Hydrogen Car: কমে যাবে দূষণ! বড়-বড় গাড়িতে চলছে হাইড্রোজেন ইঞ্জিন বসানোর কাজ

ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়ির ক্ষেত্রে ব্যাটারির ব্যবহার বাড়লেও ট্রাক, বাস বা বড় আকারের যানের জন্য সেই প্রযুক্তি উপযুক্ত নয়৷ জ্বালানির বিপুল চাহিদা মেটাতে পারে হাইড্রোজেন৷ তার জন্য ইঞ্জিন ও অবকাঠামোর উন্নতির প্রয়োজন৷

গোটা বিশ্বে জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে৷ তাল মিলিয়ে জ্বালানি ও সম্পদের চাহিদাও বাড়ছে৷ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত পণ্য পাঠানো হচ্ছে৷ এর পরিণতি হিসেবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন আরও বেড়ে যাচ্ছে৷

পরিবহণ ক্ষেত্রকে সম্পূর্ণভাবে নির্গমনমুক্ত করার উদ্যোগ চলছে৷ ট্রাকে হাইড্রোজেন ইঞ্জিন বসানো কি সমাধানসূত্র হতে পারে? মালে মোটোর সিস্টেমস কোম্পানির ড. মার্কো ভার্ট বলেন, ‘বিশেষ করে ভারী ট্রাকে হাইড্রোজেনচালিত কম্বাসচন ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে আমরা সুবিধা দেখতে পাচ্ছি৷ আমাদের মতে, যে সব ট্রাককে ভারী মালপত্র নিয়ে লাখ লাখ কিলোমিটার অতিক্রম করতে হয়, সেই যানে কম্বাসচন ইঞ্জিনই উপযুক্ত৷”

আসলে বিষয়টি কিন্তু খুব সহজ৷ প্রচলিত কম্বাসচন ইঞ্জিনে নতুন কিছু যন্ত্রাংশ বসিয়ে হাইড্রোজেন জ্বালানি ব্যবহারের উপযুক্ত করা যায়৷ ডিজেল প্রযুক্তির ভিত্তিতেই সেই ইঞ্জিন চলে৷ শুধু এক্ষেত্রে কোনও নির্গমন ঘটে না৷ এভাবে ভবিষ্যতে ডিজেল ইঞ্জিন বাতিল না করে তাতে রদবদল ঘটানো সম্ভব৷

পিস্টনের মতো বেশ কিছু যন্ত্রাংশে রদবদল করতে হয়৷ মালে কোম্পানির মতো যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী যুগের দাবি মেনে পরিবর্তন ঘটিয়ে হাইড্রোজেনচালিত ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ তৈরি করছে৷ এমন যন্ত্রাংশের চাহিদাও বেড়ে চলেছে৷ ডয়েৎস কোম্পানির মার্কো স্টেকেলবাখ বলেন, ‘এটা একটা সাত দশমিক আট মাপের ডিজেল ইঞ্জিন, যা আমরা প্রস্তুত করেছি৷ ভিত্তিটা ভালো থাকায় আমরা সবকিছু একই রকম রেখেছি৷ সে কারণেই আমরা এই ইঞ্জিন বেছে নিয়েছি৷ শুধু হাইড্রোজেনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ যোগ করেছি৷ ভালো ভিত্তিকে হাইড্রোজেন ব্যবহারের খাতিরে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ হাইড্রোজেন ইঞ্জিন চালু করতে অনেক কম জ্বালানি লাগে৷ সে কারণে নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তির আরও বেশি প্রয়োজন হয়৷’

ইঞ্জিনের শক্তির সীমারেখা পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ ২০২৪ সাল থেকে নিয়মিত বড় আকারে উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে৷ প্রথমে নির্মাণের জায়গা বা হাসপাতালে জেনারেটরের ইঞ্জিন প্রস্তুত করা হবে৷ তখন হাইড্রোজেনের চাহিদা আরও বাড়বে৷ পরিবহণের ক্ষেত্রেও সেই প্রবণতা দেখা যাবে৷

জার্মানির জাতীয় হাইড্রোজেন পরিষদের অনুমান অনুযায়ী ২০৫০ সাল পর্যন্ত চাহিদা আট গুণ বেড়ে যাবে৷ মালে কোম্পানির কর্ণধার আর্ন্ট ফ্রানৎস বলেন, ‘রাজপথে হাইড্রোজেনচালিত ইঞ্জিনের প্রচলনের জন্য জ্বালানি ভরার পাম্পের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন৷ আবার এমন গ্যাস স্টেশন লাভজনকভাবে চালাতে হলে যথেষ্ট সংখ্যক যানও পথে নামাতে হবে৷ কমপক্ষে ৪০০ সাধারণ গাড়ি সেখানে হাইড্রোজেন ভরলে মুনাফা হতে পারে৷ তবে সেই লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন৷ কিন্তু মাত্র ২০টি ট্রাকই হাইড্রোজেন স্টেশনকে লাভজনক করার জন্য যথেষ্ট৷ বিশেষ করে নিয়মিত ট্রাক চলাচলের ক্ষেত্রে সেই লক্ষ্য পূরণ করা অবশ্যই সম্ভব৷’

গ্যাস স্টেশনে হাইড্রোজেনের দাম এখনো খুব বেশি৷ তবে অবকাঠামোর সম্প্রসারণ ঘটলে দাম কমার কথা৷ ১০০ কিলোমিটার অতিক্রম করতে সাধারণ গাড়ির এক কিলো হাইড্রোজেন লাগে৷ ১২ বছরের মধ্যে হাইড্রোজেনের দাম প্রায় অর্ধেক হয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন৷ অর্থাৎ ১৪ ইউরোর বদলে তখন ছয় ইউরো গুনতে হবে৷

ডয়েৎস নামের ইঞ্জিন প্রস্তুতকারক কোম্পানি বাণিজ্যিক যানের জন্য প্রপালশন ইঞ্জিন তৈরি করে৷ যেমন ট্রাক্টর, কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত অন্যান্য যান বা ট্রেনে হাইড্রোজেন ইঞ্জিনের অনেক সুবিধা রয়েছে৷ কোম্পানির প্রতিনিধি মার্কুস শ্ভানডারলাপ বলেন, ‘আমার কাছে ৩০০ পিএসের মতো খুব বড় কোনও ইঞ্জিন থাকলে বহুকাল ধরে ভারি কাজে সেটিকে ব্যবহার করা যায়৷ অর্থাৎ এক্সকাভেটরের মতো যানে যন্ত্রটি উচ্চ কার্যক্ষমতায় চালানো হবে৷ বিশাল পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজন মেটাতে ব্যাটারির মাপ বাড়িয়ে যেতে হবে৷ কিন্তু এক্সকাভেটরের মতো বড় যানের ক্ষেত্রেও কোনও এক সময়ে আরও বেশি ব্যাটারি রাখার জায়গা থাকবে না৷’

ভবিষ্যতে হাইড্রোজেন ইঞ্জিন পরিবহণ ব্যবস্থা আরো পরিবেশবান্ধব করতে সাহায্য করবে৷ তবে একই সঙ্গে অবকাঠামোর প্রসারও ঘটাতে হবে৷

(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)