Saika Ishaque’s Coach Shivsagar Singh Narrates Spinner’s Spirted Journey Following Her Maiden India Call Up ABPP

কলকাতা: সেপ্টেম্বরে আয়োজিত এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছিল ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল (Indian Women’s Cricket Team)। তার পর দুই মাসেরও অধিক সময়ের বিরতি। অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে। ৬ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে (IND W vs ENG W) টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছে ভারতীয় মহিলা দল। হরমনপ্রীত কৌররা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের বিশ ওভারের সিরিজ়ে পাশাপাশি একটি টেস্ট ম্যাচ খেলবেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও হরমনপ্রীত কৌররা (Harmanpreet Kaur) একটি টেস্ট খেলবে।

এই পাঁচ ম্যাচের জন্য ইতিমধ্যেই দল ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে বিসিসিআইয়ের তরফে। বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীরা এই পাঁচ ম্য়াচের দিকে বিশেষ নজর রাখবেন। কারণ ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ়ে বাংলার রিচা ঘোষ, তিতাস সান্ধু তো রয়েছেনই পাশাপাশি প্রথমবার উভয় ফর্ম্যাটেই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন বাংলার আরেক তারকা ক্রিকেটার সাইকা ইশাক (Saika Ishaque)।

এ বছরের আয়োজিত উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগে দুরন্ত পারফরম্যান্সই তাঁকে লাইমলাইটে এনে দেয়। বাঁ-হাতি স্পিনার সাইকা ইশাক ১০ ম্যাচ খেলে যুগ্মভাবে পঞ্চম সর্বোচ্চ ১৫টি উইকেট নেন। শুধু উইকেট নেওয়ার ক্ষমতাই নয়, সাইকার ইনিংসের বিভিন্ন সময়ে বোলিং করার ক্ষমতাও বেশ প্রভাবিত। তাঁর ১৩.৬৩-র স্ট্রাইক রেট এবং ১৬.২৬-র গড়ও বেশ চমকপ্রদ। ইনিংসের ভিন্ন ভিন্ন সময় বোলিং করলেও, বাঁ-হাতি স্পিনারের ইকোনমি ছিল মাত্র সাত রান প্রতি ওভার।

মেগ ল্যানিং, সোফি ডিভাইন, অ্যালিসা হিলি, লরা উলভার্টদের মতো বিশ্ববন্দিত ব্যাটারদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্টে নিজের স্পিন বোলিংয়ে  ছাপ ছাড়তে সক্ষম হন সাইকা। স্বাভাবিকভাবেই এই পারফরম্যান্স জাতীয় নির্বাচকদের নজর এড়ায়নি। সম্প্রতি সিনিয়র মহিলা দলের ইন্টার জোনাল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টেও সাইকা বল হাতে বেশ ভালই পারফর্ম করেছেন। এর সুবাদেই প্রথমবার জাতীয় দলেও ডাক পেলেন ২৮ বছর বয়সি বাংলার স্পিনার।

তবে ছবিটা কিন্তু সবসময় এমন ছিল না। আজ থেকে বছর তিন চারেক আগেই ছবিটা বরং সম্পূর্ণ ভিন্নই ছিল। বাংলার দল থেকেও খারাপ ফর্মের জন্য বাদ পড়তে হয়েছিল তাঁকে। সেইসময় বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার শিবসাগর সিংহের (Shivsagar Singh) সান্নিধ্যে আসেন সাইকা। তাঁর অধীনেই শুরু হয় দলে ফেরার লড়াই। কড়া কসরত কাজেও দেয়। বাংলা দলে তো ফেরেনই। ঘরোয়া ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হন তিনি।

এরপরেই মাত্র ১০ লক্ষ টাকায় সাইকাকে প্রথম ডব্লিউপিএলের জন্য দলে নেয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মহিলা দল। তারপর থেকে সাইকার কেরিয়ারগ্রাফ কেবল উপরের দিকেই গিয়েছে। দুরন্ত পারফর্ম করে দলকে খেতাব জিততে সাহায্য করেন তিনি। এবার তিনি ডাক পেলেন জাতীয় দলেও।

সাইকার কোচ শিবসাগর এবিপি লাইভ বাংলাকে জানান জাতীয় দলে তাঁর ছাত্রী ডাক পেয়েছেন সেই বিষয়ে তিনি প্রথমে জানতেনই না। সাইকাই তাঁকে ফোন করে খবরটি জানান। শিবসাগর বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে অবগত ছিলাম না। সাইকাই আমায় ফোন করে জানায় যে ও জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে। সত্যি বলতে আমি কিন্তু একটুও অবাক হইনি। ও যা পারফর্ম করেছে। তাতে দলে সুযোগ পাওয়াটাই স্বাভাবিক। ওর স্বপ্নপূরণ হল জাতীয় দলে ডাক পেয়ে ফোনে খানিকটা আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিল ও। ‘

