নারী শ্রমিক একটা সামাজিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে: আনু মুহাম্মদ

দেশের শ্রমশক্তি উৎপাদনে নারীরাই মুখ্য ভুমিকা পালন করছে জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, বর্তমানে নারী শ্রমিক একটা সামাজিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে।

বুধবার (২৬ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি’ আয়োজিত ‘নারী, মজুরি প্রশ্ন ও শ্রমিক আন্দোলন’ শীর্ষক আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘গত কয়েক দশকে নারী শ্রমিক আলাদা একটি সত্ত্বা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আশির দশকের আগে শ্রমিক বলতে শুধু পুরুষদেরই বিবেচনা করা হতো। কিন্তু বর্তমানে নারী শ্রমিক একটা সামাজিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে।’

তিনি আরও  বলেন, ‘নারী শ্রমিক হোক বা না হোক, শ্রম শক্তি তৈরিতে নারীই প্রধান ভূমিকা পালন করে। পুরুষের শ্রমশক্তির পেছনেও নারীর ভূমিকাই মুখ্য। তবে নারীর সেই শ্রম অনেকটাই অদৃশ্য।’

আনু মুহাম্মদ জানান, গণতান্ত্রিক অধিকারহীনতা থাকলে তার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হতে হয় শ্রমিকদের। শ্রমিকদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বৈরতন্ত্রবিরোধী আন্দোলন শ্রমিকদের মুক্তির একটি বড় পথ। শ্রমিকদেরও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত হতে হবে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকেও শ্রমিক স্বার্থের দাবিগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।’

সভায় সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘১১ শতাংশ গার্মেন্টস শ্রমিকের ঘরে ফ্যান নেই। ৮৪ শতাংশ শ্রমিক যৌথ টয়লেট ও ৮২ শতাংশ শ্রমিক যৌথ রান্নাঘর ব্যবহার করেন। দিন দিন মজুরি কাঠামো দুর্বল হচ্ছে। এক সময় বেসিক ছিল ৬৫ শতাংশ। ২০১৮ সালে তা ৫০ শতাংশে নেমে গেছে। এতে ওভারটাইমের মজুরি কমে যাচ্ছে।’

ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘ইদানিং শ্রমিকদের ওপর মামলা-হামলার পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আইন বাতিল হয়ে গেছে, অথচ সেই আইনেও মামলা হচ্ছে। উপরন্তু, ভুক্তভোগীরা ক্ষতিপূরণও পাচ্ছে না।’

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনটির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, ‘দেশের পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরি ৮ হাজার টাকা, এটা কোনও গৌরবের বিষয় নয়। গার্মেন্টস মালিকেরা অবশ্যই অনেক এগিয়ে গেছেন, কিন্তু শ্রমিকদের সার্বিক অবস্থা উদ্বেগজনক।’

আলোচনা সভায় আরও  বক্তব্য রাখেন— নারীপক্ষের সদস্য সাবিনা ইয়াসমিন, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্যফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সবুজ, নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য আইনুন নাহার লিপি, নৃবিজ্ঞানী ও লেখক রেহনুমা আহমেদ, বিআইজিডির গবেষক মাহিন সুলতানা প্রমুখ।