বিরোধী দলগুলোর যুগপৎ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত

সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎভাবে দ্বিতীয় দিনের মতো পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে বিরোধী দলগুলো। বুধবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পৃথক-পৃথকভাবে এসব কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের লক্ষ্যে ১ দফা দাবিতে ১২ দলীয় জোটের উদ্যোগে কমলাপুর স্টেডিয়াম থেকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পর্যন্ত পদযাত্রা করেছে ১২ দলীয় জোট। জোট প্রধান, জাতীয় পার্টির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন জোটের মুখপাত্র কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক।

জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদার পরিচালনায় এতে বক্তব্য দেন আহসান হাবিব লিংকন, সাবেক সংসদ সদস্য নওয়াব আলী আব্বাস, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ রওনক ইব্রাহিম, অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এম এ বাসার, বাংলাদেশ জাতীয় দলের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল আহাদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল মালিক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি জাকির হোসেন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বি এম এল) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন প্রধান প্রমুখ।

বুধবার (১৯ জুলাই) সকালে রাজধানীর পল্টন মোড়সংলগ্ন ভাসানী গলি থেকে পদযাত্রা শুরু করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। এর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। তিনি বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা নেই। এই সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট ও দুঃশাসনে দেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ। তারা অবিলম্বে এই সরকারের পতন চায়। এ লক্ষ্যে বিএনপি ও সমমনা জোট রাজপথে আন্দোলন করছে।

এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ সঞ্চালনা করেন। সমাবেশ শেষে বেলা সোয়া ১১টার দিকে ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে পদযাত্রা শুরু করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। এতে জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান ও এস এম শাহাদাত, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, শাহ আলম হাওলাদার, জাহিদুল হক খোকন, বাংলাদেশ ন্যাপের এম এন শাওন সাদেকী ও ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল বারিক, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মন্ডল, বিকল্পধারার শাহ আহমেদ বাদল, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, নবী চৌধুরী, মো. ফখরুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পদযাত্রাটি জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে ঘুরে এসে মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে ইত্তেফাক মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

বুধবার দুপুরে পুরানা পল্টন কস্তুরী চত্বরে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ ধারায় পদযাত্রার আগে সমাবেশ করেছে লেবার পার্টি।

দলের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ও সুস্থ ধারার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তারা ফ্যাসিবাদী কায়দায় জোর জবরদস্তির মাধ্যমে মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়। তার প্রমাণ দেশের বিভিন্ন স্থানে একদফা দাবিতে বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর রক্তাক্ত ও সশস্ত্র আক্রমণ করে ২ জনকে হত্যা করেছে, হাজার হাজার নেতাকর্মী হামলা নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে।’

পদযাত্রা কর্মসূচিতে বাংলাদেশ লেবার পার্টি

দলের ঢাকা উত্তরের সভাপতি এস এম ইউসুফ আলীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন লেবার পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান হিন্দুরত্ম রামকৃষ্ণ সাহা, যুগ্ম-মহাসিচব মুফতি তরিকুল ইসলাম সাদী, মানবাধিকার সংরক্ষণ সংস্থার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জোহরা খাতুন জুঁই, সাংগঠনিক সম্পাদক খোন্দকার মিরাজুল ইসলাম, অর্থসম্পাদক রাসেল সিকদার লিটন, প্রচার সম্পাদক মনির হোসেন, মহিলা সম্পাদিকা নাসিমা নাজনিন সরকার, কেন্দ্রীয় সম্পাদক রুম্মান সিকদার, ছাত্রমিশন সভাপতি সৈয়দ মো. মিলন, সহ-সভাপতি নাজমুল ইসলাম মামুন, অর্থ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। মিছিলটি পল্টন মোড়, বিজয়নগর, প্রেস ক্লাব, দৈনিক বাংলা, পানির ট্যাংকি হয়ে ফকিরাপুল গিয়ে কর্মসূচি শেষ করা হয়।

বিকাল ৩টায় গণফোরাম চত্বর থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি। পদযাত্রার সূচনালগ্নে গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার সংবিধান অনুযায়ী এ দেশে নির্বাচন হবে, মহা দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ সরকারের সংবিধান বাংলাদেশের জনগণ মানে না। পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে রাষ্ট্রের জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার পরিবর্তে এই সরকার জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে। দেশের জনগণ এই সংকট উত্তরণে একমাত্র প্রত্যাশা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সেই লক্ষ্য আদায়ে আমাদের যাত্রা অব্যাহত থাকবে।

পদযাত্রা কর্মসূচিতে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট

বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী বলেন, জনগণ দেশে লুটপাটবিহীন সরকার চায়, যেখানে তারা শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবন অতিষ্ঠ, তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তন করার জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার অত্যাবশ্যক।

পদযাত্রা মতিঝিল গণফোরাম চত্তর থেকে শুরু হয়ে কাকরাইল মোড়ে এসে শেষ হয়। পদযাত্রা শেষে সমাপনী বক্তব্য রাখেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট এ.কে.এম. জগলুল হায়দার আফ্রিক, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির মহাসচিব মো. আবদুল কাদের।

এদিন রাজধানীর পূর্ব পান্থপথস্থ এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এলডিপি আয়োজিত পদযাত্রা শুরুর আগে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেন, আমরা যে দিন কর্মসূচি পালন করি ওই দিন শান্তি সমাবেশের নামে সরকার সারা দেশে অশান্তির পরিবেশ তৈরি করে। আওয়ামী লীগ শান্তি নয়, অশান্তিতে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ বিদায় নিলেই দেশে শান্তি আসবে।

পদযাত্রায় এলডিপি প্রেসিডিয়াম সদস্য ডক্টর নেয়ামূল বশির, ডক্টর আওরঙ্গজেব বেলাল, অ্যাডভোকেট এসএম মোরশেদ প্রমুখ অংশ নেন।