জয়নগরে হদিশ মিলল আস্ত অস্ত্র কারখানার, ফিল্মি কায়দায় পর্দাফাঁস পুলিশের

একটা ছোট্ট ভুল। আর সেই ভুলের জেরেই পুলিশের হাতে এল গোটা অস্ত্র কারখানা। এই অস্ত্র কারখানার হদিশ মিলল খোদ জয়নগরে। আর অস্ত্র–সহ গ্রেফতার হয়েছে কারখানার মালিকও। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম। ধৃত দীর্ঘদিন ধরেই আগ্নেয়াস্ত্র কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত ছিল। পুলিশকে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করতে গিয়েই বমাল ধরাও পড়ে গেল অস্ত্র কারখানার মালিক। গোটা বিষয়টি খোঁজ চালিয়ে এবং টোপ ফেলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে অবৈধ অস্ত্র কারখানার হদিস পেল পুলিশ।

বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে?‌ এদিকে ওই অস্ত্র কারখানার মালিকের দু’কামরার ঘর ছিল। যেখানে গিয়ে কার্যত চক্ষু চড়কগাছ হয়েছে তদন্তকারীদের। বাড়ি ভর্তি আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম সেখানে রাখা ছিল। আর পুলিশ যাতে ধরতে না পারে তার জন্য ওই বাড়ির পাশে পুকুরের জলে ডুবিয়ে রাখা ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। প্রচুর পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র–সহ গ্রেফতার করা হয়েছে কারখানার মালিককে। বারুইপুর পুলিশ জেলার স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ, জয়নগর ও বকুলতলা থানার পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালায়। জয়নগরে এই অভিযান চালাতে ক্রেতার ছদ্মবেশ ধরতে হয়। আর অস্ত্র কারখানার মালিক এটাই বুঝতে পারেনি। তাই টোপে পা দেয় আর বমাল ধরা পড়ে যায়।

পুলিশ কী তথ্য পেয়েছে?‌ অন্যদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত অস্ত্র কারখানার মালিকের নাম রহমতুল্লা শেখ। বেশ কয়েকদিন ধরে সূত্রের মাধ্যমে খবর মিলছিল অস্ত্র কারখানার মালিক জয়নগরে আছে। এখান থেকে বিদেশে পর্যন্ত অস্ত্রের কারবার করে সে। সেই সূত্রের উপর ভিত্তি করে ওই অস্ত্র কারখানার মালিককে ধরার পরিকল্পনা করা হয়। ক্রেতা সেজে যোগাযোগ করা হয় অস্ত্র কারখানার মালিক রহমতুল্লা শেখের সঙ্গে। এই টোপটাই সে বুঝতে পারেনি। অর্থের লোভে অস্ত্র ডেলিভারি করতে আসে গতকাল সন্ধ্যে ৬টা নাগাদ। আর তখনই তাকে বমাল ধরা হয়। পুলিশকর্মীরা মোটরবাইক ও অটোতে ছিলেন। ধৃতকে নিয়ে কাশীপুরের কামারিয়া এলাকার বাড়িতে যায় পুলিশ। সেখানে গিয়ে তাঁরা দেখেন, নির্জন এলাকায় দু’কামরার ঘরের ভিতর শুধু অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম আর যন্ত্রপাতি। আর বাড়ির পিছনের পুকুরে বস্তায় ভরে লুকোনো ছিল আগ্নেয়াস্ত্র।

আরও পড়ুন:‌ পরবর্তী রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের দায়িত্বে কে?‌ নবান্ন আনছে জাঁদরেল আমলাকে

তারপর ঠিক কী ঘটল?‌ তারপর সেখান থেকে অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে মিলেছে অস্ত্র তৈরির মেশিন, ড্রিল মেশিন, ডাইস, ফাইল, করাত, হ্যাক্সো, বাটালি, হাতুড়ি, লোহার পাত, পাইপ–সহ নানা সরঞ্জাম। মিলেছে ৮টি ওয়ান শাটার বন্দুক। দুটো লং পাইপ উদ্ধার হয়েছে। ওই বাড়িতেই অস্ত্র কারখানায় স্ত্রী এবং সন্তানকে নিয়ে থাকত অভিযুক্ত। আজ, বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে বারুইপুরের পুলিশ সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি বলেন, ‘গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এই অভিযানে নেমে অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ছোট্ট একটা ঘরের মধ্যে আস্ত অস্ত্র কারখানা তৈরি করেছিল অভিযুক্ত। অভিযুক্তকে ট্র্যাক করছিলাম আমরা। এখনও পর্যন্ত ধৃতের সঙ্গে রাজনৈতিক কোনও সম্পর্ক মেলেনি। জেরা চলছে।’‌