খুঁজে খুঁজে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙছে অপরাধীরা

সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হরতাল-অবরোধে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের মতো নানা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে অপরাধীরা। এসব অপরাধের দায় থেকে রেহাই পেতে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে রেখে যাচ্ছে তারা। যেসব জায়গায় সিসিটিভি কাভারেজ নেই, সেসব জায়গা খুঁজে খুঁজে পরিবহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে বলেও জানাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।  

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বলছে, নাশকতাকারী বা অপরাধীরা যে ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে তা অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এরপরও থামছে না গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা।

গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ডিএমপির পক্ষ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয় আশপাশের এলাকাগুলোয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে নয়া পল্টন, কাকরাইল, পল্টনসহ আশপাশের এলাকায় স্থাপন করা সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ভাঙচুর করে বিএনপির সমর্থকরা।

এছাড়া গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর মিরপুর ও পল্লবী এলাকার আশপাশের বিভিন্ন জায়গার সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। শুধু রাজধানী নয়, গাজীপুর ও আশুলিয়া এলাকায়ও সংঘর্ষে জড়িয়ে আন্দোলনকারীরা প্রমাণ লোপাট করতে সিসিটিভি ক্যামেরার ওপর হামলা চালায়।

সূত্র বলছে, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি, হরতাল, অবরোধ কিংবা শ্রমিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চার শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়েছে। যদিও সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করার আগের ফুটেজগুলো সংগ্রহে রয়েছে। ক্যামেরা ভাঙলেও সেই সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে রেকর্ড হওয়া ফুটেজ সংরক্ষিত থাকে একটি সুরক্ষিত জায়গায়। পরবর্তীতে সেসব সিসিটিভি ক্যামেরার ছবি দেখে ক্যামেরা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত কিংবা নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দেখা গেছে, রাজনৈতিক কর্মীরা যেমন নাশকতা করছে, আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জ্যাকেট কিংবা ‘প্রেস’ লেখা জ্যাকেট পরেও অনেকে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। পরে তাদের পরিচয় শনাক্তও করা হয়েছে।

গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বর্তমান চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি শ্রমিক আন্দোলনকে উসকে দিতে একটি গোষ্ঠী কাজ করছে। বিশেষ করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের গুজবে বা কারও উসকানিতে পা না দিতে সতর্ক করা হয়েছে একাধিক বৈঠকে। যদিও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা দাবি করে থাকেন, ভাঙচুর বা সহিংসতার সঙ্গে তারা জড়িত না। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় তাদের আন্দোলনকে কারা প্রশ্নবিদ্ধ করছে বা নাশকতা করছে। এটা শ্রমিক নেতাদেরই খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে।

ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২৮ অক্টোবর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা যেভাবে পুলিশের ওপর চড়াও হয়েছে এবং এক পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তা সবাই দেখতে পেয়েছি। এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে, অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেদিনের ঘটনায় নিরাপত্তার জন্য স্থাপন করা সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে বিএনপির সমর্থকরা। এরপরও কারা সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করেছে, তারা কী কী নাশকতার সঙ্গে জড়িত এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে তদন্ত চলমান রয়েছে।