বিগত ৯ বছর ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মাত্র একবারই সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তবে সেবারও খুব একটা কিছু তিনি বলেননি। এই আবহে বিরোধীরা তাঁকে ‘মুখচোরা’ আখ্যা দিয়ে থাকেন। তবে সেই মোদী বিগত কয়েক মাসে একাধিক বিদেশি সংবাদপত্রকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া ও মার্কিন সফরের আগে সেদেশের নাম করা সংবাদপত্রকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন মোদী। আর এবার ফ্রান্স সফরের আগে সেদেশের প্রথম অর্থনৈতিক সংবাদপত্র ‘লে একোস’-কে সাক্ষাৎকার দিলেন মোদী। এবং সেই সাক্ষাৎকারে মোদী বলেন, ‘বিশ্বমঞ্চে ভারত নিজের ন্যায্য স্থান ফিরে পাচ্ছে’।
ফরাসি সংবাদপত্রের মুখোমুখি হয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আরও বক্তব্য, ‘গ্লোবাল সাউথ (আফ্রিকা, এশিয়া, লাতিন আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান, প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলি) দীর্ঘদিন ধরেই তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।’ পাশাপাশি মোদীর প্রশ্ন, ‘রাষ্ট্রসংঘ কীভাবে নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের হয়ে কথা বলাতে পারে? বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ এবং বৃহত্তম গণতন্ত্রই সেই পরিষদের স্থায়ী সদস্য নয়।’
এদিকে সাক্ষাৎকারে ‘পশ্চিমা মূল্যবোধের সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়ে সতর্কতা প্রকাশ করেছেন মোদী। এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের প্রতিটি কোণার দর্শন ও সংস্কৃতির কথা বিবেচনা করতে হবে। পুরনো ধারণা ত্যাগ না করলে পৃথিবী কখনই দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে পারবে না। পৃথিবী একটাই। কিন্তু এখানে অনেক দর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গি আছে।’ এদিকে গোটা বিশ্বে ভারতীয় সিনেমা ও সঙ্গীতের জনপ্রিয়তা, নতুন করে আয়ুর্বেদ ওষুধ ও যোগের প্রতি মানুষের আগ্রহের কথা তুলে ধরে নিজের যুক্তি বোঝান মোদী।
বর্তমান ভারত প্রসঙ্গে মোদী বলেন, ‘ভারত হাজার বছরের পুরনো একটি সমৃদ্ধ সভ্যতা। আজ ভারত বিশ্বের সবচেয়ে তরুণ জাতি। ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পদ হল আমাদের যুবসমাজ। বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশে বার্ধক্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তাদের জনসংখ্যা সংকুচিত হচ্ছে। এমন সময়ে ভারতের তরুণ এবং দক্ষ কর্মশক্তি সারা বিশ্বের জন্য একটি সম্পদ হয়ে উঠবে। আগামী কয়েক দশক ধরে ভারতীয়রা এই কাজ করবেন। এই তরুণ কর্মশক্তি খোলামেলা মনের। তাঁদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রয়েছে। প্রযুক্তিকে গ্রহণ করতে তারা আগ্রহী। পরিবর্তিত বিশ্বের সাথে খাপ খাইয়ে নিতেও তারা প্রস্তুত।’ এদিকে মোদী দাবি করেন, আগামী ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করছে তাঁর সরকার।