একলা চলো নীতির জেরেই তিন রাজ্যে ভরাডুবি কংগ্রেসের, এবার কি শিক্ষা নেবে?‌

তিনটি রাজ্যে বিজেপিকে এককভাবে হারাতে পারল না কংগ্রেস। তেলাঙ্গানা হয়ে রইল সান্ত্বনা পুরষ্কার। ক্ষমতায় না থেকেও ফিরল কংগ্রেস। এই একলা চলার নীতিতেই ধাক্কা খেল কংগ্রেস বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ মধ্যপ্রদেশের ২৩০টি বিধানসভা আসন। তার মধ্যে মাত্র ছ’টি চেয়েছিলেন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। কিন্তু তা দিতে রাজি হননি রাহুল গান্ধী–মল্লিকার্জুন খড়্গেরা। অখিলেশ ঘোষণা করেছিলেন, কংগ্রেসের ‘বেইমানির’ জবাব দেবেন। এবার নির্বাচনের ফলে দেখা যাচ্ছে, উত্তরপ্রদেশ লাগোয়া বুন্দেলখণ্ড–বাঘেলখণ্ড এবং বিন্ধ্য অঞ্চলে কংগ্রেসের ভোট কেটেছেন সমাজবাদী প্রার্থীরা। হিন্দি বলয়ের অন্য দুই রাজ্য ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, সাংগঠনিক দুর্বলতা, প্রচারের দিশাহীনতা এবং ‘একলা চলো’ নীতির জন্য।

এই একলা চলা নীতির জেরেই অনেক আসনে ভোট কাটাকাটির জেরেই জয় হাসিল করেছে বিজেপি। এই ফলাফল থেকে কংগ্রেস শিক্ষা নেবে কিনা সেটা পরবর্তী পদক্ষেপ বলবে। আপাতত ‘দাদাগিরির দিন শেষ’ বলেই হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যের ফলাফল বার্তা দিয়েছে। বিজেপির মোকাবিলা করা যে একক শক্তিতে কংগ্রেসের পক্ষে সম্ভব নয় সেটা আবার প্রমাণিত হল। ছত্তিশগড়ের জনজাতি এলাকায় সক্রিয় ‘গন্ডোয়ানা গণতন্ত্র পার্টি’ কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। তার ফল ভুগেছে কংগ্রেস। অন্যান্য দলও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগ তুলে পৃথকভাবে লড়েছিল।

গুজরাটের প্রভাবশালী জনজাতি বিধায়ক ছোটু বাসবের দল ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টি আগে কংগ্রেসের সঙ্গে ছিল। ২০১৮ সালে রাজস্থানের বিধানসভা নির্বাচনে একক শক্তিতে লড়ে দু’টি আসনে জিতেছিল। এবার কংগ্রেসের কাছে কয়েকটি আসন চেয়েও পায়নি। তাই বেশ কিছু আসনে প্রার্থী দিয়ে ভোট কেটেছে তারা। মায়াবতীয় বিএসপি এবং চন্দ্রশেখর আজাদের আজাদ সমাজ পার্টিও তিন রাজ্যে কংগ্রেসের দলিত ভোটে কেটেছে। ফলে একলা চলতে গিয়ে ক্ষতিই হয়েছে কংগ্রেসের। ছত্তিশগড়ের আদিবাসী নেতা অরবিন্দ নেতম কংগ্রেস ছেড়ে নতুন দল ‘হামার রাজ পার্টি’ গড়ে ভোট কাটায় সুবিধা পেয়েছে বিজেপি। ওবিসি নেতা ভূপেশের কারণে প্রভাবশালী দলিত সতনামী সংগঠনের ভোটও কংগ্রেস পায়নি।

আরও পড়ুন:‌ ‘‌রাজ্যের সম্পদ বিক্রির ম্যান্ডেট পেলেন মোদী সরকার’, ইনসাফ যাত্রা থেকে তোপ মীনাক্ষীর‌

তেলাঙ্গানাতে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলেও সেটা চাপের মধ্যে দিয়েই আসতে হয়েছে। কারণ এখানেও সেই কংগ্রেসে দাদাগিরি। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির রাজ্য তেলাঙ্গানা। এখানে কংগ্রেসের দাদাগিরিতে রুষ্ঠ হয়ে পৃথক লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দেশের বৃহত্তম বামপন্থী দল। এখানের ১১৯টি আসনের মধ্যে মাত্র তিনটি আসন চেয়েছিল সিপিএম। কিন্তু সেটা হয়নি। এবার এখানে তীব্র প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া থাকায় কংগ্রেস তেলাঙ্গানায় মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের দলকে হারিয়েছে। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে একলা লড়লে কংগ্রেসকে আবার রাজনৈতিক মাশুল দিতে হতে পারে। আগামী ৬ ডিসেম্বর ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে তো কংগ্রেসকে কথা শুনতেই হবে।