গাজায় কি হামাসের বিকল্প হতে পারবে আব্বাসের পিএলও?

১৯৯৩ সালে স্বাক্ষরিত হওয়া অসলো চুক্তির তিন দশক পেরোলেও ফিলিস্তিনি সংকট এখনো সেই আগের মতো। তখনকার মতো এখনও যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান। এই পরিস্থিতিতে হামাসকে হটিয়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী জোট প্যালেস্টিয়ান লিবারেশন অর্গানাইজেশন পিএলও কি পারবে গাজা শাসন করতে তাই নিয়ে আলোচনায়-সমালোচনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বিশ্লেষকরা। যদিও ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এর আগেই দাবি করেছেন স্থানীয় জনগণের বৈধ ও একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে পিএলও। 

অসলোর  চুক্তি তৎকালীন সময়ে  ফিলিস্তিনকে গাজা ও পশ্চিম তীরের জেরিকোতে কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয়। কথা হয় পাঁচ বছর পর পর সরকার পরিবর্তন হবে। তবে কাগজে কলমে শাসনের সুযোগ দিলেও তা কখনো হয়ে ওঠেনি। এক পর্যায়ে ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ আনে ইসরায়েল এবং এরই জের ধরে গাজার বাইরে তাদের চলাচল বন্ধ করা হয়। ২০০৬ সালের আগ পর্যন্ত কোনও নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়নি।  ২০০৬ সালের সংসদ নির্বাচনে চমকপ্রদ সাফল্য পায় হামাস। এতে গাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ চলে যায় হামাসের হাতে। কিন্তু ফিলিস্তিনের প্রধান রাজনৈতিক দল ফাত্তাহ ও পশ্চিমা সমর্থকরা হামাসকে পশ্চিম তীর থেকে সরিয়ে দেয়।  শুরু হয় রাজনৈতিক কোন্দল। তবে অবশেষে ২০০৭ সালে ক্ষমতায় চলে যায় হামাসের হাতে।  

পুরোনো রেশ ধরে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্লেষকরা বলছেন, হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোকে এক করার জন্য এর মূল ভিত্তি প্রসারিত করতে হবে। তারা বলেন, নতুন নেতৃত্ব দরকার যার জন্য নির্বাচন প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে   ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বি-রাষ্ট্রীয় তত্ত্ব হতে পারে সবচেয়ে ভালো সমাধান।

এদিকে ৭ই অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলা ফিলিস্তিনি শাসনের প্রতি ইসরায়েলি আস্থাকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে। যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিতও হয়, তাহলে হামাস আবার জয়ী হবে। এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। 

অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলছেন, গাজাকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অধীনে ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরের সঙ্গে একীত্রকরণ করা উচিত।

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জাকারিয়া আল-কাক বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা তাদের নেতৃত্ব অর্জনের জন্য বছরের পর বছর ধরে আলোচনা করছে। তিনি বলেন, এইটা শুধুমাত্র তাদের প্রত্যাশা না তারা যেকোন মূল্যে এই নেতৃত্ব অর্জন করতে চায়। 
এদিকে ফিলিস্তিন বলছে, ইসরায়েলকে প্রতিরোধ করার জন্য তারা চাপের মধ্যে রয়েছে। এজন্যই হামাসকে সমর্থন করছে। আল কুদস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি সারি নুসিবেহ বলছেন, হামাসের কারণে ইসরায়েলকে হঠাৎ করেই খুব অরক্ষিত মনে হয়েছে। ৭ অক্টোবর হামাস যে আকস্মিক হামলা চালিয়েছে তার তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনিরা হামাসকে স্বার্থের জন্য নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে দেখছে।

পিএলও জোটটি গঠন করেছিলেন ফিলিস্তিনের জনগণের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত। বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস মাহমুদ আব্বাস ফিলিস্তিনের পাশাপাশি পিএলও এবং  সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল ফাতাহেরও প্রেসিডেন্ট।

সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস