার কাছ থেকে একটি রিভলবার উদ্ধার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, সে ইতোপূর্বে একাধিক মেয়েকে বিয়ে করেছে এবং ভয়ভীতি ও প্রভাব খাটিয়ে শ্বশুরের কাছ থেকে নগদ অর্থ আদায় করতো।

এ মামলায় রবিউল ইসলাম আপনের (আরাভ) বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ২০১৫ সালের ১ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির উপ-পরিদর্শক শেখ হাসান মুহাম্মদ মোস্তফা সারোয়ার।

একই বছরের ১০ মে আরাভের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এ মামলায় ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ জামিন পায় সে। এরপর জামিনে গিয়ে পলাতক থাকায় ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আদালতের সরকারি কৌসুলি আব্দুল্লাহ আবু বলেন, অস্ত্র মামলায় তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। এতে আমরা সন্তুষ্ট। তার বিরুদ্ধে আরও যেই মামলাগুলো আছে সেগুলো যেন দ্রুত নিষ্পত্তি হয় সেদিকে আমরা খেয়াল রাখবো।

আরও পড়ুন-

অস্ত্র মামলায় আরাভ খানের ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড

মিথ্যাচার করছে আরাভ