মিজোরাম থেকে মালদা, একের পর এক শ্রমিকের দেহ ফিরল গ্রামে, শোকে পরিবারগুলি

অবশেষে মালদায় এসে পৌঁছলো মিজোরামে রেল সেতু দুর্ঘটনায় মৃত শ্রমিকদের নিথর কফিন বন্দি দেহ। শুক্রবার রাতে মিজোরাম থেকে সরাসরি মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে পৌঁছলো ১৮ জন শ্রমিকদের মৃতদেহ। যদিও মালদায় ২৪ জন শ্রমিকের মৃত্যু হলেও ১৮ জন শ্রমিকদের মৃতদেহ আনা হয়েছে। গ্রিন করিডর করে ১৮ জন শ্রমিকের দেহ নিয়ে আসা হয়েছে। ময়নাগুড়ি এলাকায় জাতীয় সড়কে যানজট থাকায় তাঁদের দেহ ময়নাগুড়ি শহর হয়ে দোমহনি পার করে তিস্তা সেতু ধরা হয়। আবার জাতীয় সড়ক ধরে শিলিগুড়ি ঘোষ পুকুর হয়ে মালদয় পৌঁছয় কফিনবন্দি দেহ। অসহায় পরিবারগুলি তাঁদের আপনজনের নিথর দেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা। বাকি ৬ জনের দেহ আজ শনিবার আসবে।

এদিকে গোটা এলাকায় তখন শোকের ছায়া নেমে আসে। এই আবহে সেখানে জেলাশাসক নীতীন সিংহানিয়া, পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব–সহ রাজ্যের মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, ইংরেজবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু নারায়‌ণ চৌধুরী উপস্থিত থেকে পরিবারের সদস্যদের হাতে দেহগুলি তুলে দেন। মালদার পুখুরিয়ার চৌদুয়া গ্রামেই সর্বাধিক মৃত্যু হয়েছে। মালদায় মৃতদের মধ্যে ১৬ জনই পুখুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা। আর ইংরেজবাজারের ৫ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গাজোল–কালিয়াচকের একজন করে শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে মিজোরাম থেকে বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে করে মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পৌঁছলে সেখান থেকে প্রশাসনিক নিয়ম মেনে পরিবারের হাতে মৃতদেহগুলি তুলে দেওয়া হয়। একের পর এক ১৮টি মৃতদেহ প্রতিটি পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। গতকাল নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তাঁর সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃতদের পরিবারের সদস্যরা। অনেককেই জ্ঞান হারাতে দেখা যায়। রাজ্যপালের কাছে চাকরির দাবি জানালেন মিজোরামে রেল সেতু দুর্ঘটনায় মৃত শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা। রাজ্যপাল তিন শ্রমিকের নিকট আত্মীয়দের হাতে রেলের ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ অর্থও তুলে দেন।

আরও পড়ুন:‌ কপিলমুনির আশ্রমের কাছে ভাঙন, গঙ্গাসাগর নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান করতে বৈঠক সেচমন্ত্রীর

আর কী জানা যাচ্ছে?‌ নিহত পুখুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের চৌদুয়ার গ্রামের বাসিন্দা সাইদুর রহমানের স্ত্রী হাসিনা খাতুন রাজ্যপালকে কান্না ভেজা গলায় নিজের বেদনার কথা জানান। তিনি স্বামী সাইদুর ও ছোটভাই ইনসরুল হককে দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন। হাসিনা বলেন, ‘‌আমি স্বামী ও ভাইকে মিজোরামে হারিয়েছি। আমার সাত ও তিনবছরের দুই মেয়ে আছে। দুই শিশু সন্তানকে কী করে মানুষ করব বুঝতে পারছি না।’‌ রাজ্যপাল রেলের পক্ষ থেকে তিনটি পরিবারের হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকা ও সাড়ে ন’লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন। রেলের পক্ষ থেকে পরিবার পিছু ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছিল। মৃতদের বাড়িতে দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল বলেন, ‘অনেকে আমার কাছে পরিবারপিছু একজনের চাকরির দাবি করেছেন। আমি উপযুক্ত জায়গায় ওই দাবি পৌঁছে দেব।’ মিজোরামের আইজল থেকে প্রায় ২১ কিমি দূরে সাইরাং এলাকায় নির্মীয়মান রেল সেতু ভেঙে পড়ে ২৩ জন মালদার শ্রমিক মারা যান।