‘‌চিকিৎসকের নিরাপত্তা দিতে না পারলে হাসপাতাল বন্ধ করুন’‌, ভর্ৎসনা কেরল হাইকোর্টের

পায়ের ক্ষত ড্রেসিং করতে গিয়েছিলেন তরুণী চিকিৎসক। আর তাঁকেই কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল এক মদ্যপ ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এমনকী ওই ব্যক্তিকে বাধা গিতে গিয়ে জখম হয়েছেন আরও চারজন। কেরলের এই ঘটনায় আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। নিহত চিকিৎসকের নাম বন্দনা দাস (২৩)। তিনি আজিজিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হাউস সার্জেন ছিলেন। প্রশিক্ষণের জন্য তরুণী চিকিৎসককে কোল্লাম জেলার কোট্টারাকরার তালুক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। সেখানেই ড্রেসিংয়ের সময় তাঁকে ছুরি, কাঁচি দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে মদ্যপ অভিযুক্ত। তার জেরে তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মন্তব্য করেছে কেরল হাইকোর্ট। এমনকী হাসপাতালকে ভর্ৎসনা করেছে।

এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। যথাযথ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। কিন্তু পুলিশের সামনে মহিলা চিকিৎসক খুনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে কেরলে। রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) এবং কেরল গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (কেজিএমওএ) চিকিৎসকরা। এই ঘটনায় কোল্লাম পুলিশ সুপারের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। এই ঘটনা নিয়ে কেরল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি দেভন রামচন্দ্রন ও কৌশর এডাপ্পাগাথ পুলিশ, হাসপাতাল এবং রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন। বিচারপতিরা বলেন, ‘‌যদি চিকিৎসকের নিরাপত্তা দিতে না পারেন তাহলে হাসপাতাল বন্ধ করে দিন।’‌

পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্তের নাম সন্দীপ। পেশায় স্কুল শিক্ষক। কিন্তু এখন তিনি সাসপেনশনে আছেন। মঙ্গলবার পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে হাতহাতিতে জড়িয়ে পায়ে আঘাত পান। হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাইতে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। সন্দীপকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তখন মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন অভিযুক্ত। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন পুলিশকর্মীরা। পায়ের ক্ষত ড্রেসিংয়ের সময় আচমকা খেপে যায় সন্দীপ। হাতের কাছে থাকা কাঁচি, ছুরি দিয়ে ওই তরুণী চিকিৎসককে হামলা করেন।

ঠিক কী বলেছেন বিচারপতিরা?‌ এই ঘটনা নিয়ে হাসপাতালকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন বিচারপতিরা। বিচারপতি দেভন রামচন্দ্রন ও কৌশর এডাপ্পাগাথ বলেন, ‘‌এটা অত্যন্ত চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা। তরুণী চিকিৎসককে কর্তব্যরত অবস্থায় খুন করা হল। পরিবারের ক্ষতির কথাটা ভাবুন। একজন ভাল চিকিৎসক হতে চেয়ে খুন হতে হল। নিরাপত্তা ব্যবস্থার তাহলে প্রয়োজনীয়তা কী?‌ এটা চূড়ান্ত ব্যর্থতা। ওই পরিবারের মুখোমুখি আমরা হবো কী করে? কে এই দায়িত্ব নেবে? চিকিৎসকের নিরাপত্তা দিতে না পারলে হাসপাতাল বন্ধ করে দিন।’‌