নতুন দলগুলোর টার্গেটে বিএনপির পদবঞ্চিতরা, সাড়া মিলছে কেমন?

বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর পদহীন, বঞ্চিত, অবমূল্যায়িত নেতাদের টার্গেট করেছে নির্বাচনমুখী কয়েকটি দল। এসব দলের মধ্যে ‘তৃণমূল বিএনপি’, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টসহ (বিএনএফ)  কয়েকটি দল রয়েছে। তবে এসব দল সারা দেশ থেকে বিএনপির বঞ্চিত নেতাকর্মীদের সাড়া পাচ্ছে কম। কোনও কোনও দলের নেতা জানিয়েছেন, তারা নিজেদের তরফেই বিএনপির অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

দলগুলোর নেতারা বলছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর চিত্র পাল্টাতে পারে। বিশেষ করে চূড়ান্তভাবে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচনমুখী পদবঞ্চিত নেতারা আগ্রহী হবেন। এক্ষেত্রে আরও অন্তত মাসখানেক পর প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে সক্ষম হবে দলগুলো।

সরকারের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থার নির্ভরযোগ্যসূত্র জানায়, বিএনপির মধ্যে যারা বঞ্চিত, পদ ও মূল্যায়নবঞ্চিত, সম্মানজনক অবস্থায় নেই—এ রকম নেতাদেরকেই নির্বাচনমুখী তিনটি দলে ভেড়ানোর চেষ্টা এগিয়ে চলছে। বিশেষ করে বিএনপির মধ্যে যেসব নেতা ক্ষমতায় থাকতে আগ্রহী, তাদেরকে টার্গেট করা হয়েছে।

গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রটি উল্লেখ করে, ‘তৃণমূল বিএনপি’, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টসহ কোনও জোট হবে কিনা, নির্বাচনি জোট কেমন হবে— তা নির্ভর করছে বিএনপির নির্বাচনে আসা- না আসার ওপরে। এখনও পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে আসবে না— এ হিসাবটিকে সামনে রেখেই নির্বাচনি পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিকল্প প্ল্যান রেখে এগোচ্ছে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এসব পরিকল্পনার মধ্যে বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলার পাশাপাশি বিদেশি চাপগুলোকে কীভাবে সমন্বয় করা হবে, তাও রয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রটি জানায়, সরকার চায় বিএনপি যেন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির বিষয়টিকে নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে। এ ক্ষেত্রে সরকার পতনের আন্দোলনের মনোযোগে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে সাহায্য করে।

সূত্রের দাবি, সরকারের শেষ মুহূর্তের কৌশল কী হবে, এর ওপর নির্ভর করছে নির্বাচনমুখী ছোট দলগুলো কোন ফর‌ম্যাটে নির্বাচনে যাবে। এ কারণে এখনই বিএনপি থেকে কারা কারা অংশ নিতে পারে, কত আসনে সমঝোতা হতে পারে, তা বলার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে গোয়েন্দা সূত্রটির ভাষ্য— পুরো পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে এবং খুব সামান্য শঙ্কা রয়েছে পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ার। ফলে, ছোট ছোট নির্বাচনমুখী দলগুলো এখন প্রার্থী বাছাই, সংগঠন গুছিয়ে আনার কার্যক্রমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

জানতে চাইলে সোমবার (২ অক্টোবর) ‘তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনি প্রস্তুতি খুব ভালোভাবে চলছে। প্রতি দিনই নতুন প্রার্থী যাচাই করছি। আমরা চেষ্টা করছি, যত বেশি সম্ভব আসনে প্রার্থী নিশ্চিত করা। আশা করি, তিনশ আসনেই প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারবো।’

সোমবার দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ আক্কাস আলী খান বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে উল্লেখ করেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করছে। আমাদের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত তিনশ আসনে প্রার্থী দেওয়া। মোটামুটি সাড়া পাচ্ছি প্রার্থী বাছাইয়ে। তবে বিএনপি থেকে যোগাযোগ করছে বেশি, এ রকম না। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে হয়তো চিত্র পাল্টাতে পারে।’

মোহাম্মদ আক্কাস আলী খান জানান, দলের চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী সিলেটের একটি আসন থেকে, মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্বাচন করবেন। দলের নির্বাহী চেয়ারম্যান অন্তরা হুদা দোহার বা শ্রীনগর থেকে নির্বাচন করতে পারেন।’

মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিএনএএফ এর প্রধান আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে বিএনপির বেশ কিছু নেতার সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। আমি জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টে ছিলাম ১৯৭৮ সালে। তখন আমি ন্যাপ করতাম। আমি জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের সূচনালগ্নে ছিলাম। পরে যখন বিএনপি হয়, তখন থেকে আমি নেই।’

বিএনএফের নির্বাচনি প্রস্তুতি চললেও শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা, এ বিষয়টি এখনও ঠিক করা হয়নি বলে জানান আবুল কালাম। ‘তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএমের সঙ্গে জোট করার কোনও সুযোগ নেই বলেও বাংলা ট্রিবিউনকে জানান আজাদ। বলেন, ‘এবার জোটগত করার সম্ভাবনা নেই। এককভাবে নির্বাচন করবো সেটারও নিশ্চয়তা নাই।’

সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ দাবি করেন, বিএনএম জালিয়াতি করে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বিভিন্ন জেলায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হতে আমাদের দলের নেতাদেরকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেসব চিঠিতে আমাদের নেতাদের নাম উল্লেখ করে বিএনএম বলা হয়েছে। তার মানে কী, হঠাৎ গজিয়ে ওঠা এই (বিএনএম) দলটি  বিএনএফকে নকল করে হয়েছে।

দশম জাতীয় সংসদের এমপি আজাদ জানান, আগামী ২১ অক্টোবর তার দলের প্রতিনিধি সম্মেলন হবে। সেখানে তিনি নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থান ব্যক্ত করবেন।

নির্বাচনি প্রস্তুতি চলছে নতুন নিবন্ধিত দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএমেও। সদ্য গঠিত এই দলটিও তিনশ আসনের প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছে নির্বাচনি মাঠে। দলের আহ্বায়ক ড. আব্দুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তিনশ আসনেই প্রার্থী দেবো। আমাদের সে প্রস্তুতি আছে। চলতি মাসে আমাদের কাউন্সিল আছে, এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে সেখানে।’

বিএনপি থেকে কেউ যোগাযোগ করছে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে আব্দুর রহমানের মন্তব্য, এ রকম কোনও বিষয় নাই। যেকোনও দল থেকেই আসতে পারে। আমরা চাই ভালো মানুষ, দেশপ্রেমিক, দুর্নীতিমুক্ত, ভূমিবাজ নয় এমন লোক। এ ধরনের মানুষ যেখান থেকেই আসবে মনোনয়ন পাবেন। বিএনপি থেকেই আসতে হবে এমন না। বিএনপি এত বড় দল, কেউ যদি দলত্যাগ করে আসে তাহলে তো…(তিনি হেসে ওঠেন)।