ODI World Cup | বদলা নয়, রোহিত

ঋষভ রায়, কলকাতা: ২০১৯ সালের ম্যাঞ্চেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়াম, মার্টিন গাপটিলের এক থ্রো ভেঙে দিয়েছিল উইকেট আর তার পাশাপাশি ১৪০ কোটি ভারতীয় স্বপ্নও। সেই ডাইরেক্ট হিটে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি রান আউট হয়েছিলেন। ১৮ রানে ম্যাচ হারতে হয়েছিল ভারতীয় দলকে। সেটা ছিল বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে মঞ্চ। ফের একবার চার বছর পর আরেক বিশ্বকাপ (ODI World Cup 2023) সেমিফাইনালেই, ১৫ নভেম্বর মুখোমুখি হতে চলেছে ভারত ও নিউজ়িল্যান্ড (IND vs NZ)। ম্যাঞ্চেস্টারের বদলে এবার বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের আসর বসবে মুম্বইতে।

ম্যাঞ্চেস্টারে ভারতের পরাজয়ের পর ক্যামেরা ঘোরানো হয়েছিল ভারতীয় সাজঘরের দিকে। সেই ওল্ড ট্রাফোর্ডের ব্যালকানিতে দাঁড়িয়ে রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) অশ্রুশিক্ত চোখের ফুটেজ এখনও সব ভারতবাসীর মনে তাজা। সেই রোহিত এবার টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক। বুধবারের ম্যাচ আবার তাঁরই ঘরের মাঠ ওয়াংখেড়ে। এবার পালা সব কিছু সুদ আসলে চুকিয়ে দেওয়ার! বদলা নেওয়ার! তাই কি? এমনটা কিন্তু একেবারেই মনে করছেন না দীনেশ লাড (Dinesh Lad)। যার হাতে আক্ষরিক অর্থে তৈরি হয়েছেন রোহিত। ভারতীয় দলের অধিনায়কের ছোটবেলার কোচ।

এবিপি লাইভ বাংলাকে একান্ত সাক্ষাৎকারে (ABP Exclusive) দীনেশ স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘খেলায় তো হার জিত আছেই। বদলা বলে কিছু হয় না। সবটাই আত্মবিশ্বাসের খেলা। ভারত এই বিশ্বকাপে দুরন্ত ফর্মে রয়েছে। বদলা নেওয়ার মানসিকতা নিয়ে কোনও দল মাঠে নামতে পারে। এটা একেবারেই নেতিবাচক চিন্তাভাবনা। টিম ইন্ডিয়ার সব খেলোয়াড়রাই ভাল ফর্মে রয়েছে। আমাদের বোলারদের সামলাতে গিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটাররা নাকানি চোবানি খাচ্ছে। বিরাট কোহলি কী দুরন্ত ফর্মে। রাহুল, শ্রেয়স সবাই ভাল খেলছে। নক আউট ম্যাচ, বদলা নিতে হবে এসব ভেবে আলাদা করে চাপ নেওয়ার তো প্রয়োজন নেই। যেভাবে এতদিন পর্যন্ত খেলেছে। তাতে সাফল্য এসেছে। সেমিফাইনালও তো আদপে লড়াইটা ব্যাট বলেরই হবে। যে ফর্মুলা মেনে এতদিন সাফল্য এসেছে, সেই পথেই এই ম্যাচেও খেলতে হবে।’

নেদারল্যান্ডসকে গত ম্যাচে হারিয়ে বিশ্বকাপে নাগাড়ে নয় ম্যাচ জিতে নিয়েছে ভারতীয় দল। আর কোনও ভারতীয় দলের এই রেকর্ড নেই। গোটা বিশ্বকাপ জুড়েই আগ্রাসী মানসিকতা নিয়ে খেলে ভারতের দুরন্ত সাফল্যের জন্য বিশেষজ্ঞ থেকে সমর্থক সকলেই অধিনায়ক রোহিতকে বাহবা দিচ্ছেন। ডাচদের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে টিম ইন্ডিয়ার হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড়ও নেতা রোহিতকে প্রশংসায় ভরিয়েছেন। ক্যাপ্টেন রোহিতের সাফল্যের রহস্যটা ঠিক কী?

দীনেশ কিন্তু রোহিতের ম্যান ম্যানেজমেন্টকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন। রোহিতকে ‘বোলারস ক্যাপ্টেন’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘রোহিত ভাল দিক হল ও সবার কথা শোনে। বোলারদের দিকটা ভাবে। ওদের যথেষ্ট স্বাধীনতা দেয়। অনেক সময় রেগে গিয়ে সেই মুহূর্তে যদি কাউকে বকাঝকাও করে দেয়। পরমুহূর্তেই তাদের আবার কাছে ডেকে নেয়। তাদের সঙ্গে কথা বলে। সেই কারণেই তো সকলেই ওর উপর আস্থা রাখে। তার প্রভাব পারফরম্যান্সেও পড়ছে। দারুণভাবে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছে ও।’

আর ব্যাটার রোহিত! গত বিশ্বকাপের মতো হয়তো এ বারের টুর্নামেন্টে পাঁচ সেঞ্চুরি নেই রোহিতের ঝুলিতে। তবে এ বারের টুর্নামেন্টেও তিনি অনবদ্য ফর্মে। এখনও পর্যন্ত টুর্নামেন্টের চতুর্থ সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। নয় ম্যাচ খেলে ৫৫.৮৮ গড়ে ৫০৩ রান করে ফেলেছেন। সচিনের পর মাত্র দ্বিতীয় ভারতীয় হিসাবে দুই বিশ্বকাপে ৫০০ রানের গণ্ডি পার করেছেন রোহিত। ২০১৯ বিশ্বকাপে তাঁর দখলে ছিল ৬৪৮ রান। আর কোনও ক্রিকেটার কিন্তু পরপর দুই বিশ্বকাপে ৫০০ রানের গণ্ডি পার করতে পারেননি। এই বিশ্বকাপে শুধু যে রান করছেন রোহিত তাই নয়, তিনি দ্রুত গতিতে রান করছেন। তাঁর ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট ১২১.৪৯।

