প্রতিশ্রুতিই সার, মিনিটে ১১ টি ফুটবল মাঠের সমান অরণ্য মুছে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে

বছর বছর আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে অরণ্যচ্ছেদনের হার। বিশ্বজুড়ে রাষ্ট্রনেতা কিংবা বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানি সবুজ রক্ষার জন্য নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও সমীক্ষা বলছে অন্য কথা। ক্রান্তীয় অঞ্চলগুলিতে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ১০ শতাংশ বেশি চিরসবুজ বৃষ্টি অরণ্য কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। রাশিবিজ্ঞানীরা হিসেব কষে দেখাচ্ছেন, প্রতি মিনিটে ১১ টি ফুটবল মাঠের সমান অরণ্য মুছে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে। মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি বিশ্ব রিপোর্টে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

২০২২ সালের তথ্য বলছে, ৪.১ মিলিয়ন হেক্টর অরণ্য কাটা পড়েছে মানব সভ্যতার অগ্রগতির চাকায়। ৪,১ মিলিয়ন অর্থাৎ স্যুইজারল্যান্ডের মোট জমির সমান সবুজ গত এক বছরে মুছে গেছে পৃথিবী থেকে।  

 

মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট যৌথভাবে এক সমীক্ষা চালায়। এই সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ব্রাজিল, বলিভিয়া এবং ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোতে সবচেয়ে বেশি বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। সামান্য আশা জাগিয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। সাম্প্রতিক কালে এই দুটি দেশে বনাঞ্চল হ্রাসের প্রবণতা কিছুটা কমেছে। বিশ্বব্যাপী, মূলত ক্রান্তীয় অঞ্চলগুলিতে কৃষিজমির সম্প্রসারণ, কাঠ কাটা এবং খনি নির্মাণের জন্য অন্য অঞ্চলের তুলনায় দ্রুত বনাঞ্চল কমছে।  

 

আমরা কমবেশি সকলেই জানি বিশ্বজুড়ে বাতাসে অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য গ্যাসের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই চিরসবুজ বৃষ্টি অরণ্যগুলি। এছাড়াও জীববৈচিত্র্যের বিশাল ভাণ্ডার এই অরণ্য। কার্বন ডাই অক্সাইডসহ গ্রিনহাউস গ্যাসগুলিকে শোষণ করে পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে এই অরণ্য। ক্রান্তীয় অঞ্চলের স্থানীয় জলবায়ুর ক্ষেত্রে এই অরণ্য গুরুত্বপূর্ন নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে। ফলে প্রতি বছর এই অরণ্য নিধনে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রাণ-প্রকৃতি, তেমনই অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকেই এগিয়ে যাবে মানব সমাজ। এ যেন অনেকটা কালিদাসের মত মগডালে বসে ডাল কাটার মতই।

 

এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ওয়াশিংটনের একটি সংস্থা ডব্লিউআরআই-এর পরিবেশ বিশ্লেষক রড টেলর বলেন, ‘আমরা কি ২০৩০ সালের মধ্যে বনাঞ্চল ধ্বংস বন্ধ করতে পারব? এককথায় এর উত্তর অবশ্যই ‘না’।’ সত্যিই বহু স্তরে একাধিক আলোচনার পরে পরিবেশ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা বাস্তবে রুপায়িত হয়নি। ২০২১ সালে গ্লাসগোতে জাতিসংঘের COP ২৬ সম্মেলনে বিশ্বের ১৪০ টিরও বেশি দেশ প্রতিশ্রুতিবন্ধ হয় ২০৩০ সালের মধ্যে বনাঞ্চল রক্ষা, ভূমিক্ষয় রোধ ইত্যাদি বিষয়ে সদর্থক ভূমিকা নেবে তারা। বাস্তব বলছে অন্য কথা। ক্রান্তীয় অঞ্চল সহ সর্বত্র অরণ্য নিধনের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে। কোনও অঞ্চলে প্রবল খরা, কোথাও বা অত্যাধিত বৃষ্টির ফলে বিপদে পড়ছেন মানুষ। আজকের সময়ে বনাঞ্চল রক্ষা না করা গেলে কার্যত অসম্ভব পরিবেশ সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া।