ডব্লুপিএলে তাঁর সাফল্যই কিন্তু সাইকাকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। শিবসাগরের মতে বড় বড় ব্যাটারদের বিরুদ্ধে সাফল্যের সাইকার সামনে এখন চ্যালেঞ্জ যতই কঠিন আসুক না কেন, তিনি ঘাবড়ে যান না। শিবসাগর বলেন, ‘ডব্লিউপিএলে সাফল্যটা ওর কেরিয়ার বদলে দিয়েছে। বিশ্ববন্দিত ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে ভাল পারফর্ম করেছে ও। এর ফলে ওর আত্মবিশ্বাসটাও কিন্তু অনেকটাই বেড়েছে। ডব্লিউপিএলে তো আন্তর্জাতিক মানের ব্যাটারদের বিরুদ্ধে বল করেছে। ওদের আউট করেছে। তাই এখন ও জানে যে প্রতিপক্ষ যেমনই হোক না কেন. চ্যালেঞ্জ যতই কঠিন হোক, ও তাদের বিরুদ্ধে পারফর্ম করতে পারবে। চাপের মুখেও ওর এই আত্মবিশ্বসাটাই কিন্তু ওকে বাকিদের থেকে ভিন্ন করে।’

সাইকার লড়াইটা কিন্তু শুধু ক্রিকেটে সীমাবদ্ধ নয়। বাস্তব জীবনেও তাঁকে কড়া লড়াইয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে। পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা বাবা নেই। মেয়েটা নিজের জেদ এবং প্রতিভায় ভর করে আজ জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন বলে আবেগঘন গলায় জানান তাঁর কোচ। তাঁর এই জেদটাই তাঁকে বাকিদের থেকে পৃথক করে। অবশ্য জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা কিন্তু সফরের শেষ নয়, একটা ধাপ মাত্র। সাইকার কোচ অন্তত এমনটাই। সামনে আরও চ্যালেঞ্জ আসবে।  

বর্তমানে সাইকার লক্ষ্য ঠিক কী হবে? শিবসাগর বলছেন, ‘ও তো এতদিন পারফর্ম করে এসেছে। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের ফলেই জাতীয় দলে ডাকও পেয়েছে। এবার ওর সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জটা হল ওর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। আন্তর্জাতিক স্তরে ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ আসবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী লাইন এবং লেংথে বদল করতে হবে। পিচের সঙ্গে মানিয়ে নিতে। তবে আমার আস্থা পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, ও ঠিক মানিয়ে নেবে। নিজের সেরাটা দিতে পারবে।’

সাইকা তো বটেই আসন্ন ঘরোয়া মরশুমটি ভারতীয় মহিলা দলের জন্যও কিন্তু বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ২০১৪ সালের পর এই প্রথম ভারতীয় মহিলা দলের ঘরোয়া ক্রিকেট মরশুমে লাল বলের ম্যাচ আয়োজিত হতে চলেছে। বিগত নয় বছরে ওমেন ইন ব্লু মাত্র দুইটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। আসন্ন দুই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই ২০২১ সালে একটি করে টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন মান্ধানারা। দুই ম্যাচই ড্রয়ে শেষ হয়েছিল। ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাই ঘরের মাঠেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখার আশা করতেই পারেন ভারতীয় সমর্থকরা।   

টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি, উভয় ফর্ম্যাটেই ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দেবেন হরমনপ্রীত কৌর। তাঁর ডেপুটি হিসাবে নির্বাচত হয়েছেন স্মৃতি মান্ধানা। ৬ ডিসেম্বর, ৯ ডিসেম্বর এবং ১০ ডিসেম্বর মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনটি বিশ ওভারের ম্যাচ খেলবে ভারত। এরপর ১৪ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর নভি মুম্বইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে আয়োজিত হবে টেস্ট ম্যাচ। দিন তিনেক বিরতির পর, ২১ ডিসেম্বর সেই ওয়াংখেড়েতেই ফিরে আরও একটি টেস্ট খেলবেন হরমনপ্রীতরা।

আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।

https://whatsapp.com/channel/0029VaCBCh6545uwkeNBg11y

আরও পড়ুন: মাথায় হাত বুলিয়ে স্নেহের পর নিজের হাতেই খাওয়ালেন ঘোড়াদের, ভাইরাল হল ধোনির ভিডিও