ব্রহ্মকাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের একটি নির্মানাধীন টানেলে ধস নেমেছিল গত ১২ নভেম্বর। তিনদিন পরও অবশ্য উদ্ধার করা গেল না সেই শ্রমিকদের। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ৪০ জনেরও বেশি শ্রমিক সেই ধ্বংসস্তূপের পারে আটকে আছেন। ধীর ধীরে সেই শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অনেকেই বমি করছেন। মাথা ব্যথায় চোখ খুলে রাখতে পারছেন না অনেকেই। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলা চিকিৎসক ডঃ বিএস পোকরিয়াল বলেন, ‘ধ্বংসস্তূপের ওপাশে থাকা শ্রমিকরা ধীরে ধীরে অসুস্থবোধ করতে শুরু করেছেন। আমরা মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট পাঠিয়েছি পাইপ দিয়ে। তবে আমরা ওআরএস পাউচ পাঠাতে পারিনি। আমাদের আশঙ্কা, ওআরএস পাউচ সেই পাইপে আটকে যেতে পারে। এই একমাত্র পাইপ দিয়েই জল ও খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে।’ ডঃ পোকরিয়াল জানান, শ্রমিকরা ধ্বংসস্তূপের ওপারে প্রায় ১ কিমি এলাকায় ঘোরাফেরা করতে পারছেন। এছাড়া সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগও আছে। (আরও পড়ুন: জম্মু ও কাশ্মীরে গভীর খাদে পড়ল যাত্রীবাহী বাস, মৃত ৩৮, আরও অনেকের মৃত্যুর শঙ্কা)
এদিকে উত্তরকাশির মুখ্য মেডিক্যাল অফিসার ডঃ আরসিএস পানওয়ার বলেন, ‘টানেলে আটকে পড়া শ্রমিকদের অনেকেরই গ্যাস্ট্রাইটিস দেখা দিয়েছে। অনেকেরই শরীর আবার উদ্বেগের কারণে খারাপ হচ্ছে। তবে যে সব প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সামগ্রী পাঠানো যায়, অনবরত তা পাঠিয়ে চলেছি আমরা। ৭০০০ লিটার ধারণ ক্ষমতার প্রায় ২৫-৩০টি বড় আকারের অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে টানেলে অক্সিজেন সরবরাহের কাজে আসবে সেগুলি।’
রিপোর্ট অনুযায়ী, সিল্কইয়ারা এবং দন্ডলগাওঁয়ের মাঝে তৈরি হচ্ছিল এই টানেলটি। রবিবার খুব ভোরে সেই টানেলে ধস নামে। এই গোটা টানেলটি সাড়ে চার কিলোমিটার লম্বা বলে জানা গিয়েছে। তারই মধ্যে ১৫০ মিটার লম্বা এলাকা জুড়ে ধসটা নামে গত ১২ নভেম্বর ভোর ৪টে নাগাদ। জানা যায়, ধসের খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান উত্তরকাশির পুলিশ সুপার অর্পণ যদুবংশী। তাঁর তদারকিতেই শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, দমকল শুরু করে উদ্ধারকাজ। জাতীয় সড়ক উন্নয়ন কর্পোরেশনের কর্মীরাও উদ্ধারকাজে হাত লাগান। জানা গিয়েছে, টানেলের সামনের দিক থেকে ভিতরের দিকে প্রায় ১৫০ মিটার জমি ধসে পরে ওপর থেকে। অর্থাৎ, টানেলের ছাদ ধসে পড়ে। তাতেই আটকা পড়ে যান শ্রমিকরা। প্রসঙ্গত, ব্রহ্মকাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কটি চারধাম রোড প্রোজেক্টের অংশ। এই সড়ক সারা বছর সব ধরনের প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেই চালু থাকার কথা। এই সড়কটি তৈরি হলে উত্তরকাশি এবং যমুনোত্রীর মধ্যে যারাপথ ২৬ কিলোমিটার কমে আসবে।
এদিকে উত্তরাখণ্ডে নির্মীয়মাণ টানেল বিপর্যয়ের জেরে আটকে রয়েছেন বাংলার তিন শ্রমিকও। সে বিষয়ে খোঁজ-খবর নিলেন বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। জানা গিয়েছে, বাংলার যে ৩ পরিযায়ী শ্রমিক আটকে রয়েছেন তাদের নাম হল – জয়দেব প্রামাণিক, মনির তালুকদার এবং সৌভিক পাখিরা। জানা গিয়েছে, ওই টানেলের ৪০ মিটার খনন করে উদ্ধারের পরিকল্পনা করছে উদ্ধারকারী দল। এদিকে ধ্বংসস্তূপের থেকে একটি বড় স্ল্যাব সরাতে সক্ষম হয়েছে উদ্ধারকারী দল। সেখানেই ভগ্নাবশেষের মধ্যে দিয়ে ৯০০ মিলিমিটারের পাইপ ঢোকানো হয়। সেই পাইপ দিয়েই যাবতীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে আটকে পড়া শ্রমিকদের।