ডিভোর্সের মামলাও কি ‘পাড়ায় সমাধান’ হবে, প্রশ্ন অসন্তুষ্ট হাইকোর্ট বিচারপতির

‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া মেলায় রাজ্য সরকার ‘পাড়ায় সমাধান’ প্রকল্প চালু করেছে। কিন্তু, সম্প্রতি এই পাড়ায় সমাধান প্রকল্পের শিবির থেকে ৮৭ জন শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে। তা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছে রাজ্য সরকার। এই সংক্রান্ত একটি মামলায় বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ করে রাজ্য সরকার। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্ট সেই রিপোর্টে সন্তুষ্ট না হওয়ায় ফের রিপোর্ট দিতে বলেছে। এর পাশাপাশি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে হাইকোর্ট। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।  

আরও পড়ুন: বছরে দু’বার ‘‌‌দুয়ারে সরকার’ ও ‘‌পাড়ায় সমাধান’, ‘‌স্বাস্থ্যসাথী’ নিয়েও বড় ঘোষণা

পাড়ায় সমাধানে শিক্ষক বদলি নিয়ে কলকাতায় কোর্ট একটি মামলা করেছিলেন পূজা মণ্ডল নামে এক শিক্ষিকা। তাঁর অভিযোগ, তিনি হাওড়ার উলুবেরিয়ার বাসিন্দা। তবে তাঁকে চাকরি করতে হয় মালদহে। সেখানে একা শিশুকে নিয়ে তাঁকে থাকতে হয়। সেই কারণে তিনি শিক্ষা দফতরে বদলির আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁকে বদলি করা হয়নি। অথচ পাড়ায় সমাধান প্রকল্পের শিবিরে ৮৭ জন শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে। পাড়ায় সমাধান থেকে কীভাবে শিক্ষক বদলি সম্ভব? সেই প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই শিক্ষিকা। অভিযোগ, স্কুল সার্ভিস কমিশনকে এড়িয়ে এই বদলি করা হয়েছে। শিক্ষিকার এই অভিযোগ শুনে কার্যত বিস্মিত হয়ে যান বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। এ নিয়ে রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি। তাঁর মন্তব্য, ‘হাইকোর্টে শত শত শিক্ষক দ্বারস্থ হচ্ছেন বদলির জন্য। তাহলে তো তাঁদের আর হাইকোর্টে আসার কোনও প্রয়োজন নেই। পাড়ায় টেবিল পেতেই তাহলে শিক্ষকদের বদলি করা হোক।’ এ সংক্রান্ত মামলায় রাজ্য সরকারের কাছে পরের দিন বৃহস্পতিবার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিলেন বিচারপতি।

রিপোর্ট পাওয়ার পরে দিন বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘পাড়ায় সমাধান কি সালিশি সভা? কারও বাড়িতে পরিচালিকা না থাকলেও কি এই শিবিরের সমাধান করা হয়? তাহলে কি এবার থেকে ডিভোর্সের মামলাও পাড়ায় সমাধান করা হবে!’ সাধারণত উৎসশ্রী প্রকল্পে শিক্ষকদের বদলি হয়ে থাকে। কিন্তু সেই প্রকল্প ২০২১ সালের অগস্টে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও কীভাবে বদলি হয়েছে? তাই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। যদিও সরকারি আইনজীবী জানান, পাড়ায় সমাধান প্রকল্পের মাধ্যমে বদলির কথাটা ঠিক নয়। এর মাধ্যমে মানুষের সমস্যার সমাধান করা হয়। পাড়ায় সমাধান প্রকল্পের বিজ্ঞপ্তি আছে কিনা সে বিষয়ে আদালত জানতে চাইলে সে বিষয়ে সরকারি আইনজীবী স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি। তিনি জানান, খোঁজ নিয়ে বিষয়টি জানাবেন। অন্যদিকে, বদলির বিষয়ে তথ্য জানাতে  মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আইনজীবীও সময় চেয়েছেন।