Amit Shah on Manipur Video: বাদল অধিবেশনের আগে মণিপুরের ভিডিয়ো ভাইরাল করা এক ষড়যন্ত্র, দাবি অমিত শাহের

মণিপুরের সেই বিভীষিকাময় ভিডিয়োই নয়, বরং জাতিগত হিংসার মোট ৭টি মামলা সিবিআই-এর হাতে তুলে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিকে বৃহস্পতিহার এই নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে। তিনি বলেন, ‘১৯৯০-এর দশক থেকেই কুকি এবং মৈতৈদের মধ্যে জাতিগত ভেদাভেদ রয়েছে।’ তিনি আরও জানান, যে ভিডিয়োগ্রাফার নগ্ন মহিলাদের সেই ভিডিয়ো ক্যামেরাবন্দি করেছিল, তারে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ভিডিয়ো নিয়ে পুলিশ পৃথক এফআইআর করেছে বলেও জানান শাহ। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, বাদল অধিবেশনের আগে এভাবে এই পুরনো ভিডিয়োটি ভাইরাল করার নেপথ্যে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র। এদিকে শাহ দাবি করেন, এই ভিডিয়োর বিষয়ে আগে থেকে কিছুই জানতেন না তাঁরা। তাঁর সাফাই, ঘটনার সময় পুলিশ বা সেনা সেই এলাকায় ছিল না। এদিকে শাহ জানান, সেনা দুই জনজাতির মধ্যে একটি বাফার জোন তৈরি করেছে। ৭২ শতাংশ সরকারি কর্মী কাজে ফিরেছেন। ৮২ শতাংশ পড়ুয়া স্কুলে ফিরেছে।

প্রসঙ্গত, গতকালও মণিপুর ইস্যুতে উত্তাল সংসদ। এই আবহে সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে চলল ‘স্লোগান যুদ্ধ’। আজ রাজ্যসভায় একদিকে বিজেপি সাংসদরা ‘মোদী, মোদী’ স্লোগান তুলেছিলেন। অন্যদিকে বিরোধীরা ‘ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া’ স্লোগান তুলেছিলেন। সেই সময় বিদেশ মন্ত্রকের কাজের খতিয়ে দিতে বক্তৃতা পেশ করছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। জানা গিয়েছে, বিরোধীদের আচরণে বেশ বিরক্ত হয়েছেন বিদেশমন্ত্রী। উল্লেখ্য, বিরোধীদের দাবি ছিল, মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিস্তারিত বিবৃতি দেওয়া উচিত। এই দাবিতেই বাদল অধিবেশনের শুরু থেকেই উভয় কক্ষকে প্রায় অচল করে রেখেছেন বিরোধীরা।

উল্লেখ্য, গত ৩ মে থেকে জাতিগত হিংসার সাক্ষী মণিপুর। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি অবস্থা। এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং এবং কাংপোকপি জেলা থেকে অধিকাংশ মানুষকে সরানো হয়েছে। এরই মধ্যে হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। রেহাই পাচ্ছে না মহিলা ও শিশুরাও। এরই মধ্যে সম্প্রতি মণিপুরে তিন মহিলাকে নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরানো এবং গণধর্ষণের ঘটনা সামনে এসেছিল। সেই ঘটনার বিভীষিকাময় এক ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। গোটা দেশ তাতে স্তম্ভিত হয়েছিল। ঘটনার ৭৭ দিন পর মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

এদিকে রিপোর্ট অনুযায়ী, ভাইরাল ভিডিয়োর ঘটনাটি ঘটে ইম্ফল থেকে প্রায় ৩৫ কিমি দূরে কাংপোকপি জেলায়। পুলিশের এফআইআর অনুযায়ী, সেই ঘটনায় নির্যাতিতা মহিলাদের পরিবারের দুই সদস্যকেও খুন করা হয়েছিল। এফআইআরে বলা হয়েছে, ৪ মে এক কুকি পরিবারের ৫ সদস্য আতঙ্কে বনে লুকিয়ে পড়েছিলেন। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। কিন্তু পুলিশের হাত থেকে তাদের ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এরপর ৫৬ বছর বয়সি এক ব্যক্তিকে খুন করা হয়। তারপর তিনজন নারীকে নগ্ন করিয়ে হাঁটানো হয়। ২১ বছর বয়সি এক মহিলাকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। পরে তিন মহিলা কোনওরকমে পালিয়ে যান। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি এই ঘটনাকে ‘দেশের লজ্জা’ বলে আখ্যা দেন। তবে মোদীর এই মন্তব্যে সন্তুষ্ট নন বিরোধীরা। তারা সংসদে এই নিয়ে মোদীর বিবৃতি দাবি করেছেন।

প্রসঙ্গত, ইম্ফল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মৈতৈ জনজাতি। তবে তারা সম্প্রতি দাবি তুলেছে যে তাদের তফসিলি উপজাতির তকমা দিতে হবে। তাদের এই দাবির বিরোধ জানিয়েছে স্থানীয় কুকি-জো আদিবাসীরা। এই আবহে গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন একটি মিছিলের আয়োজন করেছিল। সেই মিছিল ঘিরেই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে চূড়াচাঁদপুর জেলায়। এদিকে তফশিলি উপজাতির ইস্যুর পাশাপাশি সংরক্ষিত জমি এবং সার্ভে নিয়েও উত্তাপ ছড়িয়েছে। এই আবহে গত এপ্রিল মাসে এই চূড়াচাঁদপুর জেলাতেই মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সভাস্থলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরামের সদস্যরা। এদিকে এই জেলা থেকে আদিবাসী বনাম মৈতৈদের এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য জেলাতেও। আর এখনও পর্যন্ত সেই হিংসা প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ১৫০ জন।