ম্যালেরিয়া পরীক্ষার জন্য বোতল বোতল রক্ত টানা হচ্ছে! গুজবে আতঙ্কিত শবর গ্রাম

বোতল বোতল রক্ত নেওয়া হবে শরীর থেকে, তাই গ্রাম শূন্য করে মানুষ চলে গেিয়েছেন জঙ্গলে। হ্যাঁ আপাত ভাবে অস্বাভাবিক কাল্পনিক কোনও গল্পকথা মনে হলেও এমন ঘটনাই ঘটল পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ানের এক শবর গ্রামে। কিন্তু ঘটনাটা ঠিক কী? দিন কয়েক আগে বান্দোয়ানের বুড়িঝোর গ্রামের শবর সম্প্রদায়ের এক যুবতী লুলি শবরের ম্যালেরিয়া ধরা পড়েছিল। একারণের এলাকার স্বাস্থ্যকর্মীরা মঙ্গলবার গ্রামের অন্যান্য ব্যক্তিদের রক্ত পরীক্ষা করতে যান। আর কারও ম্যালেরিয়া ধরা পড়েছে কি না তা জানতেই এই পরীক্ষার ব্যবস্থা। কিন্তু একারণেই গ্রাম ছেড়ে পালালেন গ্রামের শবর সম্প্রদায়ের মানুষ। যারাও গ্রামে ছিকেন তারাও অস্বীকার করেন রক্ত পরীক্ষা করাতে। 

আসলে এসবই ঘটে গুজবকে কেন্দ্র করে। ম্যালেরিয়ার রক্ত পরীক্ষার জন্য নাকি এক বোতল রক্ত নেওয়া হবে প্রত্যেকের শরীর থেকে। এহেন গুজবেই আতঙ্ক ছড়ায় গ্রাম জুড়ে। অনগ্রসর শবর সম্প্রদারের মানুষেরা স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন না হওয়ায় বিশ্বাস করেন এই রটনা। এতেই বিপত্তির সূত্রপাত। 

(আরো পড়ুন: অবৈধভাবে স্কুলে চাকরি পেয়েছেন বাংলাদেশি নাগরিক! বেতন বন্ধের নির্দেশ)

পরে অবশ্য শবর কল্যান সমিতির সদস্যরা জঙ্গলে গিয়ে কথা বলেন গ্রামবাসীদের সঙ্গে। মিথ্যা গুজব বুঝতে পেরে ম্যালেরিয়ার রক্ত পরীক্ষা করতেও রাজি হন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে বান্দোয়ানের ব্লক মেডিক্যাল অফিসার কাজিরাম মুর্মু জানান, ম্যালেরিয়া পরীক্ষার জন্য এক ফোঁটা রক্তই যথেষ্ট। কিন্তু বুড়িঝোর গ্রামের বাসিন্দাদের কেউ ভুল বুঝিয়েছিল যে, এক বোতল করে রক্ত নেওয়া হবে। সেই ভয়েই তাঁরা গ্রাম ছেড়ে জঙ্গলে লুকোন। তিনি আরও বলেন, ব্লক প্রশাসন ও শবর কল্যাণ সমিতির সহযোগিতায় এরপর ১৭ জনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে একজনের রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু পাওয়া গেছে। 

(আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বড় সিদ্ধান্ত! অপ্রয়োজনীয় সিজারেই কি প্রসূতি মৃত্যুর হার বাড়ছে? রাজ্যের হাসপাতালে এবার অডিট)

ঐতিহাসিক ভাবেই অন্যান্য বহু আদিবাসি সম্প্রদায়ের মত শবররা সমাজের মূল ধারা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়। পুরুলিয়া জেলা জুড়ে প্রায় ১২ হাজার শবর বসবাস করেন, যাদের মধ্যে স্বাস্থ্য বা শিক্ষা বিষয়ক সচেতনতা নেই বললেই চলে। মঙ্গলবারের ঘটনা এই পশ্চাদপদতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। জনজাতি সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য ফি বছর নানান প্রকল্পের ঘোষনা হয় ঠিকই, কিন্তু শবরদের বাস্তব অবস্থা চোখে আঙ্গুল দিয়ে আরেক বার দেখিয়ে দিল, সভ্যতার আলো থেকে বহু দূরে শবর গ্রামগুলি।