খারাপ আবহাওয়ায় কমেছে ধানের ফলন, দাম বাড়ছে চালের, নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় কেন্দ্র

চালের দাম বাড়ছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে গমের দাম বৃদ্ধি নিয়েই সবাই চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু এবার চালেও বসছে মূল্যবৃদ্ধির থাবা। ভারতের জন্য এটি খুব কঠিন একটি পরিস্থিতি। কেন? কারণ চালই ভারতের সবচেয়ে বহুল প্রচলিত খাদ্যশস্য। দেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব অপরিসীম। তাছাড়া বিশ্বব্যাপী রফতানিতেও চাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে। আগের কয়েক মরসুমে খারাপ আবহাওয়ার জন্য দেশে চালের উত্পাদন আশানুরূপ হয়নি। আর সেই কারণেই বাড়ছে দাম। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন বর্ষার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আরও পড়ুন: Pakistan Inflation: মুদ্রাস্ফীতির হারের রেকর্ড ভাঙল পাকিস্তানে, ভারতের ১ টাকা সেদেশে কত জানেন?

দামে বদল

উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রকের মতে, গত ৩ জুন চালের গড় খুচরা মূল্য ছিল ৩৯.৩ টাকা প্রতি কেজি। এটি গত বছরের তুলনায় ৮.৫% বেশি!

অন্যদিকে, খুচরা গমের দামে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৬%। খাদ্যশস্য, ডাল এবং তৈলবীজ, ডাল সব মিলিয়েই, বর্তমানে খুচরা মূল্য বৃদ্ধি চালের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি। মাসিক পাইকারি মূল্য সূচকের তথ্যানুযায়ী, এপ্রিলে চালের দাম গত বছরের তুলনায় ৭.৭% বেশি। গমের ক্ষেত্রে এটি ছিল ৭.১%। একদিকে চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে গমের দাম অটল রয়েছে।

দাম বাড়ছে কেন?

গত খরিফ মরসুমে (জুন থেকে অক্টোবর, ২০২২) উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশে ধানের উৎপাদন স্বল্প বৃষ্টিপাতের কারণে প্রভাবিত হয়েছিল। এর ফলে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সরকার নন-বাসমতি চালের রফতানির উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। এর মধ্যে ২০% রফতানি শুল্ক এবং ভাঙ্গা চাল রফতানি উপর নিষেধাজ্ঞাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এত কিছুর পরেও ভারত ২০২৩ সালে ২২.৫ মিলিয়ন টন (mt) চাল বিদেশে রফতানি করেছে বলে অনুমান। এটি আগের বছরের তুলনায় সামান্য বেশি। ভারত বিশ্ব বাণিজ্যে চালের বৃহত্তম রপ্তানিকারক। বিশ্বজুড়ে মোট বাজারের ৪০%-ই ভারতের দখলে।

ভারতে চালের প্রভাব

প্রধান খাদ্য: ভাত ভারতীয় জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশের প্রধান খাদ্য। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারত এবং পূর্বের রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে ভাত খাদ্যাভাসের অন্যতম অংশ। এটি পুষ্টির প্রাথমিক উৎস হিসেবে কাজ করে। শক্তির চাহিদা মেটাতে সস্তায় প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে।

সাংস্কৃতিক তাৎপর্য: ভাত ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ধর্মীয় আচার, উত্সব এবং বিশেষ অনুষ্ঠানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ধান-চাল সমৃদ্ধি, উর্বরতা এবং পবিত্রতার প্রতীক।

কর্মসংস্থান এবং জীবিকা: ধান চাষ এবং ধান প্রক্রিয়াকরণ ও বন্টন খাতে লক্ষ লক্ষ কৃষক, শ্রমিক এবং ব্যবসায়ী জীবিকা নির্বাহ করেন। এটি গ্রামীণ জীবিকা এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।

খাদ্য নিরাপত্তা: ভাত উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার। দরিদ্র মানুষের সামর্থ্যের মধ্যেও। সরকারের পক্ষে চাল সংরক্ষণ ও বন্টন করাও সহজ। সেই কারণে ভারতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চাল গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগ যেমন পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (PDS) প্রায়ই সমাজের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অংশগুলির জন্য ভর্তুকিযুক্ত পণ্য হিসাবে চালকে অন্তর্ভুক্ত করে। আরও পড়ুন: মুদ্রাস্ফীতির কঠিন সময় সত্যি শেষ? এখনও অনিশ্চিত খাদ্যশস্যের দাম কমার সম্ভাবনা