আরও বিপাকে ব্রিজভূষণ, প্রমাণ চেয়ে পাঁচ দেশকে চিঠি পাঠাল দিল্লি পুলিস/ Delhi Police seeks CCTV footage from 5 nations after FIR against Wrestling Federation of India chief Brij Bhushan Sharan Singh

জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: হাতে আর মাত্র দু’দিন। এই সময়ের মধ্যেই আদালতে চার্জশিট জমা দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের (Brij Bhushan Sharan Singh) বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করতে পাঁচটি দেশের কুস্তি ফেডারেশনকে চিঠি দিল দিল্লি পুলিস (Delhi Police)। দেশের প্রথমসারির কুস্তিগীরদের অভিযোগ অনুযায়ী, পাঁচটি দেশে তাঁদের হেনস্তা করেছিলেন ব্রিজভূষণ। সেই দেশগুলির ফেডারেশনের কাছ থেকে সিসিটিভি ফুটেজ চেয়েছে দিল্লি পুলিস। এর আগে ১৫ জুনের মধ্যে তদন্ত শেষ হবে বলে সাক্ষী মালিক (Sakshi Malik)-ভিনেশ ফোগাট (Vinesh Phogat)-বজরং পুনিয়া (Bajrang Punia)-সহ বাকি কুস্তিগীরদের আশ্বাস দিয়েছিল কেন্দ্র সরকার। 

গত ২১ এপ্রিল এফআইআর দায়ের হয় ফেডারেশনের বর্তমান সভাপতি তথা বিজেপি (BJP) সাংসদ ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে। দিল্লি পুলিসের একটি সূত্রের দাবি, এফআইআর দায়ের হওয়ার সাত দিনের মধ্যেই পাঁচটি দেশের কুস্তি ফেডারেশনকে নোটিস পাঠানো হয়েছিল। ইন্দোনেশিয়া, বুলগেরিয়া, কিরঘিজস্তান, মঙ্গোলিয়া ও কাজাখস্তান- এই পাঁচ দেশের ফেডারেশনকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। এই দেশগুলিতে খেলতে গিয়েই হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ ছিল কুস্তিগীরদের। দিল্লি পুলিসের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ইতমধ্যেই বেশ কয়েকটি দেশের কুস্তি সংস্থা তাঁদের নোটিসের জবাব দিয়েছে।  

কুস্তিগীরদের হেনস্তা মামলায় ইতিমধ্যেই ২০০ জনের বয়ান রেকর্ড করেছে দিল্লি পুলিস। অভিযোগকারী থেকে শুরু করে কোচ, রেফারি, কুস্তি ফেডারেশনের কর্তা- সেই তালিকায় রয়েছেন সকলেই। পুলিসের কাছে হেনস্তার অডিয়ো এবং ভিডিয়ো প্রমাণ জমা দিয়েছেন অভিযোগকারী চার কুস্তিগীর।  

এদিকে জানা গিয়েছিল দেশের প্রথমসারির কুস্তিগীরদের চাপে নির্বাচন আয়োজন করা হবে। শেষ পর্যন্ত জাতীয় কুস্তি ফেডারেশনের (Wrestling Federation Of India) নির্বাচনের দিন ঘোষণা হল। আগামী ৪ জুলাই আয়োজিত হবে বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচন। সাক্ষী মালিক-ভিনেশ ফোগাটদের আশা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ায় হবে নির্বাচন। সোমবার অর্থাৎ ১২ জুন ভারতীয় অলিম্পিক্স সংস্থার (Indian Olympic Association) তরফে জানানো হয়েছিল, ফেডারেশনের এক্সিকিউটিভ কমিটির নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীর হাই কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মহেশ মিত্তল কুমারকে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছিল, সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে একজন অ্যাসিসট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার এবং অন্য স্টাফদেরও নিয়োগ করা যেতে পারে। 

আরও পড়ুন: Wrestlers Protest: ৪ জুলাই কুস্তি ফেডারশনের মেগা নির্বাচন, কোন বিশেষ দাবি জানালেন সাক্ষী-ভিনেশরা?

আরও পড়ুন: Pep Guardiola: ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে বিদায় জানিয়ে কোথায় চললেন পেপ?

যৌন হেনস্তার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্রিজভূষণের গ্রেফতারির দাবিতে গত কয়েক মাস ধরেই সরব কুস্তিগীররা। এমন পরিস্থিতিতে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাইছিলেন সাক্ষী মালিক-ভিনেশ ফোগাট-বজরং পুনিয়ারা। পাশাপাশি সভাপতির পদে একজন মহিলাকে চাইছেন মহিলা কুস্তিগীররা। তাঁদের দাবি, সেক্ষেত্রে যৌন হেনস্তার মতো ঘটনা যেমন এড়ানো সম্ভব, তেমনই যাবতীয় সমস্যা আরও ভালোভাবে ব্যক্ত করতে পারবেন তাঁরা। তাই এমন প্রেক্ষাপটে এবারের নির্বাচনকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে দেশের ক্রীড়া মহল। 

দেশের প্রথমসারির কুস্তিগীরদের সমস্যা মেটাতে আগেই আসরে নেমেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। আর এরপর এই সমস্যার সমাধান করতে উদ্যোগী হন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী।  প্রতিবাদী কুস্তিগীরদের সঙ্গে আলোচনার জন্য টুইট করেছিলেন অনুরাগ। আর এরপরেই তাঁর সঙ্গে দেখা করে যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত ব্রিজভূষণের গ্রেফতার-সহ আরও চার দাবি নিয়ে সরব হয়েছিলেন সাক্ষী মালিক-ভিনেশ ফোগাট-বজরং পুনিয়ারা। 

অনুরাগ ঠাকুরের কাছে মোট পাঁচটি দাবি জানিয়েছিলেন কুস্তিগীররা: 

১) অভিযুক্ত ব্রিজভূষণকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। জাতীয় কুস্তি সংস্থায় অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে।

২) ভবিষ্যতে  ব্রিজভূষণ এবং তাঁর পরিবারের কোনও সদস্য জাতীয় কুস্তি সংস্থার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবেন না।

৩) নতুন সংসদ ভবনের সামনে প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় কুস্তিগীরদের বিরুদ্ধে থানায় যে অভিযোগ জানানো হয়েছে সেগুলো খারিজ করতে হবে।

৪) জাতীয় কুস্তি সংস্থায় অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে।

৫) জাতীয় কুস্তি সংস্থার প্রধানের পদে অভিজ্ঞ মহিলাকে নিয়োগ করতে হবে।

বুধবার অর্থাৎ ৭ জুন সকালে অনুরাগ ঠাকুরের বাড়িতে পৌঁছে যান কুস্তিগীররা। সঙ্গে কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েতও। রোদ-ঝড়-জল উপেক্ষা করে, পুলিসের হাতে মারধর খাওয়ার পরও আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। কখনও বিজেপির মহিলা সাংসদদের চিঠি লিখে পাশে দাঁড়ানোর আরজি জানিয়েছেন তো কখনও কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ব্রিজভূষণের গ্রেফতারির সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তাঁরা। আবার গত শনিবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গেও দেখা করেন আন্তর্জাতিক স্তরে পদকজয়ী কুস্তিগীররা। কিন্তু সেখানেও অধরা থেকে যায় রফাসূত্র। এবার অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গে আলোচনার পর আন্দোলন স্থগিত রাখেন কুস্তিগীররা। 

এর আগে দিল্লি পুলিসের এসআইটি-র তদন্তকারী দল ব্রিজভূষণের পৈতৃক বাসভবন বিষ্ণোহরপুরে পৌঁছে গিয়েছিল। সেখানে ১২ জনের বক্তব্য রেকর্ড করেছে। এর মধ্যে ছিলেন বিতর্কিত সাংসদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন, সহযোগী ও নিরাপত্তাকর্মীরা। SIT এর আগে ১২৫ জন সাক্ষীর বয়ান রেকর্ড করে। ফলে এরপর কুস্তিগীরদের যৌন হেনস্তা করার ঘটনায় বয়ান নেওয়া ১৩৭-এ পৌঁছল। গোন্ডা থেকে কয়েকজনের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছে তদন্ত দল। যদিও দিল্লি পুলিস প্রথমে জানিয়েছিল যে, ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পায়নি তারা। তবে এখন পরিস্থিতির অনেক বদল ঘটেছে। এমন প্রেক্ষাপটে কেমন ফলাফল আসে, সেটাই দেখার। 

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)