Athlete Dutee Chand stood beside Suchetana Bhattacharjee daughter of Ex chief minister Buddhadeb Bhattacharjee

সব্যসাচী বাগচী 

তিনি জানেন আগামী দিনে অনেক আইনি জটিলতার হার্ডল পার করতে হবে। তিনি জানেন সমাজের নাক উঁচু-সবজান্তারা চায়ের দোকানে কিংবা ড্রইংরুমে ‘ট্রায়াল’ বসিয়ে দেবেন। তবুও তিনি থেমে যেতে চান না। তিনি পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী (Ex Chief Minister Of West Bengal) বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের (Buddhadeb Bhattacharya) কন্যা সুচেতনা ভট্টাচার্য (Suchetana Bhattacharya)। লিঙ্গ পরিবর্তন (Sex Change) করে ‘সুচেতন’ হতে চান। সেই মর্মে আইনি পরামর্শও নিতে শুরু করেছেন তিনি। প্রয়োজনীয় শংসাপত্রের জন্য যোগাযোগ করেছেন মনোবিদের সঙ্গেও। এমন প্রেক্ষাপটে তাঁর পাশে দাঁড়ালেন আর দ্যুতি চাঁদ (Dutee Chand)। যিনি গত ১০-১২ বছর ধরে সমপ্রেমকে (Same Sex Relationship) সম্মান দেওয়ার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। জি ২৪ ঘণ্টার কাছে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পাশাপাশি সুচেতনাকে কুর্নিশ জানালেন জাকার্তা এশিয়ান গেমসে (Asian Games 2018) ১০০ ও ২০০ মিটার বিভাগে রুপোজয়ী অ্যাথলিট। 

সুচেতনার ব্যাপারটা টেলিফোনের মাধ্যমে বোঝাতেই দ্যুতি বলেন, “সমপ্রেমী বিবাহকে এবার স্বীকৃতি দেওয়ার সময় চলে এসেছে। আইনের সবদিক দেখে আমাদের সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। সমাজের বাকিদের মতো আমাদেরও হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুসারে বিয়ে করার স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। আমরা কেউ লিভ ইন করতে চাই না। বিয়ে করতে চাই। বাকিদের মতো সংসার করতে চাই। আমিও চাই আমার এবং পার্টনারের বিয়ের শংসাপত্র থাকুক। যা জীবনে খুবই জরুরি।” এখানেই থেমে না থেকে দ্যুতি যোগ করেন, “মহিলা থেকে পুরুষ হওয়ার অন্যতম কারণ হল, আমিও বাবা হতে চাই। আমার পার্টনার মোনালিসাও মা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। তাই আমাদের দু’জনের চোখ এখন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দিকে রয়েছে। আমাদের মতো সুচেতনাকেও হয়তো অনেকটা লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। তবে হেরে গেলে চলবে না।”    

কয়েক দিন আগে একটি ‘এলজিবিটিকিউ’ কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলেন সুচেতনা। সেই কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী একজন ফেসবুকে সুচেতনা সম্পর্কে একটি লম্বা পোস্ট করেছেন। ‘গৌরব মাসের গল্প’ শিরোনামের সেই পোস্ট শুরুই হয়েছে এটা লিখে যে, ‘সুচেতনা আজ থেকে সুচেতন’। সেই পোস্টেই জানানো হয়েছে, সুচেতনার বাবা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ। মা মীরা ভট্টাচার্যের পেসমেকার বসেছে।

আরও পড়ুন: Suchetana Bhattacharya: বুদ্ধ ঘরে বিপ্লব, লিঙ্গ পরিবর্তনে সুচেতনা এখন ‘সুচেতন’

আরও পড়ুন: Suchetana Bhattacharya: বুদ্ধকন্যার ‘সুচেতন’ লড়াইয়ের পাশেই মদন-দেবাংশু-সৃজন; ধরি মাছ, না ছুঁই পানি বিজেপির!

