বাংলাদেশে বাইরের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে চীন: শেখ হাসিনাকে শি জিনপিং

বাংলাদেশের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সমর্থন করে চীন। এ ছাড়া বাংলাদেশে বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে তারা। বাংলাদেশ যাতে অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে এবং উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন অর্জন করতে পারে, সে বিষয়ে সমর্থন করে চীন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এমনটা জানান চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বুধবার (২৩ আগস্ট) এমন তথ্য জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ১৫তম ব্রিকস সম্মেলন চলছে। স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে হোটেল হিলটন স্যান্ডটনে শি জিনপিং ও শেখ হাসিনার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক, নানা সুবিধার সহযোগিতা (বেল্ট অ্যান্ড রোড কো-অপারেশন) এবং অর্থনৈতিক পরিপূরকতাকে পূর্ণাঙ্গ করার আহ্বান জানিয়েছেন শি জিনপিং।

এ সময় অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি, নতুন শক্তি ও কৃষিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে উভয় পক্ষকে আহ্বান জানান জিনপিং।

শি জিনপিং বলেন, বাংলাদেশ ও চীন ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব উপভোগ করছে। দুই পক্ষ ২০১৬ সালে সম্পর্ককে কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বে উন্নীত করেছে, যা দুই দেশের সহযোগিতাকে আরও গভীর করার দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।

বর্তমানে চীন-বাংলাদেশ উভয়েই নিজস্ব উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আছে। ঠিক এ সময় চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নয়ন কৌশল সমন্বয় জোরদার, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তব সহযোগিতাকে আরও গভীর করা, দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বকে নতুন স্তরে নিয়ে যেতে আগ্রহী, যাতে দুই দেশের জনগণ উপকৃত হয়।

শি আরও বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সমর্থন করে চীন। এ ছাড়া বাংলাদেশে বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে দেশটি। বাংলাদেশ যাতে অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে এবং উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন অর্জন করতে পারে, সে বিষয়ে সমর্থন করে তার দেশ।

কৌশলগত যোগাযোগের বিষয়ে মি. জিনপিং বলেন, নিজ নিজ স্বার্থ জড়িত ইস্যুতে একে অন্যকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক বেইজিং। দুপক্ষের উচিত বিভিন্ন বিভাগ এবং বিভিন্ন স্তরের মধ্যে কৌশলগত যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠ আদান-প্রদান জোরদার করা।

এ ছাড়া দক্ষ কর্মী বিনিময়ের পাশাপাশি গভীর সাংস্কৃতিক ও জনগণের মধ্যে বন্ধনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে বাংলাদেশের যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে শি বলেন, চীন বাংলাদেশের সঙ্গে বহুপক্ষীয় বিষয়ে সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার করতে এবং আন্তর্জাতিক সমতা ও ন্যায়বিচারের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করতে ইচ্ছুক।

বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশে সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে উঠেছিল।

এ সময় কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা দিয়ে চীন যে বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতিতে সাহায্য করেছে, তারও প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ-চীনের সুসম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং একে অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

তিনি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের দশম বার্ষিকীতে শি জিনপিংকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড কো-অপারেশন’ বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।

বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে এক চীন-নীতি মেনে চলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে এবং ব্রিকসের মতো বহুপক্ষীয় ব্যবস্থায় সহযোগিতা জোরদার করতে প্রস্তুত বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

ব্রিকস উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নতুন উন্নয়নের সুযোগ নিয়ে আসবে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।