Mukesh Kumar Exclusive: Bengal Pacer Selected In Indian Team In All 3 Formats For South Africa Tour, Shares His Dream Journey With ABP Live Abpp

সন্দীপ সরকার, কলকাতা: বছর খানেকের মধ্যে তাঁর জীবন আমূল বদলে গিয়েছে।

কলকাতায় এসেছিলেন চাকরির খোঁজে। এখন তাঁকে সামলাতে হচ্ছে অটোগ্রাফ, সেলফির বায়না। ব্যস্ততা এমনই যে, বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমাও মুলতুবি রাখতে হয়েছে। পাড়ি দিতে হয়েছে হীরের দেশে। দক্ষিণ আফ্রিকায় (IND vs SA)।

মুকেশ কুমার (Mukesh Kumar)। বাংলা থেকে উঠে আসা ভারতীয় ক্রিকেট দলের নতুন পেস-অস্ত্র। আর অশ্বিন (R Ashwin) যাঁকে ‘জুনিয়র শামি’ বলে চিহ্নিত করে ফেলেছেন। মনে করিয়ে দেওয়া যাক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অশ্বিনের ঝুলিতে রয়েছে ৭১৭ উইকেট! তাঁর কথা যে ফেলনা নয়, ভালই জানেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

সোনালি অধ্যায়ের শুরুটা হয়েছিল গত বছরের অগাস্টে। ভারতীয় এ দলে সুযোগ পেয়েছিলেন ডানহাতি পেসার। তারপর ডিসেম্বরে ফের চমক। রেকর্ড অর্থে তাঁকে কিনেছিল দিল্লি ক্যাপিটালস (Delhi Capitals)। যে দলে এক সময় নেট বোলার ছিলেন মুকেশ। গত আইপিএলে সাড়ে ৫ কোটি টাকায় তাঁকে কেনে দিল্লি। বাংলার কোনও ক্রিকেটার আইপিএলে এত দাম পাননি। এমনকী, কিংবদন্তি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) আইপিএলে সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন। মুকেশের দর উঠেছিল তাঁর চেয়েও ১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা বেশি! আগামী আইপিএলের জন্যও মুকেশকে ধরে রেখেছে দিল্লি ক্যাপিটালস। যে দলের মাথায় ক্রিকেট বিশ্বের দুই ক্ষুরধারতম মস্তিষ্ক। সৌরভ ও রিকি পন্টিং (Ricky Ponting)।

তবে মুকেশের কেরিয়ারে মাহেন্দ্রক্ষণ হাজির হয় চলতি বছরের জুলাইয়ে। টিম ইন্ডিয়ার (Team India) জার্সিতে অভিষেক। পোর্ট অফ স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচে খেলেন মুকেশ। তারপর ভারতের (Indian Cricket Team) ওয়ান ডে ও টি-টোয়েন্টি দলের হয়েও আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রবেশ। মুকেশের প্রতিভায় আশার আলো দেখছেন ক্রিকেট পণ্ডিতরাও। অনেকেই মনে করেন, নিজেকে ধরে রাখতে পারলে জাতীয় দলে নিয়মিত হয়ে উঠবেন ডানহাতি পেসার।

এই ক’মাসে কতটা বদলেছে জীবন? দক্ষিণ আফ্রিকা উড়ে যাওয়ার আগে এবিপি লাইভকে মুকেশ বলছিলেন, ‘সত্যিই ভাবলে অবাক লাগে। ক্রিকেটকে পেশা করব স্বপ্ন দেখতাম। তবে সেই স্বপ্নপূরণ যে সম্ভব হবে, ভাবিনি। একটা সময় কাজের খোঁজে কলকাতায় এনেছিলেন বাবা। এখন ক্রিকেট মাঠে পরিচিতি পেয়েছি। জাতীয় দলে ডাক পেয়েছি। তবে সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। নিজের দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

জাতীয় দলের হয়ে দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর মুকেশ। তাই মধুচন্দ্রিমা মুলতুবি রেখে দক্ষিণ আফ্রিকা উড়ে যেতে বিন্দুমাত্র ভাবেননি। দক্ষিণ আফ্রিকায় টি-টোয়েন্টি, ওয়ান ডে ও টেস্ট সিরিজ খেলবে ভারত। তিন দলেই রয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলার হয়ে খেলা পেসার। এই প্রথমবার কোনও সফরে তিন ফর্ম্যাটের দলে। লেডি লাক?

হাসতে হাসতে মুকেশ বলছিলেন, ‘দিব্যার (স্ত্রী দিব্যা সিংহ) সঙ্গে জীবনের নতুন ইনিংস শুরু করেছি। তারপরই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য ভারতের তিন ফর্ম্যাটের দলে ডাক পেয়েছি। ও ভীষণ খুশি।’ তবে আবেগে গা ভাসাতে নারাজ মুকেশ। বলছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় ভাল খেলাটা চ্যালেঞ্জিং। আমার দক্ষতায় সকলে আস্থা রেখেছেন। এবার সেই আস্থার মর্যাদারক্ষা করা আমার কর্তব্য।’

দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সদ্যসমাপ্ত টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলার ফাঁকেই বিয়ে সেরেছেন মুকেশ। যে কারণে একটি ম্যাচ খেলতে পারেননি। যদিও কিছুটা আফশোস রয়েছে মুকেশের। বলছিলেন, ‘কে আর জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচ খেলার সুযোগ হারাতে চায়! আসলে বিয়ের দিনক্ষণ অনেক আগেই ঠিক হয়েছিল। মায়ের কথা তাই ফেলতে পারিনি। আমি সৌভাগ্যবান যে, জাতীয় দল থেকে খুশি মনেই আমাকে ছুটি দেওয়া হয়েছিল।’

