Mounted Police Horse Death in Eden Gardens: ইডেনের বাজিতে পেয়েছিল ভয়, মৃত্যু মাউন্টেড পুলিশের ৬ বছর বয়সি ঘোড়ার

গত ৫ নভেম্বর ইডেন গার্ডেনে ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ শেষে বাজি ফাটানো হয়েছিল মাঠ জুড়ে। সেই আওজায়েই ভয় পেয়ে দৌড় দিয়েছিল মাউন্টেড পুলিশের দুই ঘোড়া। এর জেরে আহত হয়েছিলেন দুই পুলিশও। সেই দুই ঘোড়ার মধ্যে একটার নাম ছিল – ‘ভয়েস অফ রিসন’। তার মোটামুটি বাংলা তর্জমা করলে অর্থ দাঁড়ায় – ‘বিবেকের বার্তা’। তবে সেই ‘ভয়েস অফ রিসন’ স্তব্ধ হল। সেদিনের ঘটনার পর মৃত্যু হল ৬ বছর বয়সি ঘোড়ার। আলিপুর বডিগার্ডস লাইনসের আস্তাবলে ৩৯টি ঘোড়া আছে। সেই আস্তাবলের ২২ নং স্টলে থাকত ‘ভয়েস অফ রিসন’। তবে গত রবিবারের ঘটনায় মৃত্যু হয় তার। জানা গিয়েছে, ইডেনের বাইরে ময়দান থেকে বাজি ফাটানোর জেরেই ঘোড়াগুলি সেদিন এত আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। (আরও পড়ুন: মামলায় প্রভাব খাটানোর অভিযোগ কলকাতা HC-র বিচারপতির স্বামীর বিরুদ্ধে, কী বলল SC?)

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই মাউন্টেড পুলিশে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ‘ভয়েস অফ রিসন’ নামক ঘোড়াটি। এসএন ব্যানার্ডি রোডে দু’মাস প্রশিক্ষণ নেয় সে। খুব জলদিই পুলিশে খাপ খাইয়ে নিয়েছিল ‘ভয়েস অফ রিসন’। ঘোড়াটির হ্যান্ডলার জানান, সন্ধ্যায় ময়দানে টহল দিতে নাকি ওর খুব ভালো লাগত। খাবারের মধ্যে গাজর খেতে খুবই ভালোবাসত ‘ভয়েস অফ রিসন’।

জানা গিয়েছে, ২২টা ঘোড়া বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ ডিউটিতে বেরিয়েছিল রবিবার। তার মধ্যে ‘ভয়েস অফ রিসন’ সহ ৬টি ঘোড়াকে নিয়োগ করা হয়েছিল ইডেনের ক্লাবহাউজের বিপরীতে লেসলি ক্লডিয়াস শরণিতে। ম্যাচ শেষে সব দর্শক ইডেন ছাড়লে ডিউটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ‘ভয়েস অফ রিসন’-এর। তবে ডিউটি শেষে আর ঘরে ফেরা হয়নি ৬ বছর বয়সি ঘোড়াটার। জানা গিয়েছে, মাত্র ১০০ মিটার দূরে এভাবে বাজি ফাটায় ভয় পেয়ে গিয়েছিল মাউন্টেড পুলিশের সেই ৬টি ঘোড়া। এরপরই তারা এদিক-সেদিক ছুটতে শুরু করেছিল।

পুলিশ জানিয়েছে, সেদিন সন্ধ্যা ৮টা ৩৩ মিনিট থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ১৫০টি বাজি পোড়ানো হয়েছিল। প্রতিটি ১২৫ ডেসিবেল আওয়াজের ছিল। ‘ভয়েস অফ রিসন’-এর হ্যান্ডলার অনিমেশ চক্রবর্তী তাকে থামানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে তিনি পারেননি। পার্কিং লটের দিকে ছুটে চলা ‘ভয়েস অফ রিসন’ একটি গাড়ির খোলা দরজায় ধাক্কা খায়। তারপর উঠে সেই দরজায় লাথি মেরে ফের ছুটতে শুরু করে। এরপর অনেকগুলি বাইককে ক্ষতিগ্রস্ত করে সেটি। পরে পুলিশ ‘ভয়েস অফ রিসন’-কে শান্ত করতে সক্ষম হয়। ততক্ষণে ঘোড়াটি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। তাকে সিপিআর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। সেদিন লেসলি ক্লডিয়াস শরণিতে নিযুক্ত আরও যে ঘোড়া ছিল – হিস্টোরিয়ান, আইকনিক এবং চন্দ্রগুপ্তও জখম হয়। হিস্টোরিয়ানের পা কেটে গিয়েছিল। আইকনিক নামক ঘোড়াটি এখনও আতঙ্কে আছে। আর ‘ভয়েস অফ রিসন’-এর পাশের স্টলেই থাকত চন্দ্রগুপ্ত। সোমবার গোটা দিন সে উঁকি দিয়ে নিজের বন্ধুর খোঁজ করে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, ‘ভয়েস অফ রিসন’-এর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় ধাপায়।

এদিকে কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, গ্রুপ লিগের পরবর্তী ম্যচে (পাকিস্তান বনাম ইংল্যান্ড) ইডেনে বাজি পোড়ানোর জন্য এখনও অনুমতি চায়নি সিএবি। এরপর ১৫ বা ১৬ নভেম্বর ইডেনে সেমিফাইনালও হওয়ার কথা। তার জন্যেও এখনও বাজি পোড়ানোর অনুমতি চাওয়া হয়নি। জানা গিয়েছে, ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে এভাবে বাজি পোড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল বিরাট কোহলির জন্মদিন উদযাপনের জন্যেই। সেদিন মাঠের বাইরে থেকে বাজি শূন্যে ছাড়া হয়েছিল। মাঠে অনেক ভিআইপি থাকায় ভিতরে বাজি পোড়াতে চায়নি সিএবি। আর সেই কারণেই সেদিন মাঠের বাইরে থেকে এই বাজি পোড়ানোর অনুমতি দিয়েছিল পুলিশও। পুলিশ জানাচ্ছে, এর আগে সবসময়ই ইডেনের ছাদ থেকে বা ইডেনের বাগান থেকে বাজি ছাড়া হত শূন্যে। তাতে অভ্যস্ত ছিল ঘোড়াগুলি। তবে সেদিন এত কাছ থেকে এত জোরে জোরে আওয়াজ হওয়ায় তারা সেটা নিতে পারেনি। পুলিশ দাবি করেছে, বাজি যে এভাবে মাঠ থেকে ছাড়া হবে, সেই নিয়ে তাদের কাছে কোনও খবর ছিল না।