শুরুতেই রোহিতের আগ্রাসী ব্যাটিং ভারতের মুশকিলআসান কর দিচ্ছে বলে অকপটে মেনে নিয়েছেন দ্রাবিড়। রোহিতের ছেলেবেলার কোচের মত সম্ভবত নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেলছেন রোহিত। তাই চাপমুক্ত হয়ে নিজের সবটা উজাড় করে দিচ্ছেন তিনি। ‘এটাই সম্ভবত রোহিতের শেষ বিশ্বকাপ। পরের বিশ্বকাপের সময় ওর ৪০ বছর বয়স হয়ে যাবে। সেই সময় ও খেলবে কি না, সেই নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সেই কারণেই ও আরও মরিয়া হয়ে মাঠে নামছে, নিজের সেরাটা দিচ্ছে। এর জন্য ভিন্ন কিছুই করেনি ও। দলের স্বার্থেই নিঃস্বার্থভাবে খেলছে। যে কারণে শতরানও হাতছাড়া করেছে। শুরুতে ও যে ইনিংসটা খেলে দিয়ে যাচ্ছে তাতে কোহলি, রাহুলদের উপর থেকে চাপটাও হালকা হয়ে যাচ্ছে। মিডল ওভারগুলিতে এক, দুই রান করে নিয়ে ইনিংস গড়ার সময়টা পাচ্ছে ওরা। আর ভারতীয় দলের ব্যাটিং এমনিও খুব শক্তিশালী’ মত দীনেশের।

দিনকয়েক আগেই রোহিতের ফর্ম নিয়েও কিন্তু কম চর্চা হয়নি। তবে সেটা তো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ছিল। লোকজন অহেতুক সেটা নিয়ে বেশি চিন্তাভাবনা করছিল এবং তাঁর ছাত্রকে অযথাই সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে বলে খানিকটা আক্ষেপের সুরে বলেন দীনেশ।

এই ভারতীয় দলের তারকাদের মধ্যে রোহিত কিন্তু একা নন, রয়েছেন তাঁর আরেক শিষ্যও। তিনি শার্দুল ঠাকুর (Shardul Thakur)। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে খেললেও, হালে ভারতীয় একাদশে সুযোগ পাচ্ছেন না শার্দুল। তবে সেই নিয়ে আক্ষেপ নয়, বরং দুরন্ত ফর্মে থাকা মহম্মদ শামির প্রশংসাই করছেন শার্দুলকে কোলেপিঠে গড়া দীনেশ। ‘হার্দিকের অনুপস্থিতিতে ভারতীয় দলে একটা ব্যাটার কমে গিয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই টিম ম্যানেজমেন্টকে বাড়তি একজন ব্যাটার নিয়ে খেলতে হচ্ছে। শার্দুলের বোলিং নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে না। ও বল হাতে তুলে নিয়ে সবসময়ই দলকে উইকেট এনে দিয়েছে, তা নতুন বলে হোক বা পুরনো বলে। আগ্রাসী বোলিংটাই তো ওর ইউএসপি। ব্যাটিংয়ের হাতও যথেষ্ট ভাল। তবে বর্তমানে গোটা বোলিং লাইন আপ যেমন ফর্মে রয়েছে। শামি যেমন বল করছে, তা এককথায় অনবদ্য। টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত তাই মেনে নিতেই হবে। দলের স্বার্থ তো সবার আগে।’ মত তাঁর। 

তবে ভারতীয় দলে তাঁর দুই শিষ্য থাকলেও, মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়েতে কিন্তু তাঁকে দেখা যাবে না। শুধু এই ম্যাচ নয়, রোহিতের কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচই তিনি ওয়াংখেড়েতে বসে দেখেননি বলে জানান দীনেশ। ‘এর পিছনে কোনও সংস্কার বা কিছু নেই। আমি আজ বলে নয়, কোনওদিনই ওর আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখতে ওয়াংখেড়েতে যায়নি। হ্যাঁ, একেবারে ওর খেলা দেখিনি সেটা না। রঞ্জি ট্রফিতে ওর কয়েকটা ম্যাচ দেখেছি। আইপিএলেরও এক আধটা ম্যাচ দেখতে ওয়াংখেড়ে গিয়েছি। তবে ভারতের হয়ে ওর কোনও খেলা দেখতে ওয়াংখেড়ে যাইনি। কাল ক্যাম্পে অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটারদের অনুশীলন আছে, ওদের নিয়েই ব্যস্ত থাকব আমি।’ জানান দীনেশ।

ওয়াংখেড়েতে রোহিতের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল ১০-এ ১০ করে রবিবার মেগা ফাইনালের টিকিট বুক করতে পারে কি না, এখন সেটাই দেখার অপেক্ষা। দুই শক্তিধর দেশের মধ্যে কিন্তু এক হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচের সাক্ষী থাকতে চলেছে ওয়াংখেড়ে।

আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন

https://t.me/abpanandaofficial

আরও পড়ুন: সেমিতে ফের সামনে কিউয়িরা, কুলদীপের হুঙ্কার ‘মাঝে ৪ বছর কেটে গেছে’