বিহারের গোপালগঞ্জে পৈতৃক বাড়ি। সেখান থেকে রুজিরুটির টানে কাশীনাথ সিংহ এসেছিলেন কলকাতায়। তিলোত্তমায় এসে ট্যাক্সি চালাতেন। তালতলায় এক চিলতে ঘরে সংসার পাতেন বাপ-বেটা। কাশীনাথ ভেবেছিলেন, ছেলেকে কলকাতায় এনে কাজে লাগিয়ে দেবেন। সংসারে যে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা। কিন্তু ছেলে শুনলে তো! তাঁর যে ধ্যান জ্ঞান ক্রিকেট।

শিবপুর ক্লাবের হয়ে তখন খেলছেন ডানহাতি মিডিয়াম পেসার। এদিকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ভবিষ্যতের ক্রিকেটার তুলে আনতে ‘ভিশন ২০২০’ শিবির চালু করছে সিএবি। মুকেশ বলছিলেন, ‘ক্লাব কর্তা রবি মিত্র ও কোচ বীরেন্দ্র সিংহ আমার নাম ভিশন ২০২০-র শিবিরে পাঠান। সেখানে প্রথমে ওয়াকার ইউনিস ও পরে টি এ শেখরের তত্ত্বাবধানে প্র্যাক্টিস করি। বোলিংয়ের অনেক খুঁটিনাটি দিক শিখি দুজনের কাছেই। তারপর বাংলা দলে সুযোগ পাই।’

একটা সময় বোলিং শ্যু কেনার অর্থ ছিল না। বাংলার সেই সময়কার বোলিং কোচ রণদেব বসু পাশে দাঁড়ান। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন মনোজ তিওয়ারিও (Manoj Tiwari)। স্বয়ং সৌরভ মুকেশের প্রতিভা দেখে প্রভাবিত হয়েছিলেন। স্থানীয় ক্রিকেটে বড়িশা স্পোর্টিংয়ে সই করানো হয়েছিল মুকেশকে। যে দল সৌরভের ক্লাব বলেই পরিচিত ময়দানে।

বাংলা দলে সুযোগ পেয়েই ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করতে শুরু করেন মুকেশ। গত তিন মরশুমে বাংলাকে দুবার রঞ্জি ফাইনালে তোলার নেপথ্যে অন্যতম কারিগর। আকাশ দীপ, ঈশান পোড়েলের সঙ্গে মুকেশের পেস ত্রয়ীকে ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সেরা মনে করা হয়। ৪০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ১৫১ উইকেট রয়েছে মুকেশের ঝুলিতে। জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ছিলেন বেশ কয়েক বছর ধরেই। বাংলাদেশ এ দলের বিরুদ্ধে টেস্টে ভারত এ দলের হয়ে দুরন্ত বোলিং করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত অপেক্ষার অবসান হয় চলতি বছরের জুনে। জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলী জানিয়ে দেয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের টেস্ট ও ওয়ান ডে – দুই দলেই রয়েছেন মুকেশ।

আইপিএলে তাঁকে রেকর্ড অর্থে কিনেছিল দিল্লি ক্যাপিটালস। তবে গত আইপিএলে বল হাতে খুব একটা ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেননি। দিল্লিও প্লে অফের আগেই ছিটকে গিয়েছিল। আইপিএলের পরই অবশ্য নিজেকে নতুন করে ঘষামাজা করেছেন। দীর্ঘদিন বেঙ্গালুরুতে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে প্রস্তুতি শিবিরে ছিলেন। সেখানে যশপ্রীত বুমরার সঙ্গেও প্র্যাক্টিস করার সুযোগ পান। মুকেশ বলছিলেন, ‘বুমরা ভাইয়ের কাছে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। বিশেষ করে একই অ্যাকশনে কীভাবে ইনস্যুইং ও আউটস্যুইং করাব, বলেছে বুমরা ভাই। শিখিয়েছে ইয়র্কার কীভাবে আরও নিখুঁত করা যায়। আর কে না জানে যে, বুমরার ইয়র্কার বিশ্বের সেরা।’

আইপিএলে (IPL) রেকর্ড দাম। জাতীয় দলে সুযোগ। বিয়ে। ছেলের সাফল্য অবশ্য দেখা হয়নি কাশীনাথের। মুকেশের বাবা গত বছর ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন। আনন্দের মুহূর্তেও তাই বাবার জন্য মন খারাপ ৩০ বছর বয়সী পেসারের। বাবার প্রসঙ্গ উঠতেই ধরা গলায় মুকেশ বলছিলেন, ‘বাবা আজীবন কষ্ট করেছেন। নিজের চোখে দেখেছি কীভাবে দিনভর ট্যাক্সি চালিয়ে রাতে হাসিমুখে রান্না করেছেন। যাতে আমার ক্রিকেট সাধনায় বাধা না আসে। আজকের দিনটা দেখে যেতে পারলেন না। বাবা বেঁচে থাকলে ভীষণ খুশি হতেন।’                                   

আরও পড়ুন: ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ শুরুর আগেই বিরাট ধাক্কা দক্ষিণ আফ্রিকার, ছিটকে গেলেন তারকা পেসার

আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।