বাংলায় অসংখ্য শব্দের প্রতিশব্দ নেই : খালিকুজ্জামান ইলিয়াস

আজ সোমবার টিএসসিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য সংসদ আয়োজিত সাহিত্য উৎসবের প্রথম দিন নানাবিধ কর্মসূচির মধ্যদিয়ে উদযাপিত হয়।


সাহিত্য সংসদের একটি র‌্যালি সকাল ১০টায় বের হয় এবং ১০টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হয়। এরপর বাংলা ভাষার গান ও কুইজ অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলা ভাষার গান
দুপুর সাড়ে ১২টায় রাখাল রাহার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয় ‘লেখালেখি ও সম্পাদনা বিষয়ক কর্মশালা।’ রাখাল রাহা বলেন, ‘বানান পরিবর্তন এবং এ সম্পর্কিত যে বিতর্ক চলছে তা মেধার অপচয় ছাড়া কিছু নয়, বরং তা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে।’

সম্পাদক রাখাল রাহা

দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে অনুষ্ঠিত ‘জনপ্রিয় সাহিত্য, সাহিত্যের জনপ্রিয়তা’ সেশনে সাদাত হোসাইন বলেন, ‘যে সাহিত্য সমাজের সবার কাছে পৌঁছাতে পারে, তখন তা সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে এবং তখন তাকে ‘জনপ্রিয়’ সাহিত্য বলা যেতে পারে। যে দেশে ১% মানুষ বই কেনে না সে দেশে ধ্রুপদী সাহিত্য রচনা করে সমাজ পরিবর্তন করার কথা বলা অমূলক।’

লেখক সাদাত হোসাইন

সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠিত ‘মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ : আজকের পরিপ্রেক্ষিতে’ সেশনে আলোচক ছিলেন মোস্তফা হোসেন এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মনি হায়দার।

মোস্তফা হোসেন ও মনি হায়দার

মোস্তফা হোসেন বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে এবং পরের খাদ্য সরবরাহ, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থা  দেখলেই পার্থক্য স্পষ্ট হয়। এই সময়ে এসে কেউ অনাহারে মারা যায় না।’

মোস্তফা আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার ২০ বছরের মধ্যেই স্বাধীনতাবিরোধীদের সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেয়া ও ভোট পাওয়ার যে ইতিহাস, তার দায় সাধারণ জনগণের উপর গণহারে দেয়া যায় কি না এ ব্যাপারে সংশয় রয়েছে। এর পেছনে বড় কারণ, রাজনীতি সম্পর্কে অসচেতনতা ও ধর্মভীরুতা।’ তিনি মুক্তিযুদ্ধের দলিল ও স্মারক গ্রামেগঞ্জে এখনো অবহেলায় পড়ে আছে বলে অভিযোগ করেন।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মোস্তফা হোসেন

বিকাল সাড়ে ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশের সাহিত্য সমাজ ও ভাষার রাজনীতি’ সেশন। এতে আলোচক হিসেবে ছিলেন, ড. শিশির ভট্টাচার্য্য এবং ড. মোহাম্মদ আজম। সঞ্চালনা করেন, কে.এম রাকিব।

শিশির ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘বই লেখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাত ঘুরে লেখক যা পান তা খুবই যথাসামান্য, এই অবস্থায় বই পড়া ও লেখার উন্নতি যে হবে তা আশা করা অমূলক।’

মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘বিনোদনের জন্য বই পড়ার কালচার আমাদের কমে যাচ্ছে। নানান আকর্ষণ তৈরি করে পাঠক সৃষ্টি করা আমাদের হয় না।’

ড. শিশির ভট্টাচার্য্য, ড. মোহাম্মদ আজম ও সঞ্চালক কে.এম রাকিব

শিশির ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও লেখাপড়া জানেন না। গবেষণা-সহ বাকি সব জানেন, শুধু পড়তে আর লিখতে জানেন না। মূর্খদের ডিগ্রি দেয়ার যে কালচার, তাতে সমাজের শুধু নয় প্রকাশনা জগতেরও ক্ষতি হচ্ছে।’

মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘বই পড়া এক অসামান্য বিপ্লব, বইয়ের সহজলভ্যতা তৈরি হওয়া সত্ত্বেও  আমাদের দেশে বই পড়ার অভ্যাস আশংকাজনকভাবে কম।’

সাড়ে ৫টায় অনুষ্ঠিত ‘সাম্প্রতিক বাংলা গোয়েন্দা গল্প ও থ্রিলারের সুলুকসন্ধানে’ সেশনে আলোচক ছিলেন মোশতাক আহমেদ ও অরুণ কুমার বিশ্বাস; সঞ্চালনা করেন, মরিয়ম মিম।

মোশতাক আহমেদ ও অরুণ কুমার বিশ্বাস

অরুণ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘দায়িত্বশীল লেখা লিখতে গেলে লেখককে সম্পূর্ণ স্বাধীন হতে হয়। পপুলারিটি লেখকের মানদণ্ড নয়।’

মোশতাক আহমেদ বলেন, ‘লেখককে চলতে হয় সময় ও যুগের সাথে, পাঠকের মনস্তাত্ত্বিক দিক বিবেচনা করেও তাকে লিখতে হয়।’

অরুণ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বিশ্বসাহিত্য বা বাংলা সাহিত্যের থ্রিলার লেখকদের কারো মধ্যেই নৈতিকতার অভাব দেখা যায় না বরং লজিকের ব্যবহার হয়। কল্পনা করে ও ভাগ্যের জোরে ক্রিমিনাল ধরা যায় না।’

মোশতাক আহমেদ বলেন, ‘টেকনোলজি ও হলোগ্রাফনির্ভর সমাজ নিয়ে লিখলে পাঠক টিকে থাকবে। অতীতের প্রসঙ্গ দিয়ে পাঠক আটকে রাখা যায় না।’

৬টা ২০ মিনিটে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের অনুবাদ সাহিত্যে শৃঙ্খল ও নৈরাজ্য’ সেশনে আলোচনা করেন, খালিকুজ্জামান ইলিয়াস, জাভেদ হুসেন ও আবদুস সেলিম। সঞ্চালনা করেন, মোজাফফর হোসেন।

অধ্যাপক আব্দুস সেলিম, ড. খালিকুজ্জামান ইলিয়াস,  অনুবাদক জাভেদ হুসেন ও সঞ্চালক মোজাফফর হোসেন

আবদুস সেলিম বলেন, ৩৫টি নাটক অনুবাদ করেছি, যার মধ্যে অনেকগুলো মঞ্চায়িত হয়েছে। উপন্যাস ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’ ও অনেক কবিতা অনুবাদ করেছি কিন্তু এই পরিচয়ে পরিচিত হতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না।’

খালিকুজ্জামান ইলিয়াস বলেন, ‘চিরায়ত সাহিত্য অনুবাদ করে এসেছি প্রথম থেকে। ইংরেজির তুলনায় বাংলা এখনো দুর্বল, বাংলায় অসংখ্য শব্দের প্রতিশব্দ নেই।’

জাভেদ হুসেন বলেন, মার্ক্সীয় লেখাপত্র এখানে অনূদিত না হয়ে রাশিয়া থেকে অনুবাদ হয়ে আসত। এটা ছিল আমাদের জন্য হতাশাজনক। ভাষা চেতনার শরীর, সেখানে আমরা যদি নিজের ভাষায় সাহিত্য পড়তে না পারি তবে চেতনা হারিয়ে যায়।’

কুইজ প্রতিযোগিতা
কুইজের বিজয়ীরা হলেন, প্রথম স্থান- ইয়াসির আরাফাত, ঢাবি; দ্বিতীয় স্থান- হৃদয় আহমেদ স্বাধীন, ঢাবি; তৃতীয় স্থান- ফাইজা বিনতে হক, ঢাবি; চতুর্থ স্থান- ইমন ইসলাম রাজু, ঢাবি; পঞ্চম স্থান- মোহাম্মদ আসিফ আহমেদ; ষষ্ঠ স্থান- রাবাত রেজা নূর, ঢাবি।