মহালয়ায় তিস্তার জলে তর্পণ করা এবার বন্ধ, কেন এমন কঠিন সিদ্ধান্ত প্রশাসনের?

সিকিমের হ্রদ বিপর্যয় ও তিস্তার তাণ্ডবে লাশের পাহাড় তৈরি হতে দেখা গিয়েছে। সিকিমে হঠাৎ লোনাক হ্রদ বিস্ফোরণ এবং তিস্তা নদীর তাণ্ডবে কালিম্পং জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার জেরে গোটা উত্তরবঙ্গ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। পাহাড় থেকে সমতলেও ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এই বিপর্যয়ে জলপাইগুড়ি জেলারও কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এখানে মহালয়ার দিনে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে প্রত্যেক বছর জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন তিস্তা নদীতে তর্পণ করেন বহু মানুষ। তবে এবারের তিস্তা নদীর জল একদিকে শাস্ত্র মতে অপবিত্র। তার উপর পরিবেশের দিক থেকে অনেকটাই দূষিত। তাই এখানে শনিবার তর্পণ হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।

এদিকে তিস্তার পাড় যেন শ্মশানপুরী। এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সম্প্রতি উত্তর সিকিমের ধ্বংসলীলার দৃশ্য আজও দেখা যাচ্ছে। এখানে ভেসে উঠছে মৃতদেহ। তিস্তার জলে প্রতিনিয়ত উদ্ধার করা হচ্ছে সেনা জওয়ান থেকে সাধারণ মানুষের মৃতদেহ। নদীর অববাহিকায় উদ্ধার অব্যাহত রয়েছে সেনাবাহিনীর। আর এখানে বিস্ফোরক–সহ অত্যন্ত বিপজ্জনক বিভিন্ন ধরনের কামানের গোলা এবং সেই বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে নদীর পাড়ের নানা গ্রামের ফাঁকা স্থানে। তিস্তার তাণ্ডবে কালিম্পংয়ে মৃতদের পরিবারকে তিন লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ এবং ক্রান্তিতে ভেসে আসা মর্টার সেল বিস্ফোরণে মৃত শিশুর পরিবার দু’লক্ষ টাকা ও আহতরাও এক লক্ষ টাকা করে পাবে বলে ভার্চুয়ালি দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করে এই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

অন্যদিকে রাত পোহালেই মহালয়ার পূণ্য তিথিতে তর্পণ শুরু হয়ে যাবে রাজ্যে। কিন্তু এখনও তিস্তায় নানা জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। এখানে তর্পণ করতে গিয়ে মানুষের আবার বিপদ হোক তা চায় না প্রশাসন। তাই এখানে তর্পণ না করার ঘোষণা করা হয়েছে। এই বিষয়ে বঙ্গীয় যজমান সংঘের সভাপতি জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘‌সিকিমের ধ্বংসলীলার সবটাই তিস্তার জলে প্রবাহিত হচ্ছে। শুধু মানুষের নয় বহু পশুপাখিও মৃত অবস্থায় তিস্তা নদীর জলে ভেসে আসছে আজও। সেই সব দিক বিচার করেই বলছি, শাস্ত্র মতে এই মুহূর্তে তিস্তা নদীর জল অপবিত্র।’‌ এই কথাও এখন ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। তাই স্থানীয় মানুষজনও চাইছেন না এখানে তর্পণ করতে।

আরও পড়ুন:‌ স্কুলপড়ুয়াদের এবার পাঠ দেবেন কলেজের অধ্যাপকরা, কেন এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষা দফতরের?‌

আর কী জানা যাচ্ছে?‌ এই কারণেই মহালয়ার ভোরে তিস্তা নদীর জলে দাঁড়িয়ে পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে যে তর্পণ করা হয়ে থাকে এই বছর সেটা তিস্তা নদীতে করা হচ্ছে না। তিস্তার জল শুদ্ধ হতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী বর্ষা পর্যন্ত। বর্ষার নতুন বৃষ্টির জলে আবার পবিত্র এবং দূষণ মুক্ত হবে তিস্তা নদীর জল। তাছাড়া জলপাইগুড়ির ক্রন্তিতে ভেসে আসা একটি সেল বিস্ফোরণে এক শিশুর মৃত্যু হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‌ওই ঘটনায় মৃতের পরিবার এবং আহতরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। তবে নদীর পাড়ে পড়ে থাকা জিনিস কেউ স্পর্শ করবেন না। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনকে জানাবেন। তারা সেখান থেকে বন্দুক বা অন্য কিছু থাকলে উদ্ধার করে সেনাবাহিনীকে জানাবে। এই বিপর্যয়ে জলপাইগুড়ি জেলাও প্লাবিত হয়েছে। প্রশাসনকে ত্রাণ বিলি ও উদ্ধার কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।’‌