কারাগার চত্বরে কারারক্ষীর লাশ উদ্ধার, সন্দেহভাজনের ডোপ টেস্ট

বগুড়া জেলা কারাগারের সুরক্ষিত চত্বরে ড্রেন থেকে কারারক্ষী একরামুল হকের লাশ উদ্ধারের ঘটনার দুদিন পার হলেও কোনও কূলকিনারা হয়নি। কারা আইজির নির্দেশে ডিআইজি প্রিজনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সন্দেহভাজন কারারক্ষী মামুন হোসেনের ডোপ টেস্ট পজিটিভ এসেছে। নিহতের স্বজনরা দাবি করছেন, মামুন বিভিন্ন সময় একরামুলের কাছ থেকে টাকা ধার নিতেন। এটিএম কার্ড চুরি করে বুথ থেকে টাকা তুলতেন। তিনি এখনও একরামুলের মোবাইল ফোনের সিম ব্যবহার করছেন। তারা এ ঘটনাকে কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় হত্যা দাবি করে শিগগিরই আদালতে রক্ষী মামুনসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।

বগুড়া জেলা কারাগার সূত্র জানায়, কারারক্ষী একরামুল হক নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার কান্দা গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে। তিনি গত দুই বছর বগুড়া কারাগারে কর্মরত ছিলেন।

শনিবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় একরামুলের বড় ভাই হাবিবুর রহমান জানান, ছোট ভাই একরামুল তার ব্যক্তিগত সব তথ্য তাকে জানাতেন। বগুড়া জেলা কারাগারের একই ব্যারাকে বসবাসকারী রক্ষী মামুন হোসেন তার ভাইকে সমস্যা করতেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সিম হাতিয়ে নেন। এটিএম কার্ড চুরি করে বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করেন। কারাগারে চাল সরবরাহকারী নাজমুলকে দিয়েও একরামুলকে নির্যাতন করতেন। কিছুদিন আগে মামুন একরামুলের কাছ থেকে ১৩ হাজার টাকা ধার নিয়ে ফেরত দেননি। এ ছাড়া মামুন ওয়ালটন শোরুম থেকে টিভি বাকিতে কেনেন। এর গ্যারান্টার ছিলেন একরামুল।

হাবিবুর রহমান আরও অভিযোগ করেন, বগুড়া কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলার সুযোগে রক্ষী মামুন তার ভাইকে অন্যত্র হত্যা করে কালভার্টের নিচে লাশ ফেলে দিয়েছে। পুরো কারাগারে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও ঘটনাস্থলে কোনও ক্যামেরা নেই।

শনিবার ব্যারাকে থাকা একরামুলের ট্রাঙ্কের তালা ভাঙা হয়। স্বজনদের ধারণা, ট্রাঙ্কের চাবি সন্দেহভাজন রক্ষী মামুনের কাছে রয়েছে। তিনি এখনও একরামুলের মোবাইল ফোনে সিম ব্যবহার করছেন। এ ব্যাপারে তারা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই আদালতে মামুনসহ জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করবেন। এ ব্যাপারে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দিতে আদালতের কাছে আবেদন করা হবে।

বগুড়া জেলা কারাগারের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, নিহত রক্ষী একরামুল হকের পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে রক্ষী মামুন হোসেনের ডোপ টেস্ট করা হয়। চিকিৎসকরা পজিটিভ রিপোর্ট দিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে জেল সুপার ও অন্য কর্মকর্তারা মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

জেল সুপার আনোয়ার হোসেন জানান, রক্ষী একরামুল হকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় আইজি প্রিজনের নির্দেশে রাজশাহীর ডিআইজি প্রিজন কামাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুজন সদস্য হলেন জয়পুরহাট জেলা কারাগারের সুপার রিতেশ চাকমা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারের সুপার জাকির হোসেন।

বগুড়া সদর থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শহিদুল ইসলাম জানান, দুদিনেও তেমন কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

বগুড়া জেলা কারাগার সূত্র জানায়, রক্ষী একরামুল হকের বুধবার (১৮ অক্টোবর) রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ২ নম্বর ফটকে আরপি ডিউটি ছিল। রাত ৩টার সময় অপর কারারক্ষী মামুন হোসেনের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে মামুন ডিউটিতে আসেননি।

জেলার ফরিদুর রহমান রুবেল জানান, বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বেলা ২টার দিকে হারেজ নামে এক হাবিলদার তাকে জানান, রক্ষী একরামুল ব্যারাকে নেই। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রক্ষী মামুন হোসেন জানান, একরামুলের মরদেহ ২ নম্বর ফটকের কাছে কালভার্টের নিচে পড়ে আছে।

জেলর আরও জানান, কারারক্ষী মামুন ডিউটিতে না এলেও তিনি বিষয়টি তাকে অবহিত করেননি।

এ ব্যাপারে মামুন হোসেন জানান, মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করার কারণে তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাই রাত ৩টায় ডিউটিতে আসতে পারেননি। তবে তিনি ওই সময় ডিউটি কলার জুয়েলকে না আসার কারণ বলেছেন। এ ছাড়া তিনি আর কিছু জানেন না।