জাতীয় পার্টির দুর্গে নৌকা চান ১৫ আ.লীগ নেতা

জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রংপুর-৩ (সদর) আসনে এবার আওয়ামী লীগের ১৫ নেতা মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছেন। এই আসনে জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচন লড়তে মনোনয়ন নিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের।

তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নেওয়া অনেকেই লাইম লাইটে আসতে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে করার জন্য প্রার্থী হতে আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তবে যারা মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছেন তাদের দাবি মনোনয়ন পেলে নিশ্চিতভাবে জয়ী হয়ে আসনটি দলকে উপহার দিতে পারবেন।

রংপুর নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় নগরী রংপুরের সিটি করপোরেশনের ২৩টি ওয়ার্ড ও চার ইউনিয়ন নিয়ে রংপুর-৩ আসন গঠিত। এখানে মোট ভোটার হচ্ছে পাঁচ লাখ ১৯ হাজার ৯৭০জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৬৩ হাজার ১৬৯ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৫৬ হাজার ৭৯৯ জন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসনে ১৫ নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্সের প্রেসিডেন্ট সাবেক ছাত্রনেতা রেজাউল করিম মিলন, রংপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসিমা জামান ববি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রোজী রহমান, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুল, রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা নবী উল্লাহ পান্না, স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহানগর সভাপতি আতাউউজ্জামান বাবুসহ অন্যরা।

তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলেছেন, যারা দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন তাদের বেশিরভাগের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেই কোনও যোগাযোগ নেই। অনেকের নেই জনসম্পৃক্ততা। ভোটাররা অনেককে চেনেনও না। অনেকে আবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন।

জানা গেছে, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের পর এই আসনে আওয়ামী লীগের কোনও প্রার্থী জয়লাভ করতে পারেননি। ফলে এই আসনে একজন যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী চান দলের নেতাকর্মীরা।

১৯৯১ সাল থেকে আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে। দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ আসনে বার বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমান এমপি হচ্ছেন এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদ।

তবে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন রংপুর আর জাতীয় পার্টির নয়। এরশাদকালে যা ছিল তাতে ফাটল ধরেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে ২০০৮ সালের পর রংপুরে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। রংপুরকে বিভাগ, সিটি করপোরেশন, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহসহ রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোর যে উন্নয়ন হয়েছে সে কারণে জনগণ আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে জয়ী করবে।

এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার প্রেসিডেন্ট মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী রংপুরের পুত্রবধূ। ফলে এখানকার উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে এমন কোনও সেক্টর নেই যেখানে উন্নয়ন হয়নি। আমাকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে জনগণের পাশে থাকবো এবং আরও উন্নয়ন কার্যক্রম করবো।’

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রংপুর সিটি করপোরেশনসহ পুরো সদর-৩ আসনের প্রতিটি পাড়া মহল্লা গ্রামে গণসংযোগ করেছি। এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কার্যক্রমের বিষয় প্রচার করিনি। শুধু তাই নয়, দলকে সুসংগঠিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দলীয় মনোনয়ন পেলে এখানে দীর্ঘদিনের বন্ধ্যত্ব কাটাতে সক্ষম হবো।

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ রংপুর মহানগরে এখন সবচেয়ে শক্তিশালী দল। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আর সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে  নির্বাচনে জয়ী হবে আওয়ামী লীগ।

রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, মনোনয়ন পেলে রংপুর সদর আসনটি নিশ্চিতভাবে আওয়ামী লীগকে উপহার দেবো।