সব দেশের সহযোগিতা গ্রহণ করছে না মরক্কো

মরক্কোয় ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। শুক্রবারের এই ভূমিকম্পের খবর খুব অল্প সময়ের মধ্যে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন দেশ ক্ষতিগ্রস্ত এই দেশের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সব সহযোগিতা গ্রহণ করতে রাজি নয় দেশটি। মাত্র কয়েকটি দেশের ত্রাণ ও সহযোগিতা গ্রহণ করছে দেশটি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মরক্কো এই দুঃসময়ে বন্ধুদেশ থেকে সাহায্য নিতে রাজি হয়েছে। স্পেন, কাতার, যুক্তরাজ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সাহায্য দিবে বলে জানিয়েছে। ইতোমধ্যে স্পেন বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুরসহ একটি উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে। যুক্তরাজ্যও একটি অনুরূপ দল পাঠিয়েছে। তবে কেন মরক্কো অন্যান্য সাহায্য প্রস্তাব গ্রহণ করতে সময় নিচ্ছে, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রান্স সহযোগিতা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তবে উদ্ধারকারী দাতব্য সংস্থা সিকোরিস্টেস সান ফ্রন্টিয়েরেস-এর প্রধান বলেছেন, সাহায্য কর্মীদেরকে কাজ শুরু করার অনুমোদন দেয়নি মরক্কো সরকার। 

আলজেরিয়া দুই বছর আগে উত্তর আফ্রিকার দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। তারা বলেছে, নাগরিক সুরক্ষা বাহিনী থেকে ৮০ জন উদ্ধারকর্মী পাঠাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র, তিউনিসিয়া, তুরস্ক ও তাইওয়ান থেকেও সাহায্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

 কিন্তু কোন দেশের সাহায্য গ্রহণ করবে মরক্কো সেই সিদ্ধান্তটি সার্বভৌমত্ব ও ভূরাজনীতির প্রশ্নে আটকে গেছে।

ফ্রান্সের সঙ্গে মরক্কোর সম্পর্কে টানাপড়েন রয়েছে। মূলত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আলজেরিয়ার ঘনিষ্ঠ হতে চাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু ফরাসি কর্তৃপক্ষ টানাপড়েনের কথা অস্বীকার করে করেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনা বলেন, এটি একটি ভুল বিতর্ক। মরক্কোকে আমরা সাহায্য করতে প্রস্তুত। এটি মরক্কোর বিষয়, তারা সাহায্য গ্রহণ করবে কিনা। 

মরক্কোর কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে চায়। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে বিশৃঙ্খলা চায় না। এমন ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব হিতে-বিপরীত হতে পারে।

সরকারের সমালোচক মাতি মঞ্জিব বিবিসির নিউজডে অনুষ্ঠানে বলেছেন, এখন সাহায্য প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার সময় নয়। আমাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত দেশও এই সময় সাহায্য গ্রহণ করে। গ্রহণ না করা হবে ভুল।

ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (আইএফআরসি) মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার আঞ্চলিক পরিচালক হোসাম এলশারকাউই এমন কঠিন সময়ে মরক্কোর সমালোচনা করতে রাজি হননি। তবে বলেছেন, এমন সময় ত্রাণ সহযোগিতা গ্রহণ করা উচিত।

ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়া অনেকে মঙ্গলবার চতুর্থ রাত অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাতযাপন  করেছেন। বিধ্বস্ত পাহাড়ি এলাকার গ্রামবাসীরা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ৯০১ জনে দাঁড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ৫ হাজার ৫৩০ জনে পৌঁছেছে বলে মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে।