বাবার পর মায়ের মৃতদেহ আগলে রাখলেন মেয়ে, অবাক জলপাইগুড়ির স্থানীয়রা

এক বছর আগে মৃত্যু হয়েছিল বৃদ্ধ বাবার। সেই সময় সেই সময় দিনের পর দিন বন্ধ ঘরে বাবার দেহ আগলে রেখেছিলেন মেয়ে। তখন তাঁর মানসিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এবার ফের মৃত মায়ের দেহ আগলে রাখলেন সেই মেয়ে। ঘটনাটি জলপাইগুড়ির কলেজ পাড়ার কর্মকার বাড়ির ঘটনা। জানা গিয়েছে, অনিন্দিতা কর্মকার তাঁর মা অঞ্জলি কর্মকারের (৭০) দেহ আগলে রেখেছিলেন। পচাগলা গন্ধ পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে। 

আরও পড়ুন: মালদহে উদ্ধার কংগ্রেস প্রার্থীর ভাইপোর পচাগলা দেহ, খুনের অভিযোগ পরিবারের

 ঠিক এক বছর আগে ১৯ অগস্ট ওই বাড়িতেই বাবা অজিত কর্মকারের (৭৫) মৃতদেহ আগলে দিনের পর দিন ঘর বন্ধ করে ছিলেন মেয়ে অনিন্দিতা কর্মকার। এবার মায়ের ক্ষেত্রেও তাই করলেন মেয়ে। জানা গিয়েছে, বাথরুমের মধ্যেই পড়েছিল অনিন্দিতার মায়ের দেহ। তাই নিয়ে তিনি দিন কাটাচ্ছিলেন। এদিকে, ওই বাড়ি থেকে গন্ধ পাচ্ছিলেন গ্রামবাসীরা। তাছাড়া বেশ কয়েকদিন ধরেই মা ও মেয়েকে তাঁরা বাড়ির বাইরে দেখতে পাননি। ফলে এলাকাবাসীদের সন্দেহ হয়।

এরপর প্রতিবেশীরা অনিন্দিতার বাড়িতে গিয়ে ডাকাডাকি করেও সাড়াশব্দ না পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশে গিয়ে উদ্ধার করে বৃদ্ধার দেহ। উদ্ধারের পর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায় পুলিশ। এ বিষয়ে থানার আইসি অর্ঘ্য সরকার জানান,  অঞ্জলি কর্মকারের মৃতদেহ উদ্ধারের পর অনিন্দিতাকে তাঁর আত্মীয়দের কাছে রেখে দেওয়া হয়েছে। রবিবার ওই বৃদ্ধার মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। অনিন্দিতা দাবি করেছেন,  সপ্তাহ খানেক আগেই তাঁর মা বাথরুমে পড়ে মারা গিয়েছেন। পুলিশ ঢুকে দেখতে পায়, বসে রয়েছেন অনিন্দিতা। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কেন তিনি মায়ের মৃত্যুর খবর জানাননি। উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, ‘কেন আপনাদের জানাবো?’  

প্রসঙ্গত, গত বছর বাবার মৃত্যুর পর দেহ আগলে রেখেছিলেন অনিন্দিতা। এই খবর যাতে বাইরে না যায় তার জন্য তাঁর মা কেউ ঘর বন্দি করে রেখেছিলেন তিনি। পরে ওষুধ কেনার অছিলায় বাইরে বেরিয়ে অঞ্জলি দেবী সবাইকে স্বামীর মৃত্যুর খবর জানিয়েছিলেন। মায়ের ক্ষেত্রেও প্রতিবেশীরা যাতে মৃত্যুর খবর জানতে না পারে তার জন্য তিনি কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দিতেন না। কারও কাছ থেকে খাবারও নিতেন না।

জানা গিয়েছে, অনিন্দিতার বাবা সরকারি দফতরে গাড়ি চালক ছিলেন। তাঁর পেনশনের টাকাতেই সংসার চলত। প্রতিবেশীদের ধারণা, মা ও মেয়ে দুজনেই অনেক দিন খাবার না খেয়ে ছিলেন। সেই কারণেও মৃত্যু হতে পারে। তাছাড়া অনিন্দিতার শরীরও ভেঙে গিয়েছে। তাঁকে দেখলেই বোঝা যায় যে অনেকদিন না খেয়ে রয়েছেন তিনি।

তবে কী কারণে অনিন্দিতা বাবা মায়ের মৃতদেহ আগলে রাখলেন? কেনই বা তিনি কাউকে জানালেন না? তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। প্রতিবেশীদের বক্তব্য, মানসিক সমস্যা রয়েছে অনিন্দিতার। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মানসিক অবসাদগ্রস্ত হলে কেউ এভাবে নিজের কাছের মানুষদের মৃতদেহ দিনের পর দিন আগলে রাখতে পারেন না। মেয়েটির মানসিক কী অসুখ আছে? তা আগে দেখা দরকার।

এদিনের ঘটনায় কার্যত হতবাক সকলেই। স্থানীয় কাউন্সিলর তারকনাথ দাসও ঘটনায় স্থম্ভিত। তিনি বলেন, ‘গতবারের ঘটনার পর মা ও মেয়েকে মিশনারিজ অফ চ্যারিটির অধীনে চিকিৎসা করানো হয়েছিল। এক সময় অজিত বাবুর মৃত্যুর সার্টিফিকেট মা ও মেয়ে দুজনেই আমার কাছে এসেছিল। কেন বারবার এই ধরনের ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা দরকার।’