কুলতলির মাটি খুঁড়ে উদ্ধার নিখোঁজ ব্যবসায়ীর ছেলের দেহ, গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত

টানা ২২ দিন পর ফলের বাগানের মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হল কুলতলির ইমারতি ব্যবসায়ীর ছেলের মৃতদেহ। গত ১৭ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন ব্যবসায়ী পুত্র বিজয়কৃষ্ণ কয়াল (৩৪)। এমনকী ৫০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে তাঁর বাড়িতে ফোন এসেছিল। আর তার পরে বৃহস্পতিবার জালাবেড়িয়া ২ নম্বর পঞ্চায়েতের পালের চক এলাকায় উদ্ধার হয় দেহটি। ওই ব্যবসায়ীর সম্পত্তি এবং টাকা হাতাতেই এই খুন বলে প্রাথমিক অনুমান তদন্তকারীদের। ‌গ্রামেরই বাগান থেকে পচাগলা দেহটি উদ্ধার করেছে কুলতলি থানার পুলিশ। এই ঘটনায় একজন যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের চোখে ওই যুবক মূল অভিযুক্ত।

এদিকে কুলতলি থানার জামতলার বাসিন্দা তথা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী শ্যামাপদ কয়াল। তাঁর বড় ছেলে বিজয়কৃষ্ণ কয়াল। মে মাসের ১৭ তারিখ সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন একটি পিঠ ব্যাগ নিয়ে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বিজয়কৃষ্ণ বাড়ির কাছে মোটরবাইক রেখে পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন। আর তারপর থেকেই কোনও খোঁজ মিলছিল না তাঁর। তবে এই খুনের পিছনে মৃত বিজয়কৃষ্ণ কয়ালের ভাই অজয় কয়ালের ভূমিকা আছে কি না সেটা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ কী তথ্য পেয়েছে?‌ বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‌এই ঘটনায় তন্ময় মণ্ডল বলে একজন যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার ফোন থেকেই মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল। তাকে জেরা করেই বিজয়কৃষ্ণের দেহের সন্ধান মেলে। কুলতলির জামতলা বাজারে বিজয়কৃষ্ণের বাবা শ্যামাপদ কয়ালের ইমারতি সামগ্রীর দোকান। ১৭ মে বিজয়কৃষ্ণ বাবার দোকানে গিয়েছিলেন। রাতে বাড়ি ফিরে কাউকে না জানিয়ে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তারপর থেকেই তাঁর খোঁজ মিলছিল না। তার মধ্যেই মুক্তিপণের ৫০ লক্ষ টাকার ফোন পান বাবা শ্যামাপদ। পুলিশকে জানালে ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ১৮ মে অপহরণের অভিযোগ দায়ের হয়।’‌

রহস্যের সমাধান কেমন করে?‌ ৮ জুন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জালাবেড়িয়া ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের পালেরচক গ্রামের যুবক তন্ময় মণ্ডল। তন্ময়কে জেরা করেই খুনের ঘটনার কিনারা করল পুলিশ। ধৃতকে নিয়ে কুলতলি থানার আইসি অর্ধেন্দু দে সরকারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী পালেরচক গ্রামের ফাঁকা বাগানের যায়। এই বাগানটি তন্ময়দের। তন্ময়ের বয়ান অনুযায়ী, খুনের পর বিজয়কৃষ্ণকে মাটির তলায় পুঁতে দিয়েছিল। সেখানে আসে ফরেনসিক দল এবং ম্যাজিস্ট্রেট। তাঁদের উপস্থিতিতেই মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় বিজয়কৃষ্ণের পচাগলা দেহ। বিজয়কৃষ্ণের দোকানে তন্ময়ের যাতায়াত ছিল। আজ, শুক্রবার বারুইপুর মহকুমা আদালতে তোলা হবে তন্ময়কে। এই তন্ময় পেশায় অটোচালক। বিজয়ের সম্পত্তির ব্যাপারেও সব জানত তন্ময়। তাই সম্ভবত ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে বিজয়কে। সূত্রের খবর, বিজয়কৃষ্ণর সঙ্গে তাঁর ভাই অজয়ের বনিবনা ছিল না। তিনি আলাদা থাকেন। বিজয় সেদিনই কাউকে না জানিয়ে অজয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এই তথ্যই ভাবাচ্ছে পুলিশকে।