Sengol Installation: ‘এখানে আসুন’, সেঙ্গল প্রতিষ্ঠার সময় দূরে দাঁড়িয়ে থাকা স্পিকারকে কাছে ডাকলেন মোদী

নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে আমন্ত্রণ না করার অভিযোগ তুলে বয়কটের ডাক দিয়েছিল বিরোধী দলগুলি। প্রশ্ন উঠেছিল, কেন সংসদ ভবনের উদ্বোধন রাষ্ট্রপতির বদলে প্রধানমন্ত্রী করবেন? এই নিয়ে শাসক-বিরোধী রাজনৈতিক তরজা দেখা গিয়েছে বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে। আর এরই মাঝে আজ দেখা গেল ‘অন্য এক চিত্র’। সেঙ্গল প্রতিষ্ঠার সময় দূরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকসভা স্পিকারকে পাশে ডেকে নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওম বিড়লাকে পাশে নিয়েই লোকসভার স্পিকারের আসনের পাশে রাজদণ্ড প্রতিষ্ঠা করলেন নরেন্দ্র মোদী। অবশ্য আজ অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই ওম বিড়লা ছিলেন মোদীর পাশে। যজ্ঞের সময়ও মোদীর পাশেই বসেছিলেন তিনি। তবে সেঙ্গল প্রতিষ্ঠার মুহূর্তে তিনি মোদীর পাশে ছিলেন না। তবে মোদী তাঁকে পাশে ডেকে নিয়েই লোকসভায় স্থাপন করলেন ‘স্বাধীনতার প্রতীক’। যাতে বিরোধীরা আবার এই অভিযোগ না তুলতে পারেন, লোকসভার স্পিকারকে ‘সম্মান’ দেওয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, আজকে নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দেয় ১৯টি বিরোধী দল। কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেস, দ্রাবিড় মুন্নেত্র কাজগম (ডিএমকে), বামদলগুলি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি), জনতা দল-ইউনাইটেড (জেডিইউ), জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি), সমাজবাদী পার্টি, উদ্ধব ঠাকরের শিব সেনা যৌথভাবে এক বিবৃতি পেশ করে উদ্বোধন অনুষ্ঠান বয়কটের ঘোষণা করে। এরপর থেকেই এই নিয়ে জোর রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। এই আবহে অনুষ্ঠান চলাকালীন যে কোনও ঘটনাকে হাতিয়ার করেই যে বিরোধীরা ফের আক্রমণ শানাতে প্রস্তুত থাকবে, তা ভালো করেই জানা আছে বিজেপির। এই আবহে সেঙ্গল প্রতিষ্ঠার মুহূর্তে লোকসভার অধ্যক্ষকে পাশে ডেকে নেন মোদী।

উল্লেখ্য, এতদিন প্রয়াগরাজের জাদুঘরে রাখা ছিল এই সোনার রাজদণ্ড। বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছিল যে ‘স্বাধীনতার প্রতীক’ সেঙ্গলকে ‘যথাযথ সম্মান’ দেয়নি কংগ্রেস। জাদুঘরে ‘হাঁটার ছড়ি’ হিসেবে রাখা ছিল এই রাজদণ্ড। এদিকে কংগ্রেস দাবি করে, এই সোনার দণ্ড ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক নয়। এর কোনও প্রমাণ নেই। যার জবাবে গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুখ খোলেন। নাম না করেও বিরোধী কংগ্রেসকে তোপ দাগেন। আর আজ সেঙ্গল প্রতিষ্ঠার আগে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করেন এই রাজদণ্ডটিকে।

উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে যখন ভারত স্বাধীনতা লাভ করে, তখন স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে এই সেঙ্গল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহলরলাল নেহরুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন ভারতের শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন। আজ তামিল রীতি মেনে এই রাজদণ্ডটি নতুন সংসদভবনে প্রতিষ্ঠিত করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উল্লেখ্য, ‘সেঙ্গল’ শব্দটি তামিল শব্দ ‘সেম্মাই’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘ন্যায়’। এর আগে দক্ষিণের চোলা রাজবংশে এভাবে রাজদণ্ড প্রদান করে রাজ্যাভিষেক হত বা ক্ষমতা হস্তান্তর হত। লর্ড মাউন্টব্যাটেন যখন নেহরুকে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রকীক নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, তখন এই সেঙ্গল হস্তান্তরের কথা ওঠে। নেহরু এই নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন সি রাজাগোপালচারীকে। তখন এই তামিল ঐতিহ্যের কথা নেহরুকে জানিয়েছিলেন ‘রাজাজি’। সেই প্রথা মেনেই পরে ভারতের ক্ষমতার ভার ব্রিটিশদের থেকে নেহরুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন মাউন্টব্যাটেন। এই রাজদণ্ডটি তৈরি তৈরি করা হয়েছিল তামিলনাড়ুতেই। রাজাগোপালচারী এই সেঙ্গল তৈরির জন্য ‘তিরুভাদুথুরাই আথিনাম’ মঠের গুরুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। পরে ভুমিদি বঙ্গারু চেট্টার নামক এক জহুরিকে এই সেঙ্গল তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় মঠের তরফে। এই সেঙ্গলটি পাঁচ ফুট উঁচু। এর মাথায় আছে ন্যায়বিচারের প্রতীক তথা শিবের বাহন ‘নন্দী’।