প্রস্তুতি শেষ, অপেক্ষা উৎসবের

গত শনিবার ছিল শুভ মহালয়া। দিনটি উদযাপনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আগমনধ্বনি বেজে উঠেছে। ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। ওই দিন মহাষষ্ঠী। পরদিন মহাসপ্তমী। ২৪ অক্টোবর দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে দুর্গোৎসব। ইতোমধ্যে নীলফামারীতে পূজার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। জেলার ৮৯১টি মণ্ডপে সাজ সাজ রব। মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ সেরেছে জেলা প্রশাসন। পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছে পুলিশ; নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

সরেজমিনে ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর ও সদরের কয়েকটি পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিমা তৈরির কাজ সম্পন্ন। কোনও কোনও মণ্ডপে সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জার কাজ চলছে। ঐতিহ্যবাহী পোশাক আর গহনায় সাজানো হয়েছে প্রতিমা। দেবী দুর্গার সঙ্গে সাজিয়ে তোলা হয়েছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতীকেও। উৎসবের আমেজ ছোট-বড় সবার মাঝে। সবার অপেক্ষা উৎসবের।

সনাতন পঞ্জিকা মতে, এ বছর ঘোটকে চড়ে দেবী দুর্গার আগমন; বিদায় নেবেনও ঘোটকে। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় দেবীপক্ষ; দেবীপক্ষের সূচনার অমাবস্যাটির নাম মহালয়া। সাধারণত শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচ দিন যথাক্রমে মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। ২০ অক্টোবর শুক্রবার শুভ বিল্বষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।

জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালিপাড়া কাছারিবাজার সার্বজনীন পূজামণ্ডপের প্রতিমাশিল্পী প্রদীপ কুমার রায় বলেন, ‘প্রতিমা তৈরির কাজ সম্পন্ন। এখন সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জার কাজ চলছে। মণ্ডপগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে খুঁটিনাটি কাজ করছি আমরা।’

সদরের প্রায় সব মণ্ডপের প্রস্তুতি শেষ বলে জানালেন জেলা শহরের বড়বাজারের হাড়োয়া সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সজল কুমার ভৌমিক। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর পূজায় নতুন নতুন সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জার কাজ করা হয়। এবারও তাই করা হচ্ছে। পূজার যাবতীয় উপকরণ, পুষ্পাঞ্জলি, চন্ডীপাঠ, প্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আরতির প্রস্তুতিও প্রায় শেষ।’

শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব পালন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রমেন্দ্র নাথ বর্ধন। তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। সবকটি মণ্ডপের জন্য পূজা উদযাপন কমিটি গঠন করা হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যাতে নিশ্চিন্তে পূজা উদযাপন করতে পারেন, সেজন্য সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা প্রশাসন মিলে দুর্গোৎসব সফল করতে ১৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানালেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অক্ষয় কুমার রায়। তিনি বলেন, ‌‘পূজা উদযাপন কমিটির সব সদস্য ও ভক্তের প্রতি এসব নির্দেশনা পালনের অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে পূজা উদযাপন করতে পারবো।’

প্রতিটি মণ্ডপে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার গোলাম সবুর। তিনি বলেন, ‘যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছে পুলিশ; নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।’

জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বলেন, ‘জেলার ৮৯১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৮৪, ডিমলা উপজেলায় ৭৬, ডোমার উপজেলায় ১০৫, জলঢাকা উপজেলায় ১৯১, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১৫৩ ও সৈয়দুপর উপজেলায় ৮২টি। সুন্দরভাবে পূজা উদযাপন করতে ছয় উপজেলায় ৪৪৫ দশমিক ৫০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সেগুলো বিতরণ করা হয়েছে।’