Chandrayaan 3 Mission Timeline: ২০০৩-র ১৫ অগস্ট শুরু স্বপ্ন, সাফল্য-কান্না পেরিয়ে কীভাবে হচ্ছে মিশন চন্দ্রযান-৩?

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। তারপরই ইতিহাস তৈরির লক্ষ্যে চাঁদে পাড়ি দেবে চন্দ্রযান-৩। শুক্রবার দুপুর ২টো ৩৫ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে ভারতের তৃতীয় চন্দ্রযানের যাত্রা শুরু হবে। চার বছর আগে একেবারে শেষমুহূর্তে এসে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেলেও এবার ইতিহাস তৈরির বিষয়ে আশাবাদী ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরো (ইন্ডিয়ান স্পেস অ্যান্ড রিসার্চ অর্গানাইজেশন)। আশায় বুক বাঁধছেন কোটি-কোটি দেশবাসীও। যাঁরা ২০০৩ সালের ১৫ অগস্ট থেকে সেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। প্রথম চন্দ্রযানের সাফল্যের সাক্ষী ছিলেন। দ্বিতীয় চন্দ্রযান মিশনে মাত্র ২.১ কিলোমিটারের জন্য ইতিহাস অধরা থেকে গিয়েছিল। আর তৃতীয় চন্দ্রযান মিশনের আগে দেখে নিন যে কীভাবে ভারতের চাঁদে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন এগিয়েছে –

মিশন ‘চন্দ্রযান’-র ঘোষণা

২০০৩ সালের ১৫ অগস্ট লালকেল্লা থেকে ‘চন্দ্রযান’ মিশনের স্বপ্নের বীজ বুনেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা দিবসে সেই ঘোষণা করা হয়েছিল। সেইমতো কঠোর পরিশ্রম শুরু করেছিলেন বিজ্ঞানীরা।

(Chandrayaan 3 Launch Live Updates: চলছে শেষমুহূর্তের কাউন্টডাউন, চন্দ্রযান ৩-র উৎক্ষেপণের লাইভ আপডেট দেখুন এখানে)

মিশন চন্দ্রযান-১

সেই পরিশ্রমের প্রথম সাফল্য এসেছিল ২০০৮ সালের ২২ অক্টোবরে। সেদিন ইসরোর অত্যন্ত ভরসাযোগ্য পিএসএলভি-সি১১ রকেটের উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। ওই রকেট তৈরি করেছিল তিরুবনন্তপুরমের বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টার। চন্দ্রযান-১ মিশনের অধিকর্তা হিসেবে সেই প্রজেক্টের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিজ্ঞানী মাইলস্বামী আন্নাদুরাই।

ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, পিএসএলভির উন্নততর রকেট হল পিএসএলভি-১১। যে রকেটের ওজন ছিল ৩২০ টন। আরও বেশি ওজন বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রকেটে আরও বড় মোটর ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই রকেটে ১১টি বৈজ্ঞানিক যন্ত্র ছিল। যা তৈরি করেছিল ভারত, আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি, সুইডেন এবং বুলগেরিয়া।

চাঁদের ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার উঁচুতে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহকে প্রদক্ষিণ করছিল। চাঁদের রাসায়নিক অবস্থা কীরকম, কী কী খনিজ আছে, সেই সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিল। যাবতীয় লক্ষ্যপূরণ হয়েছিল চন্দ্রযান-১ মিশনের।

তারইমধ্যে ২০০৯ সালের মে’তে কক্ষপথে উচ্চতা বাড়িয়ে ২০০ কিমি করা হয়েছিল। চাঁদের চারপাশে ৩,৪০০ বারের বেশি চক্কর কেটেছিল মহাকাশযান। যে সংখ্যাটা ইসরোর বিজ্ঞানীদের কল্পনারও বাইরে ছিল। ২০০৯ সালের ২৯ অগস্ট ভারতীয় মহাকাশ সংস্থার তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল যে মহাকাশযানের সঙ্গ সংযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।

মিশন চন্দ্রযান-২

প্রথম চন্দ্রযানের সাফল্যে উৎফুল্ল হয়ে দ্বিতীয় চন্দ্রযান মিশনে নেমে পড়েছিল ইসরো। এবার আরও জটিল মিশনের পথে হেঁটেছিল ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা। ছিল ‘অরবিটার’, ‘ল্যান্ডার’ বিক্রম এবং ‘রোভার’ প্রজ্ঞা। ওই মিশনের মাধ্যমে চাঁদের অনাবিষ্কৃত দক্ষিণ মেরুতে পা রাখার লক্ষ্য নিয়েছিল ইসরো।

২০১৯ সালের ১১ জুলাই চন্দ্রযান ২-র উৎক্ষেপণ হয়েছিল। তারপর ২০ অগস্ট চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেছিল। প্রতিটি পদক্ষেপ একেবারে নিখুঁতভাবে ফেলছিল চন্দ্রযান-২। বিজ্ঞানীরা যেমন পরিকল্পনা করেছিলেন, সেইমতো চাঁদের মাটিতে অবতরণের জন্য অরবিটার থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল ‘বিক্রম’। চাঁদকে প্রদক্ষিণের পরে পরিকল্পনা মতোই ল্যান্ডার নামতে শুরু করেছিল। যত সময় যাচ্ছিল, তত উন্মাদনা ও টেনশন বাড়ছিল। চাঁদের মাটি থেকে ২.১ কিমি দূর পর্যন্ত একেবারে ঠিকভাব সব এগোচ্ছিল।

কিন্তু চাঁদের মাটির ঢিলছোড়া দূরত্বে এসে ‘বিক্রম’-র সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরোর। চাঁদের মাটিতে ‘সফট ল্যান্ডিং’-এ ব্যর্থ হয়েছিল। ভেঙে পড়েছিলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন ইসরোর তৎকালীন প্রধান কে শিবান। তাঁকে সান্ত্বনা দিতে দেখা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। যিনি সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে ইসরোর সদর দফতরে হাজির ছিলেন।

মিশন চন্দ্রযান-৩

শুক্রবার (১৪ জুলাই) তৃতীয় চন্দ্রযান যাত্র শুরু করতে চলেছে। ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, শুক্রবার দুপুর ২টো ৩৫ মিনিটে ‘ফ্যাটবয়’ তথা বাহুবলী এলভিএম৩-এম৪ রকেটের পিঠে চেপে চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দেবে চন্দ্রযান-৩। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২৩ অগস্ট বা ২৪ অগস্ট চাঁদের মাটিতে অবতরণ করতে পারে রোভার। আর সেই লক্ষ্যেই দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সেই স্বপ্নপূরণ হলে বিশ্বের মাত্র চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদের মাটিতে পা রাখবে ভারত (আমেরিকা, চিন এবং পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের পরে)।

আরও পড়ুন: Chandrayaan 2 vs Chandrayaan 3: ২০১৯-র কান্না ভোলাবে ২০২৩? চন্দ্রযান ২-র থেকে চন্দ্রযান ৩-তে কী কী পরিবর্তন হল?