এবার বড় সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না রোহিঙ্গাদের

মানবিক কারণে বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার ছয় বছর পূর্ণ হতে চলেছে আজ (শুক্রবার) ২৫ আগস্ট। তবে এ বছর তাদের বড় কোনও সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ক্যাম্পে ক্যাম্পে তারা ছোট সমাবেশ কিংবা আলোচনা সভা করতে পারবেন। সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো এ নিয়ে কাজ করছে। যাতে কোনও সংঘাত ও নাশকতা না হতে পারে এ ব্যাপারেও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে তারা। এদিকে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়েও কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

রোহিঙ্গা নিয়ে যত সংকট

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে নানামুখী সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। দিনে দিনে তারা নানা অপরাধে জড়িত হয়ে পড়েছে। পরিবেশের ক্ষতি তো রয়েছেই। মানব, মাদক ও অস্ত্র পাচার, ডাকাতি, অপহরণ ও খুনোখুনির মতো অপরাধ করছে নিত্যদিন। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের অনিয়ন্ত্রিত জন্মহার অন্যতম উদ্বেগের কারণ। প্রতিদিনই বাড়ছে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা। অন্যদিকে বৈদেশিক সাহায্যও কমে আসছে। যদিও সরকার ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো এসব বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে সাত লাখ ৪১ হাজার ৮৪১ জন রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনসংখ্যা ৯ লাখ ৬২ হাজার ৪১৬ জন। কক্সবাজারের ৩৩টি ক্যাম্পে ৯ লাখ ৩১ হাজার ৯৬০ জন রোহিঙ্গা নাগরিক অবস্থান করছেন। ভাসানচরে অবস্থান করছেন ৩০ হাজার ৪৫৬ জন রোহিঙ্গা নাগরিক। ইউএনএইচসিআর-এর পপুলেশন শিট ও হেলথ সেক্টরের তথ্য অনুযায়ী, আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে বছরে নতুন জন্ম নেওয়া শিশুর হার ২৪ হাজার ৯৩০ জন। প্রতি বছরে গর্ভবতী নারীর সংখ্যা ২৪ হাজার ৫৩২ জন। মোট আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গা জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ হচ্ছে শিশু। যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে।  

প্রত্যাবাসন হবে কবে

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কবে হবে জানে না কেউ। তবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য কয়েকটি ট্রানজিট ক্যাম্প বা সেন্টার স্থাপনের কাজও চালিয়ে যাচ্ছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমে একটি, টেকনাফের কেরণতলীতে প্রত্যাবাসন ঘাটের জেটি পুননির্মাণসহ উপজেলার জাদিমুরাতে প্রত্যাবাসন সেন্টার ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রুতে প্রত্যাবাসন সেন্টার নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। এসব ক্যাম্প স্থাপনের জন্য এরইমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের শরণার্থী বিষয়ক সেলের দায়িত্বশীল সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। 

সন্ত্রাসীদের অবস্থান শনাক্ত ও গতিবিধি নজরদারির জন্য ড্রোনও ব্যবহার করা হচ্ছে সীমান্তে নজরদারি জোরদার

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ঘুমধুম সীমান্তবর্তী কোনাপাড়া এলাকার নো ম্যানস ল্যান্ডে রোহিঙ্গাদের যে অস্থায়ী বসবাস ছিল সেখানকার অনেক রোহিঙ্গা পরিবারই অন্যত্র চলে যায়। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা প্রতিপক্ষের বসবাসের ঘরে আগুন দিয়ে ঘুমধুম চলে যায়। কোনাপাড়া ক্যাম্পের নো ম্যানস ল্যান্ডে কোনও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যাতে অপতৎপরতা চালাতে না পারে সেদিকেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে এপিবিএন-এর ১৭ ব্যাটালিয়ন গঠন ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তায় দায়িত্বরত ১৪ ও ১৬ ব্যাটালিয়নকে দ্রুত সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। ১৭ এপিবিএন কাজ করবে ভাসানচরে। এ ব্যাটালিয়নের জন্য ৮৫০টি পদ সৃষ্টির জন্যেও পুলিশ সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। নতুন করে যাতে আর মিয়ানমার নাগরিক বা রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য কক্সবাজার, বান্দরবান ও মিয়ানমার সীমান্তের বিজিবির আউট পোস্ট ও বিওপিগুলোতে জনবল বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

এপিবিএন কর্মকর্তার বক্তব্য

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. হাসান বারী নূর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এবার কোনও বড় সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে তাদের এ বিষয়টি বলে দেওয়া হয়েছে। তারা যদি ঘরোয়া বা ছোট ছোট আলোচনা সভা করতে চায় সেটা করতে দেওয়া হবে। সে বিষয়ে তাদের মাঝিদের (নেতা) সঙ্গে কথা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ১৬ ব্যাটালিয়নের প্রত্যেকটা ক্যাম্পের পশ্চিম পাশে পাহাড়। সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায়। এরপর মুক্তিপণ দাবি করে। যে কারণে পাহাড় ঘেঁষে যেসব চেকপোস্ট আছে সেগুলোতে তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের অবস্থান শনাক্ত ও গতিবিধি নজরদারির জন্য ড্রোনও ব্যবহার করা হচ্ছে।

এবার বড় সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না রোহিঙ্গাদের শরণার্থী ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনারের বক্তব্য

সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে এমনিতেই কর্তৃপক্ষ নানা সংকটে রয়েছে। নানা অপরাধ করা ছাড়াও জন্মহার বেশি তাদের। বৈদেশিক সাহায্যও আগের তুলনা কম। যেসব নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে। এবছর কোনও বড় সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা মাঝিদের সঙ্গে কথা বলেই তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। যাতে তারা ছোট ছোট আকারে আলোচনা সভা বা বৈঠক করতে পারে। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনেও সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তাদের প্রত্যাবাসনই সব সংকটের সমাধান হতে পারে।