এহেন সুচেতনাকে সাপোর্ট করে দ্যুতির প্রতিক্রিয়া, “ওঁর পিতৃ-মাতৃ পরিচয় বা পারিবারিক পরিচয়টা বড় কথা নয়। আমি যে ভারতের অন্যতম সেরা অ্যাথলিট, সেটাও কিন্তু এখানে বড় পরিচয় নয়। সবচেয়ে বড় পরিচয় হল আমরা সবাই মানুষ। তাই গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন দেশে আমাদের সবার বেঁচে থাকার সমান অধিকার আছে। আর সেইজন্য আমি অনেক ঝড় সহ্য করে, খেলোয়াড় হিসেবে নিজের কেরিয়ারকে বাজি রেখে লড়াই করে যাচ্ছি। এলজিবিটিকিউ+ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আছি। শুনে খুশি হলাম যে, সুচেতনাও খুব ‘সুচেতন’-ভাবে এই আন্দোলনে স্বেচ্ছায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন।” 

কয়েক বছর আগে সমাজের বাধা ভেঙে অ্যাথলিট দ্যুতি জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি সমপ্রেমী। যদিও এই স্বীকারোক্তির জন্য তাঁকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল। তাঁর দিদি সরস্বতী তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। বাধ্য হয়ে পার্টনার মোনালিসার সঙ্গে ভুবনেশ্বরে চলে যান তিনি। তবে সেখানেই ঘটনার ইতি ঘটেনি। দ্যুতি অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর দিদি নাকি তাঁর মাম-বাবা এবং ছোট বোনেদেরও বাড়ি থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন। তবে সমস্ত ঝড়ঝঞ্ঝার মধ্যেও ভালোবাসার হাত ছাড়েননি তিনি। দ্যুতি মনে করছেন বর্তমানে সমপ্রেম বিবাহ নিয়ে সাধারণ মানুষের ধারণা দিনে দিনে বদলাচ্ছে। 

দ্যুতি ফের বললেন, “একজন ট্রান্সম্যান হিসেবে প্রতি দিন আমায় যে সামাজিক হেনস্থা হতে হয়, সেটা আমি বন্ধ করতে চাই। আমি প্রাপ্তবয়স্ক। আমার বয়স এখন ২৭। য়ার তাই আমি আমার জীবন সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারি। এই সিদ্ধান্তও সেই ভাবেই নিচ্ছি। মানসিক ভাবে নিজেকে পুরুষ বলে মনে করি। আমি এখন সেটা শারীরিক ভাবেও হতে চাই।” 

সুচেতনা কিংবা দ্যুতি, নাম যাই হোক। তাঁদের এমন সিদ্ধান্ত যে সাহসী সেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তাই এমন লড়াকুদের হাত ধরে এলজিবিটিকিউ+ আন্দোলন অনেক গতি পাবে। দ্যুতি কয়েক বছর আগে পার্টনার হিসেবে পেয়েছিলেন মোনালিসাকে। ঠিক তেমনই সুচেতনা থেকে ‘সুচেতন’ তাঁর জীবনসঙ্গিনী পেয়েছেন। নাম সুচন্দা। সুচেতন একটি অডিয়ো ভিস্যুয়ালে ফ্রি ল্যান্সিংয়ের কাজ করে আর সুচন্দা একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। ঠিক তেমনই দ্যুতির সঙ্গী মোনালিসাও চাকুরিজীবী। দ্যুতিদের মতো অগনিত মানুষ অনেক আগে থেকে সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের শর্তে বাঁচতে শিখে গিয়েছেন। সুচেতনা থেকে ‘সুচেতন’ হয়ে ওঠা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কন্যাও সেই লড়াইয়ে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। এখন আর পিছনে ফেরার অবকাশ নেই। সেটা বুঝেও গিয়েছেন ৪১ বছরের স্বাধীনচেতা মানুষটি। 

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)