মানব শিশুর কান্নায় সাড়া দেয় কুমির, গবেষণায় নতুন তথ্য

সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কুমির মানব শিশুর কান্নার শব্দে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায়। না বিন্দুমাত্র গল্পকথা নয়, কুমিরেরা মানুষের ও বানরের বাচ্চার কান্নার শব্দে আকৃষ্ট হয় বলছে গবেষণা। বিভিন্ন প্রাণীই তাদের কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে তাদের আবেগ প্রকাশ করে থাকে। তবে একটি প্রাণী অন্য প্রাণীর কণ্ঠ শুনে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তার আবেগ-অনুভূতিগুলি উপলব্ধি করতে পারে কিনা, তা এক গবেষণার বিষয় বটে। প্রসিডিংস অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি: বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত নতুন সমীক্ষা বলছে, নীল নদের কুমির মানুষের এবং বনমানুষের বাচ্চাদের কান্নার প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা বুঝতে একটি পরীক্ষা করা হয়৷

কুমির এবং প্রাইমেটের (শ্রেষ্ঠ বর্গভুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী) মধ্যে দূরবর্তী বিবর্তনীয় সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, ফ্রান্সের সিএনআরএস-এর গবেষকরা বলেছেন নীল নদের কুমিরগুলি বনমানুষ ও মানুষের বাচ্চার কষ্টের মাত্রা পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারে। এই শনাক্তকরণ বা অনুভূতি বোঝার ক্ষেত্রে অনেকক্ষেত্রেই তারা মানুষের চেয়েও বেশি গভীরতায় স্তন্যপায়ী শিশুদের আবেগ বুঝতে পারে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, সম্ভাব্য শিকারের যন্ত্রণা পরিমাপ করার জন্য কুমিরের একটি সহজাত ক্ষমতা হতে পারে।

গবেষণায় প্রয়োজনে গবেষকদল একটি গবেষণা ডাটাবেস থেকে শিশুর কান্নার শব্দ সংগ্রহ করেছেন, যেগুলি দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন স্তরের কষ্ট প্রকাশিত হয়। প্রধানত তাদের মাকে ডাকার জন্য বা দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য শিশুগুলি কেঁদেছিল। বিজ্ঞানীরা কান্নার মধ্যে ১৮টি ভিন্ন ভেরিয়েবল শনাক্ত করেন। এর মধ্যে রয়েছে তাদের পিচ, সিলেবল সংখ্যা, সময়কাল, বিশৃঙ্খল এবং সুরেলা শব্দ ইত্যাদি।

গবেষকদল মরোক্কোর ক্রোকোপার্ক-এ গিয়ে অসংখ্য পুকুরে থাকা প্রায় ৩০০ টি কুমিরকে এই পরীক্ষার জন্য বেছে নেন। শিশুদের কান্নার প্লেব্যাকগুলি চালানো হলে কুমিরগুলির মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন যে কুমিরগুলি প্লেব্যাকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায় এবং শিশুর কান্নার শব্দের মানে বোঝার জন্য তারা মুখে বিভিন্ন শব্দ করে। গবেষকদের মতে নতুন অনুসন্ধান দুটি কারণে আকর্ষণীয়। প্রথম, মানুষ যে ভাবে মানব শিশুর কান্নার স্বর শুনে তার অর্থ বা গভীরতা বুঝতে পারে, কুমিরের ক্ষেত্রে বিষয়টি অন্যভাবে কাজ করে।

মানুষের কান্নার প্রাথমিকভাবে পিচ থেকে তার মধ্যেকার কষ্টের স্তর নির্ধারণ করা যায়। প্রাথমিক কান্নার পিচ যত বেশি, তার মধ্যেকার দুঃখ-যন্ত্রণা তত বেশি বলে ধরে নেয় মানুষ। কিন্তু কুমির কান্নার পিচের দিকে মনোযোগ দেয় না। গবেষকরা বলছেন, কুমির প্রজাতি নির্বিশেষে দুর্দশার মাত্রা অনুমান করতে বিশেষভাবে তৈরি বলে মনে হচ্ছে।