বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের লাগাতার বিক্ষোভ, নামী ব্রান্ডের উৎপাদনে ধাক্কা

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প শ্রমিক বিক্ষোভের ধাক্কা লেগেছে আন্তর্জাতিক বাজারেও। বিশ্বের একধিক নামী ব্র্যান্ডকে পোশাক সরবরাহ করে সে দেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানা। বার্ষিক এই রপ্তানির পরিমাণ ভারতীয় মুদ্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে ব্যাহত হচ্ছে পোশাক সরবরাহ।

শনিবারও পোশাক শিল্প শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশের ঢাকা সংলগ্ন আশুলিয়া এলাকা। ওই এলাকাতেই পোশাক কারখানার ক্লাস্টার রয়েছে। কিন্তু শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে কারখানাগুলি।

শনিবার কিছু কারখানা খুলতে গেলেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শ্রমিকদের একাংশ। পুলিশের অনুমান অনুযায়ী প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক সকাল থেকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। তারা বেশ কয়েকটি কারখানায় ভাঙচূর চালান বলেও অভিযোগ। শ্রমিকরা কাজের শিফটে ঢুকতে গেলে তাদের লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয় বলে পুলিশ জানিয়ে। বাধা দিয়ে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় আন্দোলনকারী শ্রমিকরা। তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায় পুলিশ। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।

আশুলিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ সরোয়ার আলম সংবাদসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, আন্দোলনকারী কারখানা সংলগ্ন রাস্তা অবোধ করেন। তারা কারখানার আধিকারিক এবং অফিস লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে।

কেন এই বিক্ষোভ?

বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে মূলত মহিলারা কাজ করেন। তাদের মাসিক মজুরি শুরু ৮,৩০০ টাকা (৬,২৩৬ টাকা ভারতীয় টাকায়) থেকে। জীবনধারণের খরচ লাফিয়ে বাড়া সত্ত্বেও তাদের মজুরি বাড়েনি। শ্রমিকদের দাবি, মজুরি করা হোক ২৩,০০০টাকা (ভারতীয় মুদ্রা ১৭,৩৮০ টাকা)।

কিন্তু কারখানার মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) শ্রমিকদের মজুরি ২৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু তাতে শ্রমিকরা রাজি নয়। মালিক সংগঠনের দাবি মানলে খুব সামান্যই মজুরি বাড়বে বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। তাই তারা এক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে ধাক্কা খেয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাক সরবরাহ।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার জানিয়েছেন, ‘আমরা আশা করি ব্র্যান্ডগুলো শ্রমিকদের দাবি করা মজুরি প্রদান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।’

আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাহত সরবরাহ? 

কল্পনা আক্তার জানিয়েছেন, সপ্তাহব্যাপী এই বিক্ষোভের জেরে গ্যাপ, ওয়ালমার্ট, এইচএন্ডএম, জারা, ইন্ডিটেক্স, বেস্টসেলার, লেভিস, মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার, প্রাইমার্ক এবং আলডি-র মতো পোশাক সংস্থার উৎপাদন ধাক্কা খেয়েছে।

প্রাইমার্কের (আন্তর্জাতিক পোশাক বিক্রেতা সংস্থা) একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে কোনও ধাক্কা লাগেনি’।

এই দাবি মানতে নারাজ বিক্ষোভকারী পোশাক শ্রমিকরা। তাদের দাবি, লাগাতার এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলনে ব্যাহত হয়েছে উৎপাদন। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ ধাক্কা খাবে এটাই স্বাভাবিক।

প্রাইমার্কের মুখপাত্র জানিয়েছেন, আমরা আমাদের সরবরাহকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, যাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের কারখানাগুলি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।’ পরিস্থিতি দ্রুত বলে আশা করেছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ সরকার এই বিক্ষোভের কঠোর হাতে মোকাবিলা করছে। স্থানীয় এক পুলিশ কর্তার কথায়, বেতন বৃদ্ধির জন্য কারখানা ক্ষতি করার চেষ্টা হলে কঠোর ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।