গত অর্থবছরে, প্রতিটি পরবর্তী ত্রৈমাসিকে উইপ্রোর কর্মী সংযোজন দ্রুতগতিতে কমেছে। কোম্পানিটি প্রথম ত্রৈমাসিকে ১৫,০০০ এরও বেশি কর্মী নিযুক্ত করেছিল, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সংখ্যাটা ছিল ৬০৫। কিন্তু, তৃতীয় এবং চতুর্থ ত্রৈমাসিকে যথাক্রমে ৪৩৫ এবং ১৮৩৮ জন কর্মচারী ছাঁটাই করে সংস্থাটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়োগ পুঁজিবাদী অর্থনীতির চাহিদার একটি সূচক। চাহিদা কমে যাওয়ায় কোম্পানি জুড়ে নিয়োগের সংখ্যাও কমতে থাকাই স্বাভাবিক প্রবণতা।
গত ত্রৈমাসিকে, উইপ্রোর চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার সৌরভ গোভিল মানিকন্ট্রোলকে বলেছিলেন যে এটি সমস্ত কর্মী সংখ্যা এই হিসেবে ধরা নেই। কারণ একটা বড় অংশের প্রশিক্ষণরত কর্মীদের সংখ্যা মূল কর্মীবাহিনী থেকে আলাদা ভাবে দেখানো হয়। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উইপ্রোর একটি বড় সংখ্যক প্রশিক্ষণরত কর্মী রয়েছে৷ অর্থ বর্ষ ২০২২-এ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অনেকেই নিযুক্ত হননি, অপেক্ষায় রয়েছেন নিয়োগের জন্য৷ কোম্পানি জানিয়েছে তারা আগের প্রতিশ্রুতিগুলি সবকটিই রক্ষা করবে, কিন্তু কোন তারিখে এখনও জানানো হয়নি।
উইপ্রো সম্প্রতি রাষ্ট্র-চালিত এন্টারপ্রাইজ (ISRE) সেক্টরের সাথে ভারতীয় ব্যবসাকে তার বিস্তৃত IT পরিষেবা সেগমেন্টের সাথে একীভূত করেছে, যার ফলে সেই সেগমেন্টের জন্য মোট সংখ্যাও যোগ করা হচ্ছে। গত ত্রৈমাসিকে ২,৫৬,৯২১ জন কর্মী উইপ্রোতে কর্মরত, এমন হিসেব দেখা গেলেও ISRE ব্যবসার একীকরণের জন্য এখন ২,৫৮,৫৭০ জন কর্মী কর্মরত বলে সংশোধনী পরিসংখ্যান সামনে এসেছে।
উইপ্রো প্রথম কোয়ার্টারে কোনও ফ্রেশার্সকেই কাজে নামায়নি, চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার সৌরভ গোভিল বলেছেন, তারা ব্যবসার প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী নতুনদের কাজে যুক্ত করবেন। ফ্রেশারদের বছরে ৬.৫ লক্ষ টাকা বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল উইপ্রো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ফ্রেশাররা সফলভাবে ট্রেনিং অর্থাৎ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করলেও প্রায় ৫০ শতাংশ কম বেতন দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে বর্তমানে। অফিশিয়াল ইমেলের মাধ্যমে ফ্রেশারদের অর্থাৎ নতুন নিয়োগ হওয়া কর্মীদের একথা জানিয়েছে উইপ্রো সংস্থা। বার্ষিক ৬.৫ লক্ষ টাকা থেকে অ্যানুয়াল প্যাকেজ নেমেছে ৩.৫ লক্ষ টাকায়।
কেবল উইপ্রো নয়, অন্যান্য কোম্পানিগুলির অবস্থাও বিশেষ ভালো নয়। টিসিএস ৫২৩ জন কর্মচারী সংযোজন করে এই কোয়ার্টার শেষ করেছে , যেখানে এইচসিএল টেকনোলজিস ২,৫০০ কম কর্মী নিয়ে ত্রৈমাসিক শেষ করেছে। ফলে কেবল উইপ্রো নয়, সার্বিক ভাবেই তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সূত্রের খবর, কোম্পানিগুলি বর্তমানে নতুন করে নিয়োগ করার ক্ষেত্রে কিছুটা লাগাম টেনেছে। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে ফ্রেসার্সদের কাজের সুযোগ তাই কিছুটা কমছে। কোম্পানিগুলি চাইছে আপাতত কর্মদের পিছনে ব্যয় কমিয়ে কোম্পানির সার্বিক অগ্রগতি। কবে এর কর্মসংস্থানের সংকট কাটে, সেজন্যই অপেক্ষায় লক্ষ লক্ষ প্রযুক্তি ক্ষেত্রের প্রশিক্ষণার্থী বা কর্মীবাহিনী।